বাউল আবুল সরকারের ধৃষ্টতা অমার্জনীয় অপরাধ
প্রকাশ: ২৫ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৫১ পিএম
বাউল আবুল সরকার। ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ভন্ড বাউল শিল্পী আবুল সরকারের আল্লাহর শানে ধৃষ্টতামূলক মন্তব্য তৌহিদী জনতার অন্তরে আঘাত দিয়েছে। মহান আল্লাহ কুরআনুল কারিমের অনেক আয়াতে তার পরিচয় দিয়েছেন— তিনি আল্লাহ। তার কোনো শরিক নেই। পৃথিবীর কোনো সৃষ্টি তার মতো নয়, তিনিও কারো মতো নন— ‘লাইছা কা মিছলিহি শাইয়ুন’ আল্লাহ সঙ্গে তুলনা করার মতো কিছু নেই।
বাউলরা যারা আমাদের দেশে আছেন, তারা আধ্যাত্মিকতার নামে বিভিন্ন গজল গায়, গান গায় এবং ঢোল তবলা বাজায় এটা একটা বাংলাদেশি সংস্কৃতি। কুরআন হাদিসের কোথাও বাউল শব্দ নেই। যারা বাউল তারা আলাদা একটা শ্রেণি। যেমন- লালন ফকির। যারা লালনগীতি গায়, তারা লালনের আদর্শের অনুসারী। আর এটা মুসলিম কোনো আদর্শ নয় বা ইসলামি কোনো আদর্শ নয়। তেমনি যারা বাউল তারা ইসলামি কোনো আদর্শ লালন করে না। তবে যেহেতু তারা দেহ তত্ত্ব, তাদের মতে সুফি তত্ত্ব, তাদের মতে তারা আধ্যাত্মিকতা নিয়ে গান করে, চর্চা করে, তারা একটা আলাদা লাইফ বা জীবন গঠন করে।
আমরা যেগুলো ছোটকাল থেকে দেখে আসছি— তাদের লাইফস্টাইলে গঠনে চুল বড় থাকে, সাদা কাপড় পড়ে আবার কেউ লাল সালু পড়ে। চুলে জটা বানায় এবং বিভিন্ন মাজারে গিয়ে উরসের নামে বাউলের আসর বসায়। আর তারা শীতকালে পালা গানের আসর বসায়। সেখানে কেউ নারী পক্ষ নেয় আবার কেউ পুরুষ পক্ষ নেয়। কেউ হজরত আদম (আ.)-এর পক্ষ নেয় আবার কেউ হজরত হাওয়া (আ.)-এর পক্ষ নেয়। কবিতা বানিয়ে বানিয়ে বলে। আর এসব ঘটনা এমনভাবে তারা উপস্থাপন করে, এমন আজগুবি গল্প/কিচ্ছা বানায়— যারা ঢোল তবলার তালে তালে এসব গল্প শুনে তারা খুব মজা পায়। এক পর্যায়ে রাত চলে যায় কিন্তু শ্রোতারা আর বাউলদের আসর থেকে সরতে পারে না। তারা কবিতা আকারে মজার মজার কথা বলে, আর বলতে গিয়ে তারা— আল্লাহ সম্পর্কে, বান্দাহ সম্পর্কে, জান্নাত সম্পর্কে, জাহান্নাম সম্পর্কে, আল্লাহ পাকের কিছু বাণী সম্পর্কে এতো আপত্তিকর কিছু কথা বলে যে, তাদের ইমান তো থাকেই না বরং উলটো তাদের শাস্তি দিতে হয়। তাদের উলটাপালটা কথার কারণে শাস্তি দেওয়া আবশ্যক হয়ে পড়ে।
এভাবে বাউল আবুল সরকার আল্লাহর শানে যে কথাগুলো বলেছে যে— ‘সে আল্লাহর কথার আগা-মাথা পায় না।’ আর এমন আপত্তিমূলক শব্দ ব্যবহার করেছে যা কোনো সভ্য মানুষের পক্ষে এমন শব্দ উচ্চারণ করাও সম্ভব নয়। এরপর সে আল্লাহর কিছু বাণীর বর্ণনা নিজের মতো করে বলেছে, একটাও ঠিক বলেনি বরং সব উলটাপালটা
বাউল শ্রেণি যারা আছে তারা শরিয়তকে শত্রু মনে করে। তাদের দৃষ্টিতে তারা মারেফতকে লালন করে। তাদের মারেফতের দৃষ্টান্ত দেখুন— বাউল শিল্পী রশিদ বয়াতি একবার একটা গান লিখেছে এরকম— ‘ঢোল বাঁশি বাজাইও মরণকালে দরবারি ভাইও, ঢোল বাঁশি বাজাইও মরণকালে, কালেমা কুরানও ভাইও আমার কোনো কিছু দরকার নাইও, আমার গাউছে পাকের নাম আমার লাশের মধ্যে কপালের মধ্যে কাপনের মধ্যে লিখে দিও’ এটুকুই আমার জন্য যথেষ্ট। তার এ গান অনলাইনে ইউটিউবে মিলিয়ন মিলিয়ন ভিউ হয়েছে। এ ধরনের গানগুলো বেশির ভাগই কুফরি। এসব গান ইসলামের আলোকে শরিয়তের মানদণ্ডে টিকে না।
বাউল আবুল সরকার যে অপরাধ করেছে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু প্রশ্ন হলো শাস্তি তাকে কে দেবে? এদের শাস্তির আওতায় আনা সরকারের দায়িত্ব। তৌহিদী জনতার আন্দোলনের মুখে বাউলরা পুকুরে ঝাঁপ দিয়েছে। আমাদের দেশের একশ্রেণির বুদ্ধিজীবী বিশেষ করে ফরহাদ মজহার বাউল আবুল সরকারের পক্ষ নিয়েছেন। অথচ বাউল আবুল সরকার মহান আল্লাহকে গালাগাল করল, এত মারাত্মক খারাপ ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করল এসব ব্যাপারে তাদের কোনো কথা নেই। তৌহিদী জনতার ব্যানারে যারা আন্দোলন করেছে তাদের ব্যাপারে তারা মাঠে নেমেছে।
এখন প্রয়োজন বাউল আবুল সরকারের এসব অশালীন মন্তব্য ও আল্লাহর শানের খেলাপের কারণে তাকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে সরকারকে বাধ্য করা। অপ্রিয় হলেও সত্য কথা এটা এ দেশে সম্ভব হচ্ছে না। কারণ এ সরকার ইসলামি সরকার না। আবার বাউলদের এসব সুন্দর সুন্দর ঢোল তবলা মাখা কবিতা, গল্প-কিচ্ছা সরকারের অনেকের কাছে মধুর মতো লাগে। তাহলে তারা কী করে এসবের বিচার করবে?
তবে হ্যাঁ এ কথা বলতে দ্বিধা নেই যে, বাউল শ্রেণিদের মধ্যে যারা জ্ঞানী— তারা অনেক দামি দামি সঙ্গীতও রচনা করেছে। যার অনেকগুলো ভাইরাল। যেমন— ‘ছেড়ে দে নৌকা আমি যাব মদিনা। দে দে পাল তুলে দে মাঝি হেলা করিস না।’ এ গানও একজন বাউলের রচনা। তারপরে আরেকটি গান আছে— বাড়িওয়ালা নাইরে বাড়ি, নাইরে দুনিয়াতে’ তাদের এ রকম অনেক গান আছে যেগুলোর সঙ্গে শরিয়তের কোনো সংঘর্ষ নেই। কিন্তু বেশির ভাগ তারা যেসব চিন্তা চেতনা লালন করে তা শরিয়তের সঙ্গে যায় না।
প্রায় শতভাগ মুসলমানের দেশে আল্লাহকে গালি দিয়ে, কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে কেউ বিনা বিচারে পার পেয়ে যাবে এটা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। তৌহিদী জনতাকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে সরকারকে এ অবমাননার বিচার করতে বাধ্য করাই হবে ইমানের একান্ত দাবি।
পাশাপাশি বিপথগামী বাউল, ভন্ডপীর, মাজার পুজারী, ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ, সন্যাসবাদ, সন্ত্রাসবাদ ইত্যাদি সমাজ ও ইসলামবিরোধী কাজ নির্মূল করার কর্মসূচি এবং কিভাবে নির্মূল করা হবে এসব বর্ণনা সরকারের কাছে তুলে ধরা। যারা এসবকে সমর্থন করে তাদেরকেও আইনের আওতায় নিয়ে আসা জরুরি।
শেষ কথা, যারা বিপথগামী বাউলদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে, তাদের পূর্ণ সমর্থন ও তাদের সঙ্গে অংশগ্রহণ যেমন ইমানের দাবি তেমনি ইসলামের সৌন্দর্য মানুষের মাঝে ফুটিয়ে তোলাও আবশ্যক।
আল্লাহর কাছে প্রার্থনা তিনি যেন, বাউল আবুল সরকারের ঔদ্ধত্যপূর্ণ কথার কারণে আমাদরকে তার আজাব ও গজব থেকে হেফাজত করুন।

