সুপ্রিমকোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ
বিচার বিভাগের জন্য বড় অগ্রগতি
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
রোববার ‘সুপ্রিমকোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারির মধ্য দিয়ে বিচার বিভাগ পূর্ণ স্বাধীনতার পথে যাত্রা শুরু করেছে। রাষ্ট্রপতির নির্দেশে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করে। জারীকৃত অধ্যাদেশ অনুযায়ী, বিচার বিভাগের সব প্রশাসনিক ও সাচিবিক দায়িত্ব এখন থেকে পালন করবে সুপ্রিমকোর্ট সচিবালয়। অর্থাৎ অধস্তন আদালতের তত্ত্বাবধান, নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা-সবকিছু করবে সুপ্রিমকোর্ট সচিবালয়, যা এতদিন করে আসছিল নির্বাহী বিভাগ তথা আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়। দেশের বিচার বিভাগের জন্য এ অধ্যাদেশ জারিকে একটি বড় অগ্রগিত হিসাবে দেখা হচ্ছে। বস্তুত দীর্ঘদিন এর জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে।
উল্লেখ্য, বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগের প্রভাব থেকে মুক্ত করার দাবিতে ১৯৯৫ সালে জেলা জজ ও জুডিশিয়াল অ্যাসোসিয়েশনের তৎকালীন মহাসচিব মাসদার হোসেন ও তার সহকর্মীরা একটি রিট পিটিশন দায়ের করেছিলেন। ১৯৯৯ সালে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত রায় দেন। সেই রায়ের ২৬ বছর পর সুপ্রিমকোর্টের জন্য আলাদা সচিবালয় প্রতিষ্ঠায় ‘সুপ্রিমকোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ’ জারি করা হলো। তবে অন্তর্বর্তী সরকার গেজেট প্রকাশ করলেও পরবর্তী নির্বাচিত সরকারকে এটা অনুমোদন করতে হবে।
বিচার বিভাগ স্বাধীন হলে প্রশাসন বা সরকার বিচারকদের চাপ দিয়ে বিচারকে প্রভাবিত করতে পারবে না। জামিন দিতে বাধ্য করা, রায় পালটে দিতে বাধ্য করা, বিচার প্রভাবিত করা-এগুলো সম্ভব হবে না। কারণ সরকারের হাতে নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি, শাস্তি ইত্যাদি আর থাকবে না। পুরোটাই দেখবেন সুপ্রিমকোর্টের সচিবালয়, প্রধান বিচারপতি। তবে আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর নিয়ন্ত্রণ এখনো সরকারের হাতে রয়েছে। যেমন, প্রধান বিচারপতিকে অর্থনৈতিক পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা দেওয়া হয়নি। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা না থাকলে পূর্ণাঙ্গভাবে কোনো কিছু কার্যকর হয় না। অর্থনৈতিক স্বাধীনতা মূল স্বাধীনতাকে নিয়ন্ত্রণ করে বলে মনে করেন আইন বিশেষজ্ঞরা।
তাছাড়া যারা জুডিশিয়াল সার্ভিসে আছেন, কিন্তু আইন মন্ত্রণালয়, শ্রম আদালত বা প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে কাজ করছেন, তাদের নিয়ন্ত্রণ কাদের হাতে থাকবে, সেটা এখনো স্পষ্ট নয়। তাদেরও সুপ্রিমকোর্ট সচিবালয়ের অধীনে আনা জরুরি বলে মনে করেন আইন বিশেষজ্ঞরা। সুপ্রিমকোর্টের একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বলেছেন, বিচারকরা যদি সাহসী ও দক্ষ না হন, তাহলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও একাডেমিক স্বাধীনতা কোনো কাজে আসবে না। এক্ষেত্রে সাহস একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অবশ্যই।
সব মিলিয়ে বলা যায়, ‘সুপ্রিমকোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে প্রথম ধাপ এবং নিঃসন্দেহে এটি একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। তবে এর বাস্তবায়ন নির্ভর করবে বাস্তব কাজের ওপর। বিচার বিভাগকে পুরোপুরি স্বাধীন করতে হলে একটি প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তুলতে হবে। এটি সময়সাপেক্ষ এবং আশা করা যায় আগামী সরকার এর ধারাবাহিকতা বজায় রেখে বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ স্বাধীন করার পথে এগিয়ে যাবে।
