পর্যবেক্ষণসহ লিভ টু আপিল খারিজ
অন্তর্বর্তী সরকার গঠন বৈধ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে করা লিভ টু আপিল পর্যবেক্ষণসহ খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন। এ আদেশের ফলে অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা নিয়ে আর কোনো প্রশ্ন তোলা যাবে না। এ সরকার গঠন বৈধ।
আদেশের পর অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক বলেন, ‘লিভ টু আপিলে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গঠন নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। আপিল বিভাগ পর্যবেক্ষণসহ লিভ টু আপিল খারিজ করে দেওয়ায় সরকার গঠন ও তাদের কার্যক্রম বৈধ বলে প্রমাণিত হলো। তবে আদালতের পর্যবেক্ষণ পেলে এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানা যাবে।’
হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে করা লিভ টু আপিলের (আপিল করার অনুমতি চেয়ে আবেদন) ওপর বুধবার শুনানি শেষে আপিল বিভাগ আদেশের জন্য দিন রেখেছিলেন। বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে আদেশ ঘোষণা করেন প্রধান বিচারপতি। ঘোষিত আদেশে বলা হয়, পর্যবেক্ষণসহ খারিজ করা হলো।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশ পরিচালনার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার গঠন বিষয়ে রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিমকোর্টের কাছে মতামত চান। সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের মতামতের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা শপথ নেন। সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদে ‘সুপ্রিমকোর্টের উপদেষ্টামূলক এখতিয়ারের’ বিষয়ে বলা আছে।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠন ও শপথ বিষয়ে সুপ্রিমকোর্টের কাছে পাঠানো রেফারেন্স ও মতামতের প্রক্রিয়া নিয়ে সুপ্রিমকোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ গত বছরের ডিসেম্বরে একটি রিট আবেদন করেন। শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট ১৩ জানুয়ারি তার করা রিট সরাসরি খারিজ করে আদেশ দেন। এ আদেশের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠন ও শপথের বিষয়ে সুপ্রিমকোর্টের কাছে পাঠানো রেফারেন্স ও মতামতের প্রক্রিয়া নিয়ে মোহাম্মদ মহসিন রশিদের দায়ের রিট খারিজ করে হাইকোর্ট যে আদেশ দিয়েছিলেন, সে আদেশের বিরুদ্ধে তার লিভ টু আপিল খারিজ করে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। এর আগে লিভ টু আপিলের ওপর ২ নভেম্বর শুনানি শুরু হয়। এরপর ৬ নভেম্বর শুনানি নিয়ে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত শুনানি মুলতুবি করা হয়। ১২ নভেম্বর বিষয়টি শুনানির জন্য ওঠে, সেদিন আদালত ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত শুনানি মুলতুবি করেন। এর ধারাবাহিকতায় মঙ্গল ও বুধবার শুনানি হয়।
আদালতে লিভ টু আপিলকারী জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ শুনানি করেন। এ মামলায় ইন্টারভেনার (পক্ষ) হিসাবে যুক্ত হন লেখক ফিরোজ আহমেদ, যিনি সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্য ছিলেন। আদালতে তার পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া। এ মামলায় বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের কার্যনির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. রুহুল কুদ্দুস ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির ইন্টারভেনার হন। এ দুই জ্যেষ্ঠ আইনজীবীও শুনানিতে অংশ নেন।
লিভ টু আপিলে নওগাঁর বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেন ইন্টারভেনার (পক্ষ) হন। তার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এএসএম শাহরিয়ার কবির। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক শুনানিতে অংশ নেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতার ব্যাপারে আর কোনো প্রশ্ন থাকবে না : আদেশের পর জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার গঠন ও শপথ বিষয়ে সুপ্রিমকোর্টের কাছে পাঠানো রেফারেন্স-মতামতের প্রক্রিয়া নিয়ে রিট সরাসরি খারিজ করে আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এ আদেশের বিরুদ্ধে করা লিভ টু আপিল পর্যবেক্ষণসহ খারিজ করেছেন আপিল বিভাগ। এই আদেশের ফলে এটি প্রতিষ্ঠিত হলো যে, বর্তমান সরকার জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতার অভিপ্রায়ের ভিত্তিতে গঠিত। পাশাপাশি এই সরকার যে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে, তা মূলত জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ হিসাবেই করছে। তিনি আরও বলেন, উচ্চ আদালত দেশের সংবিধানের মূলমন্ত্র আজ আবার পুনর্ব্যক্ত করলেন। এই আদেশের ফলে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড, বিশেষ করে তিনটি ম্যান্ডেট-নির্বাচন, বিচার ও সংস্কার সম্পর্কিত বৈধতার ব্যাপারে আর কোনো প্রশ্ন থাকবে না।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, আজকের আদেশের ফলে বাংলাদেশের সংবিধানের যে শূন্যতার কথা অনেকে আরগুমেন্ট করেছেন, যে ভ্যাকুয়ামের কথা অনেকে আরগুমেন্ট করেছেন, এই ভ্যাকুয়ামের আর কোনো জায়গা থাকবে না। এটি সুপ্রিমকোর্টের আদেশের মাধ্যমে আজ প্রমাণিত হলো।
