মুসলিম-অমুসলিমের হাঁচির উত্তর কি একই হবে?
ইসলাম ও জীবন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:২৩ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
মানুষের জীবনের প্রতিটি সাধারণ কাজেও ইসলাম শিষ্টাচার ও আদবের শিক্ষা দিয়েছে। এমনকি হাঁচি দেওয়াও। যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি প্রাকৃতিক ব্যাপার— তাও ইসলামি শিক্ষার আলোচনার বাইরে নয়। হাঁচি একদিকে যেমন শরীরের জন্য আরাম ও প্রশান্তি আনে, তেমনি এটি আল্লাহ তাআলার এক বিশেষ নিয়ামতও বটে। তাই ইসলাম আমাদের শিখিয়েছে, হাঁচি দিলে আল্লাহর প্রশংসা করতে হবে—‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলতে হবে, এবং পাশে থাকা মুসলমান ভাই তার জবাবে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো—অমুসলিম কেউ হাঁচি দিলে বা ‘আলহামদুলিল্লাহ’ না বললে, তার জবাবে মুসলমান কী বলবে?
রাসুলুল্লাহ (সা.) এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন। তার জীবন থেকে আমরা শিখতে পারি, কীভাবে মুসলমান ও অমুসলমান উভয়ের সঙ্গে হাঁচির এই ছোট্ট ঘটনাতেও ইসলামি আদব ও দয়া প্রদর্শন করা উচিত।
১. হাঁচি দেওয়াকে আল্লাহ পছন্দ করেন
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْعُطَاسَ، وَيَكْرَهُ التَّثَاؤُبَ، فَإِذَا عَطَسَ أَحَدُكُمْ وَحَمِدَ اللَّهَ، كَانَ حَقًّا عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ سَمِعَهُ أَنْ يَقُولَ لَهُ: يَرْحَمُكَ اللَّهُ، وَأَمَّا التَّثَاؤُبُ فَإِنَّمَا هُوَ مِنَ الشَّيْطَانِ، فَلْيَرُدَّهُ مَا اسْتَطَاعَ، فَإِذَا قَالَ: هَاهْ، ضَحِكَ مِنْهُ الشَّيْطَانُ
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ হাঁচি পছন্দ করেন এবং হাই তোলা অপছন্দ করেন। সুতরাং তোমাদের কেউ হাঁচি দিয়ে আল্লাহর প্রশংসা করলে, তখন তার কথা শুনে যে কোনো মুসলিমের জন্য কর্তব্য হলো—সে যেন বলে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’। আর হাই তোলা শয়তানের পক্ষ থেকে, তাই মানুষ যেন তা যতটা সম্ভব প্রতিহত করে। যখন কেউ ‘হা’ করে মুখ ফাঁক করে হাই তোলে, তখন শয়তান তার ওপর হাসে।’ (বুখারি ৬২২৩, মুসলিম ২৯৯৪)
এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, ইসলাম এমনকি মানুষের প্রাকৃতিক আচরণেও (যেমন হাঁচি বা হাই) শালীনতা, কৃতজ্ঞতা ও শয়তানের প্রভাব থেকে দূরে থাকার শিক্ষা দিয়েছে।
২. মুসলিমের হাঁচি ও উত্তর
হজরত আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তোমাদের কোনো ব্যক্তি হাঁচি দিলে যেন বলে-
الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ
উচ্চারণ: ‘আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন।’
অর্থ: ‘সব প্রশংসা বিশ্বজাহানের প্রভু আল্লাহর জন্য।’
আর জবাবদাতা (যে শুনবে সে) বলবে-
يَرْحَمُكَ اللَّهُ
উচ্চারণ: ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ।’
অর্থ: আল্লাহ আপনার উপর রহম করুন।
(হাঁচিদাতা উত্তর শুনে) প্রত্যুত্তরে প্রথম ব্যক্তি যেন বলে-
يَغْفِرُ اللَّهُ لِي وَلَكُمْ
উচ্চারণ: ‘ইয়াগফিরুল্লাহু লি ওয়ালাকুম’।
অর্থ: আল্লাহ আমাকে ও তোমাদের ক্ষমা করুন।’ (তিরমিজি ২৭৪১, আবু দাউদ ৫০৩৩)
এই হাদিস থেকে জানা যায়, ইসলাম শুধু ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলার শিক্ষা দেয়নি; বরং পারস্পরিক দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনার সুন্দর সম্পর্কও তৈরি করেছে — যা মুসলিম সমাজে ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করে।
৩. অমুসলিমের হাঁচির উত্তর
কিন্তু কোনো অমুসলিম যদি হাঁচি দেয় তবে করণীয় কী? হাদিসে নবীজি (সা.) অমুসলিমদের হাঁচির জবাবে কী বলতে হবে তা সুস্পষ্ট করে তুলে ধরেছেন-
হযরত আবু মুসা (রা.) বলেন-
كَانَ الْيَهُودُ يَتَعَاطَسُونَ عِنْدَ النَّبِيِّ ﷺ يَرْجُونَ أَنْ يَقُولَ لَهُمْ: يَرْحَمُكُمُ اللَّهُ فَكَانَ يَقُولُ: يَهْدِيكُمُ اللَّهُ وَيُصْلِحُ بَالَكُمْ.
‘ইহুদিরা নবীজি (সা.)-এর সামনে হাঁচি দিত, এই আশায় যে তিনি তাদের জবাবে- يَرْحَمُكُمُ اللَّهُ ‘ইয়ারহামুকুমুল্লাহ’ (আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়া করুন) বলবেন।
কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সা.) বলতেন- يَهْدِيكُمُ اللَّهُ، وَيُصْلِحُ بَالَكُمْ ‘ইয়াহদিকুমুল্লাহু ওয়া ইউসলিহু বালাকুম’— অর্থাৎ, আল্লাহ তোমাদের হিদায়াত দিন এবং তোমাদের অবস্থার সংশোধন করুন।’ (আবু দাউদ৫০৩৮, তিরমিজি ২৭৩৯)
এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, নবীজি (সা.) অমুসলিমদের প্রতি ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ (আল্লাহ রহম করুন) বলতেন না, বরং তাদের জন্য সাধারণ কল্যাণ ও হিদায়াতের দোয়া করতেন। এটি ইসলামি শিষ্টাচারের এক সুন্দর উদাহরণ—যেখানে দয়া, সৌজন্য ও প্রজ্ঞা মিলেমিশে আছে। যদি এ দোয়া কবুল হয় তবে সে পাবে সত্যের সন্ধান। হয়ে যাবে নিষ্পাপ মুসলমান।
৪. বেশি বেশি হাঁচি দেওয়া
যদি কেউ বেশি বেশি বা একাধারে হাঁচির পর হাঁচি দেয় তবে তা হাঁচি হিসেবে গণ্য হবে না। এটি অসুস্থতা। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন-
شَمِّتِ الْعَاطِسَ ثَلَاثًا، فَمَا زَادَ فَهُوَ مَزْكُومٌ
‘হাঁচিদাতাকে (যে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে) তিনবার পর্যন্ত জবাব দাও (‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলো); এরপর (যদি সে বারবার হাঁচি দিতে থাকে) তবে তা সর্দি (অর্থাৎ রোগের কারণে), আর তার জন্য আর জবাব দেওয়ার প্রয়োজন নেই।’ (আবু দাউদ ৫০৩৬, তিরমিজি ২৭৪০)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, হাঁচির উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে হাদিসের অনুসরণ ও অনুকরণ করা। কেননা মুসলিম হাঁচি দিয়েই আল্লাহ প্রশংসা করে। তাই হাঁচিদাতার জন্য দোয়া করার কথা বলেছেন বিশ্বনবি। আর অমুসলিম হাঁচি দিলে তো মহান আল্লাহর প্রশংসা করে না। তাই অমুসলিম হাঁচি দিলে তার হেদায়েত ও অবস্থার পরিবর্তনের দোয়া করেছেন স্বয়ং বিশ্বনবি।
