Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

অ্যালকোহলযুক্ত পারফিউম/বডি স্প্রে ব্যবহার করলে নামাজ সহিহ হবে?

Icon

ইসলাম ও জীবন ডেস্ক

প্রকাশ: ২০ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৩৪ পিএম

অ্যালকোহলযুক্ত পারফিউম/বডি স্প্রে ব্যবহার করলে নামাজ সহিহ হবে?

অ্যালকোহলযুক্ত পারফিউম/বডি স্প্রে ব্যবহার করে নামাজ কি সহিহ হবে- জানুন। ছবি: সংগৃহীত

প্রশ্ন: বর্তমান বাজারগুলোতে যেসব পারফিউম বা বডি স্প্রে পাওয়া যায় এগুলো ব্যবহার করা ঠিক হবে কি? এবং এগুলো ব্যবহার করে নামাজ পড়লে নামাজ সহিহ হবে কি না?

উত্তর: বর্তমান অধিকাংশ পারফিউম ও স্প্রেতে অ্যালকোহল থাকে। তাবে অ্যালকোহলমুক্ত পারফিউমও পাওয়া যায়। তাই পারফিউম বা স্প্রে ব্যবহার করতে চাইলে অ্যালকোহলমুক্তগুলোই খরিদ করবেন। 

অ্যালকোহলযুক্ত স্প্রে ব্যবহার করা অনুত্তম। নাজায়েয বা নাপাক নয়। তাই কাপড় বা শরীরে স্প্রে লাগিয়ে নামাজ পড়লে নামাজ সহিহ হয়ে যাবে।

বর্তমানে সুগন্ধিযুক্ত বস্তু যেমন—সেন্ট, বডি স্প্রে ইত্যাদি অ্যালকোহল ছাড়া প্রস্তুত করা দুষ্কর। আর এ বিষয়ে ইসলামের বিধান হলো, যেসব অ্যালকোহল আঙুর, খেজুর অথবা কিশমিশ থেকে তৈরি, সেসব অ্যালকোহল সম্পূর্ণ হারাম। 

এ ধরনের অ্যালকোহল মেশানো সুগন্ধি ব্যবহার করা যাবে না। কেননা মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘নেশা সৃষ্টিকারী প্রতিটি বস্তুই হারাম। ’ (বুখারি, হাদিস নং : ৪৩৪৩)

এই তিন বস্তু ছাড়া অন্য উপাদান থেকে যেসব অ্যালকোহল তৈরি করা হয়, যেমন—এখনকার সেন্ট বা বডি স্প্রেগুলোতে সাধারণত আঙুর, খেজুর বা কিশমিশ থেকে প্রস্তুতকৃত অ্যালকোহল থাকে না; বরং বিভিন্ন শস্যদানা, গাছপালার ছাল, মধু, শস্য, যব, আনারসের রস, গন্ধক ও সালফেট, অন্যান্য রাসায়নিক উপাদান ইত্যাদি থেকে প্রস্তুতকৃত অ্যালকোহল মেশানো হয়। 

(এনসাইক্লোপিডিয়া অব ব্রিটানিকা : খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৫৪৪, প্রকাশকাল ১৯৫০ খ্রি.) তাই এগুলো নাপাক নয়। আর এগুলো নেশার উদ্রেক না হওয়া পরিমাণ ব্যবহার করা যায়। (তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম : ১/৩৪৮, ৩/৩৩৭; ফিকহুল বুয়ু : ১/২৯৮)

সুতরাং যেহেতু সেন্ট বা বডি স্প্রেগুলোতে সামান্য পরিমাণ পরিশোধিত অ্যালকোহল ব্যবহার করা হয় এবং তা শরীরের অভ্যন্তরে কোনো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না, তাই এগুলো ব্যবহারে আপত্তি নেই। তবে এরূপ সেন্ট পরিত্যাগ করাই উত্তম। (জাদিদ ফিকহি মাসাইল : ১/৩৮)

তবে যদি জানা যায় যে, এসব আঙ্গুর বা খেজুর থেকে বানানো হয়, তাহলে তা ব্যবহার করা জায়েজ নয়।

সূত্র: মাবসূতে সারাখসী ২৪/৯; ফাতাওয়া খানিয়া ৩/২৩০; তাকমিলাতু ফাতহুল মুলহিম ১/৫৫১, ৩/৬০০; মাজমুআতুল ফাতাওয়া শারইয়্যাহ ১/১৮৪, ৪/৪৫

অ্যালকোহলযুক্ত পারফিউম ও নামাজের বিধান সংক্রান্ত FAQ প্রশ্ন:

১. পারফিউমে অ্যালকোহল আছে কিনা, তা কীভাবে বুঝব?

পারফিউমে অ্যালকোহল আছে কিনা, তা জানার সহজতম উপায় হলো লেবেল পরীক্ষা করা। বোতল বা প্যাকেজিং-এর উপাদানের তালিকায় (Ingredients List) সাধারণত নিম্নলিখিত নামগুলোর মধ্যে যেকোনো একটি উল্লেখ থাকে:

  • Alcohol Denat (ডেনাট অ্যালকোহল)
  • Ethanol (ইথানল)
  • SD Alcohol
  • Ethyl Alcohol

সাধারণত, সুগন্ধিযুক্ত স্প্রে বা পারফিউম দীর্ঘস্থায়ী ও দ্রুত শুকানোর জন্য ৯০-৯৫% পর্যন্ত ইথানল ব্যবহার করে। তাই লেবেলে এসব নাম থাকলে ধরে নিতে হবে সেটি অ্যালকোহলযুক্ত।

২. অ্যালকোহলমুক্ত হালাল পারফিউম চেনার উপায় কী?

অ্যালকোহলমুক্ত বা হালাল পারফিউম চেনার জন্য নিম্নোক্ত বিষয়গুলো দেখুন:

  • উপাদান তালিকা: লেবেলে নিশ্চিত করুন যে 'Alcohol' বা 'Ethanol' জাতীয় কোনো উপাদান নেই।
  • পারফিউমের ধরন: সাধারণত আতর (Attar) বা পারফিউম অয়েল (Perfume Oil)-গুলো অ্যালকোহলমুক্ত হয়ে থাকে। এগুলোতে কেবল সুগন্ধি তেল (Fragrance Oils) এবং ভ্যানিশিং তেল (Carrier Oils) ব্যবহার করা হয়।
  • হালাল সার্টিফিকেশন: অনেক আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড এখন তাদের অ্যালকোহলমুক্ত পণ্যের জন্য 'হালাল সার্টিফিকেশন' লোগো ব্যবহার করে। এই ধরনের লোগো দেখেও আপনি নিশ্চিত হতে পারেন।

৩. নামাজের সময় সেন্ট ব্যবহারের শরয়ী বিধান কী?

নামাজের সময় সেন্ট ব্যবহারের শরয়ী বিধানটি অ্যালকোহলের উৎসের ওপর নির্ভর করে:

  • আঙুর/খেজুর/কিশমিশের অ্যালকোহল: যদি পারফিউমের অ্যালকোহল আঙুর, খেজুর বা কিশমিশ থেকে তৈরি হয়, তবে তা সম্পূর্ণ হারাম ও নাপাক। এ ধরনের পারফিউম শরীরে বা পোশাকে লাগিয়ে নামাজ আদায় করলে নামাজ সহিহ হবে না।
  • রাসায়নিক/শস্যের অ্যালকোহল: বর্তমান সময়ের অধিকাংশ পারফিউম বা বডি স্প্রে-তে যে অ্যালকোহল ব্যবহৃত হয়, তা সাধারণত শস্যদানা, গাছপালা বা রাসায়নিক উপাদান থেকে তৈরি। এ ধরনের অ্যালকোহল ফিকহের (ইসলামি আইন) দৃষ্টিতে নাপাক নয়।
  • চূড়ান্ত বিধান: যেহেতু রাসায়নিক অ্যালকোহল নেশার উদ্রেক করে না এবং এটি হারাম উৎস থেকে তৈরি নয়, তাই এই স্প্রে বা সেন্ট ব্যবহার করে নামাজ পড়লে নামাজ সহিহ হয়ে যাবে। তবে এরূপ সেন্ট ব্যবহার করা অনুত্তম। সম্পূর্ণ অ্যালকোহলমুক্ত আতর ব্যবহার করাই সর্বোত্তম।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম