Logo
Logo
×

ইসলাম ও জীবন

জামিয়া আরাবিয়া নুরুল ইসলামে পাগড়ি প্রদান

৩০ হাফেজে কুরআনের মাথায় সম্মানের মুকুট

Icon

সারওয়ার হোসাইন

প্রকাশ: ২৮ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

৩০ হাফেজে কুরআনের মাথায় সম্মানের মুকুট

নৈতিকতার সংকট আর মূল্যবোধের চরম অবক্ষয়ের এ সময়ও দেশে এমন কিছু আলোকিত স্থান আছে যেখান থেকে পবিত্র কুরআনের নুরে দীপ্ত হয়ে ওঠে আমাদের প্রজন্ম। সে আলোকিত কেন্দ্রগুলোর একটি হলো রাজধানীর উত্তরখানে অবস্থিত জামিয়া আরাবিয়া নুরুল ইসলাম। যমুনা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধায় নিবেদিত এ প্রতিষ্ঠানটি আরও দুবছর আগে যাত্রা শুরু করেছিল। আজ তা কুরআনের সুর ও আদর্শিক শিক্ষার এক নির্ভরযোগ্য নীড় হয়ে উঠেছে।

১৮৬৬ সালে ভারতের সাহারানপুরে ‘দারুল উলুম দেওবন্দ’ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ইলমে দ্বীন চর্চার যে আলো ভারত উপমহাদেশে নতুন মাত্রা পায়, তার রোশনাইতে আজও দীপ্ত মুসলিম দুনিয়া। শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলভী (রহ.) ও শাহ আবদুল আজিজ (রহ.)-এর নবজাগরণের যে ধারা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মুসলিম উম্মাহর মননে রোপিত হয়েছে-জামিয়া নুরুল ইসলাম সে ধারারই একটি বিশ্বস্ত ঠিকানা।

চলতি শিক্ষাবর্ষে প্রতিষ্ঠানটি অর্জন করেছে এক অনন্য সফলতা। জামিয়া আরাবিয়া নুরুল ইসলাম থেকে ৩০ জন শিক্ষার্থী হিফজ সম্পন্ন করে পেয়েছেন সম্মানের পাগড়ি। এ উপলক্ষ্যে গত ২৩ নভেম্বর মাদ্রাসা ও এতিমখানা প্রাঙ্গণে ওয়াজ-দোয়া মাহফিল ও পাগড়ি প্রদান অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের রুহের মাগফিরাত কামনায় আয়োজিত মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসাবে বয়ান পেশ করেন, পাকিস্তান থেকে আগত, আন্তর্জাতিক ইসলামিক স্কলার, রাসূল (সা.)-এর বংশধর আল্লামা সাইয়িদ ফয়সাল নাদীম শাহ। বয়ান শেষে তিনি দেশ, জাতির কল্যাণ কামনাসহ বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাত করেন।

চলতি শিক্ষাবর্ষ ২০২৪-২৫ সালে জামিয়া আরাবিয়া নুরুল ইসলাম থেকে যারা হাফেজ হয়ে সম্মানের পাগড়ি গ্রহণ করেছেন তারা হলেন-হাফেজ সালেহ আহমদ, হাফেজ মাশহুদ আহমদ, হাফেজ এহসানুল হক সুলাইমান, হাফেজ সাব্বির আহমদ, হাফেজ মো. আব্দুল্লাহ আল হুসাইন, হাফেজ তাওহীদুল ইসলাম, হাফেজ কাওসার আহমদ, হাফেজ মো. মুশফিকুর রহমান, হাফেজ সাখাওয়াত হোসাইন, হাফেজ মাহবুবুর রহমান, হাফেজ আব্দুল্লাহ আল সাইফ, হাফেজ মো. মাসুম বিল্লাহ, হাফেজ মাহমুদুল হাসান, হাফেজ কেফায়াতুল্লাহ, হাফেজ মো. মুজাহিদুল ইসলাম, হাফেজ মো. তানজিদ আহমদ, হাফেজ উবায়দুল্লাহ, হাফেজ মুস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।

সমাজের পিছিয়ে পড়া শিশু ও এতিমদের ধর্মীয় ও আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে ২০২৩ সালে রাজধানীর উত্তরখানে যাত্রা শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। যমুনা গ্রুপের সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে নুরুল ইসলাম ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এ কমপ্লেক্সে মাদ্রাসা, মসজিদ ও এতিমখানা রয়েছে। একসঙ্গে ৫০০ শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে থাকা-খাওয়াসহ ইসলামিক ও আধুনিক শিক্ষার সুবিধা সম্পন্ন প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে সারা দেশের ইসলামপ্রিয় ও দেশপ্রেমিক মানুষের কাছে ব্যাপক সুনাম কুড়িয়েছে।

নুরুল ইসলাম ফাউন্ডেশনের প্রকল্পপ্রধান মাওলানা তোফায়েল গাজালি জানান, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম ছিলেন আদর্শ দেশপ্রেমিক, ধর্মভীরু ও ন্যায়পরায়ণ মানুষ। তিনি শিল্প, কর্মসংস্থান ও সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়েছেন। আজ তার প্রতিষ্ঠানে যেসব শিশু হাফেজ ও আলেম হচ্ছে, এটাই তার জন্য দুনিয়া-আখেরাতের সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার।’

জামিয়া নুরুল ইসলামের হিফজ বিভাগে শুরু থেকে পড়েছেন পিতৃহারা সাখাওয়াত হোসাইন। সম্মানের পাগড়ি পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, ‘আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ের সঙ্গে সঙ্গে যমুনা পরিবারের কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। তাদের অকৃত্রিম ভালোবাসা, নিঃস্বার্থ সহযোগিতা ছাড়া আমি এ জায়গায় আসতে পারতাম না। সারা জীবন তাদের জন্য দোয়া করব।’

নুরুল ইসলাম ফাউন্ডেশনসংশ্লিষ্টরা জানান, শিক্ষা, শান্তি, সেবা ও সামাজিক উন্নয়নই নুরুল ইসলাম ফাউন্ডেশনের মূল লক্ষ্য। পারস্পরিক সহযোগিতা, সহমর্মিতা, ভ্রাতৃত্ববোধ ও পরোপকারের মাধ্যমে বিশ্বমানবতার কল্যাণেই এর যাত্রা। আর্তমানবতার সেবা, সমাজ সংস্কার, কর্মসংস্থান তৈরি, শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, দারিদ্র্য বিমোচন, এতিম, গরিব, বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীদের ভরণপোষণ, ছিন্নমূল ও পথবাসীদের পুনর্বাসন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা প্রদানসহ সব শ্রেণির নাগরিকের নৈতিক ও চারিত্রিক উন্নয়নের মাধ্যমে একটি সমৃদ্ধ ও স্বনির্ভর দেশ গড়ার দীর্ঘ পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে ফাউন্ডেশনটি।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম