Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

জুলাই অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধ

জয় আনিসুল সালমান ও পলকের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

জয় আনিসুল সালমান ও পলকের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক এবং শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। বুধবার চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা প্রতিবেদনটি জমা দিয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জ্যেষ্ঠ প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম বুধবার যুগান্তরকে বলেন, দীর্ঘ তদন্ত করে তদন্ত সংস্থা দুটি প্রতিবেদন প্রসিকিউশনে জমা দিয়েছে। এর একটির আসামি হলেন-জয় ও পলক। অন্যটিতে আনিসুল হক ও সালমান এফ রহমানকে আসামি করা হয়েছে। যাচাই-বাছাই শেষে প্রতিবেদনটি ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হবে। তিনি আরও বলেন, প্রতিবেদনে জয় ও পলকের বিরুদ্ধে ইন্টারনেট বন্ধ করে হত্যায় প্ররোচনা ও সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়েছে। অন্যদিকে আনিসুল হক ও সালমানের বিরুদ্ধে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।

এদিকে গুমের ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলায় শেখ হাসিনা, সেনা কর্মকর্তাসহ ১৭ আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের আবেদন জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ এ আবেদন করা হয়। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের বিষয়ে ১৪ ডিসেম্বর আসামিপক্ষের শুনানির তারিখ ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল। ১৪ জনকে গুম করার ঘটনায় ১৭ আসামির বিরুদ্ধে চারটি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনা হয়েছে। গুম-নির্যাতনের ঘটনায় করা বুধবার মানবতাবিরোধী অপরাধের দুই মামলায় শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হিসাবে আমির হোসেন নিয়োগ পেয়েছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ দেন। দুটি মামলায় পলাতক আসামি শেখ হাসিনার পক্ষে ২৩ নভেম্বর রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হিসাবে সুপ্রিমকোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেডআই খান পান্নাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তবে শেখ হাসিনার পক্ষে তিনি রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হিসাবে দায়িত্ব পালন করতে চান না। এর পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনাল আমির হোসেনকে নিয়োগ দেন।

টাস্কফোর্স ফর ইন্টারোগেশন সেলে (টিএফআই সেল) গুম করে রাখার ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলায় শেখ হাসিনা, সেনা কর্মকর্তাসহ ১৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। আর গুম করে জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে (জেআইসি) রাখার ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের আরেকটি মামলায় শেখ হাসিনা, সেনা কর্মকর্তাসহ ১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর আগেও শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন আমির হোসেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সেই মামলায় শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

তলবের ১০ মিনিটেই হাজির জেডআই খান পান্না, চাইলেন নিঃশর্ত ক্ষমা : গুম-নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হিসাবে নিয়োগ পাওয়া জেডআই খান পান্না হাজির না হওয়ায় তাকে তলব করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। শুনানির একপর্যায়ে পান্নাকে ফোন করে আসতে বলেন ট্রাইব্যুনাল। ঠিক ১০ মিনিট পর হুইলচেয়ারে করে তিনি আসেন। সুস্থ আছেন কিনা জানতে চেয়ে তার উদ্দেশে ট্রাইব্যুনাল বলেন, আপনি শেখ হাসিনার পক্ষে নিয়োগ পেয়েছেন। আসেননি কেন। জবাবে পান্না বলেন, আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ। এ মামলায় না দাঁড়ানোর জন্য রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। তখন ট্রাইব্যুনাল বলেন, আপনার ক্লায়েন্ট হাজির হবেন না। আপনিও আসবেন না। আপনি নিজেই আগ্রহ দেখিয়েছেন আইনজীবী হওয়ার জন্য। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা অর্ডার দিয়েছি। আপনি না করতে চাইলে ট্রাইব্যুনালে এসে বলতে হবে। ভিডিও বার্তায় ট্রাইব্যুনাল নিয়ে আপনি মন্তব্য করেছেন। বলেছেন, আপনার ক্লায়েন্ট এ আদালত মানেন না। এজন্য আপনিও মানেন না। এটা কি আপনি বলতে পারেন? উত্তরে পান্না বলেন, আমি আনকনডিশনাল অ্যাপোলজি চাই।

দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে এই বিচার নয় : গুমের মামলায় সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষে বুধবার ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে প্রেস ব্রিফিং করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, র‌্যাবের যেসব কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে তাদের ভার্চুয়ালি শুনানির সুযোগ দিতে আবেদন করেছিলেন আইনজীবী। কিন্তু আদালত তা নামঞ্জুর করেছেন। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা সেনাবাহিনীর সঙ্গে এ বিচারকে মুখোমুখি করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যা শুনানির সময় আমরা লক্ষ্য করেছি।

তাজুল ইসলাম বলেন, তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত বলেছেন-এ বিচার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নয়। আমরাও সুস্পষ্টভাবে বলেছি-এটি দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিচার নয়। কারণ, সামরিক শৃঙ্খলার বাইরে থাকা অবস্থায় আসামিরা মারাত্মক অপরাধ করেছেন। তখন তারা র‌্যাবে ছিলেন। এসব অপরাধকে মানবতাবিরোধী অপরাধ বলা হয়। সুতরাং তাদের পক্ষে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার প্রার্থনা খারিজ করেছেন আদালত। আদালত বলেন, আইনের দৃষ্টিতে সব নাগরিকই সমান।

ট্রাইব্যুনালে ক্ষমা চাইলেন বিএনপি নেতা ফজলুর রহমান : আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় আদালত অবমাননার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে লিখিতভাবে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিমকোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ফজলুর রহমান। বুধবার ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে প্রেস ব্রিফিংয়ে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন ফজলুর রহমান। যা কিছু বলেছেন তা ভুলে বলেছেন বলে তিনি (ফজলুর) স্বীকার করেছেন। এজন্য আদালতের অনুকম্পা বা ক্ষমা পেতে চান। এ বিষয়ে ৮ ডিসেম্বর শুনানির কথা রয়েছে।

এর আগে, এ অভিযোগের ব্যাখ্যা শুনতে ফজলুর রহমানকে ৮ ডিসেম্বর সশরীরে হাজিরের নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম