প্রিয় নবীর অনুপম গুণাবলী
রায়হান আল ইমরান
প্রকাশ: ০১ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
মুমিন হৃদয় কত যে স্বপ্ন বোনে। কিন্তু একটি স্বপ্ন প্রতিদিনই কথা বলে। কখন এটি পূর্ণতার রূপ নেবে। দেখা মিলবে একজন প্রিয় মানুষের। এক মহামানবের। যার নাম মুহাম্মাদ (সা.)। যার পরশেই ধন্য হয় এ সুবিশাল মেদিনী এবং হাঁটতে শেখে আলোর পথে। যার জীবন ছিল অজস্র গুণাবলির সমাহার।
উদারতা : নবীজি ছিলেন আকাশের মতো উদার। তিনি কখনো কৃপণতাকে প্রশ্রয় দিতেন না। এ জন্যই তিনি আথিতেয়তা পছন্দ করতেন। এবং জেলে-তাঁতি-ধনী-গরিব-উচ্চশ্রেণি-নিুশ্রেণিসহ সবার সেবা করতেন। এ কারণে কখনো কুণ্ঠাবোধও করতেন না।
বিপদগ্রস্তের পাশে দাঁড়ানো : নবীজির একটি মহৎ গুণ এটি। তিনি জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত উৎসর্গ করেন পরোপকারে। কারও জীবনে দুর্দশা দেখা দিলে পাশে দাঁড়াতেন তিনি। এমনকি নিজ দুশমন বিপদে পড়লেও। তাই তো নবীজির এ শ্রেষ্ঠ গুণে অভিভূত হয়ে যেত মক্কার কাফেররাও। হাদিসের ভাষ্যে পাওয়া যায়, একবার ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে ঘরে ফেরেন তিনি। তখন স্ত্রী খাদিজা (রা.) তাকে বলেন, ‘শপথ আল্লাহর; তিনি কখনো আপনাকে লাঞ্ছিত করবেন না। আপনি তো আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সদাচরণ করেন, অসহায়-দুস্থদের দায়িত্ব বহন করেন। নিঃস্বকে সহযোগিতা করেন। মেহমানের আপ্যায়ন করেন এবং হক পথের দুর্দশাগ্রস্তকে সাহায্য করেন’ (বুখারি,হাদিস : ৩)।
ধৈর্য : নবীজির ধৈর্যে ছিল গভীরতা। সুবিশাল পাহাড়ের মতো ছিল তার ধীরতা। কত যে যাতনার সম্মুখীন হয়েছেন। তবুও ধৈর্যকে সঙ্গে রেখেছেন নবীজি। দুঃখ-দুর্দশায় তার চেহারায় ছিল না কোনো উৎকণ্ঠা বা মলিনতা। হাসিমুখে মেনে নিয়েছেন পাহাড়সম বেদনা। কাফেরদের অসহনীয় নিপীড়নের পরও লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হননি তিনি। তাঁর জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই ছিল ধৈর্যের এক অমরকাব্য। তিনি কল্যাণের দিকে আহ্বান করলেও ইমান আনত না অনেকেই। তারপরও ধৈর্যপথে অবিচল থাকতেন। নবীজির ধৈর্য, স্থিতিশীলতার কথা কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি হয়তো এ দুঃখে নিজেকে নিঃশেষ করে দেবে যে, তারা মুমিন হচ্ছে না’ (সূরা : শুআরা, আয়াত:৩)।
দয়া ও সহানুভূতি : নবীজি ছিলেন দয়ার এক অমর প্রতীক। মানবতার এক জাগ্রত সৈনিক। তার হৃদয় ছিল কোমল এবং স্নেহময়। তিনি ছিলেন দয়াপরবশ মহান মানব। নিপীড়িত মানুষের একমাত্র সঙ্গী। অসহায়দের আশ্রয়দাতা। মানবকূলের প্রতি অনুকম্পা তার জীবনের বড় লক্ষ্য ছিল। এ জন্য নবীজির জীবন সহানুভূতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। স্বয়ং কুরআনে নবীজির এ গুণের প্রশংসা করে বলা হয়েছে, ‘আমি আপনাকে জগদ্বাসীর জন্য একমাত্র রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি।’ (সূরা : আম্বিয়া, আয়াত: ১০৭)।
সত্যনিষ্ঠা : নবীজির একটি বিশেষ গুণ এটি। শিশুকাল থেকেই তিনি ছিলেন সত্যপ্রিয়। তার প্রতিটি কথা ছিল সত্যের অটুট চিহ্ন। মক্কার প্রতিটি মানুষের কাছে তিনি ছিলেন বিশ্বস্ত। তাই তো তিনি সবার প্রিয় হয়ে ওঠেন রাতারাতি এবং ভূষিত হন আল-আমিন উপাধিতে। এ অসীম সত্যনিষ্ঠাই ছিল নবীজির জীবনের শোভাবর্ধক। হাদিসের বাণী এ বিষয়ের প্রমাণ করে, তৎকালীন রোম সম্রাট হিরাকিল আবু সুফিয়ান (রা.)কে বললেন, (আবু সুফিয়ান (রা.) তখনো অমুসলিম ছিলেন) আচ্ছা তোমরা কি কখনো মুহাম্মাদকে মিথ্যায় অভিযুক্ত করেছ? আবু সুফিয়ান (রা.) উত্তরে বললেন, না (বুখারি, হাদিস : ৭)’।
ক্ষমা : ক্ষমা করা ইসলামের একটি সৌন্দর্য। এ গুণটি প্রিয় নবীজির শিক্ষা। তার মহান চরিত্রের নীরব পরিচায়ক। তিনি প্রতিটি অপরাধ ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখতেন। শত্রুরা যত না আঘাত দিত তাকে। তবুও তাদের অপরাধ মার্জনা করতেন তিনি। তাই তার এ মহান গুণ প্রশংসনীয় ছিল সবার কাছে। সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়ের (রা.) মহান আল্লাহর বাণী ‘আপনি ক্ষমাশীলতা অবলম্বন করুন’ সম্পর্কে বলেন, রাসূল (সা.)কে মানুষের চারিত্রিক দুর্বলতা ক্ষমা করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭৮৭)।
ন্যায়পরায়ণতা : নবীজির ন্যায়পরায়ণতা এক সোনালি দৃষ্টান্ত। যুগযুগান্তর যা মানুষের পথপ্রদর্শক হয়ে রয়েছে। নবীজির পুরো সংগ্রামী জীবনে ন্যায়ের কথা বলতেন। তিনি কখনো স্বজনপ্রীতি-স্বদলপ্রীতি করতেন না। তাই তো তার বিচারকার্য ছিল নিরপেক্ষ।
লেখক : শিক্ষার্থী, মাদ্রাসা মারকাযুল হিদায়াহ ঢাকা।
