Logo
Logo
×

শেষ পাতা

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে অচেতন করে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে অচেতন করে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ

বেসরকারি গণবিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের মামলায় সহপাঠীসহ তিন আসামির বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এছাড়া এক আসামির রিমান্ড শুনানির জন্য দিন রোববার ধার্য করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তাজুল ইসলাম সোহাগের আদালত শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। এর আগে মঙ্গলবার আশুলিয়া থানায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী চারজনকে অভিযুক্ত করে মামলা করেন। এরপর বুধবার সারারাত অভিযান চালিয়ে পুলিশ আশুলিয়া থেকে তাদের গ্রেফতার করে।

রিমান্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলো-তাজুল ইসলাম তাজ ও শ্রাবণ সাহা। আর অন্তু দেওয়ান তাদের সিনিয়র। তাজ ও উৎসকে তিন দিন ও অন্তুকে দুদিনের রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছে। আসামি দেলোয়ার ভূঁইয়া প্রথমে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হলেও পরে অস্বীকৃতি জানায়। তার রিমান্ড শুনানির জন্য রোববার ধার্য করা হয়েছে। দেলোয়ার ও তাজ গণবিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তাদের সিনিয়র অন্তু দেওয়ান ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিপি মৃদুল দেওয়ানের ভাই। আর শ্রাবণ বহিরাগত।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার পরিদর্শক সফিকুল ইসলাম সুমন আদালতে আসামিদের হাজির করে প্রত্যেকের সাত দিন করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। অ্যাডভোকেট এসএইচ কৃষ্ণ রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। অপরদিকে রিমান্ড বাতিল চেয়ে আবেদন করেন অ্যাডভোকেট রায়হানুর রশীদ।

মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ৭ এপ্রিল বেলা ১১টার দিকে পিকনিকে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ওই শিক্ষার্থীকে ডেকে নেয় তার সহপাঠীরা। পথিমধ্যে কোমল পানীয় ‘মোজোর’ সঙ্গে চেতনানাশক মিশিয়ে পান করিয়ে তাকে অচেতন করা হয়। এরপর তাকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও ভিডিও ধারণ করা হয়। ওইদিন বিকাল ৫টার দিকে তার জ্ঞান ফিরে এবং কিছুক্ষণ পর তিনি আবার অচেতন হয়ে পড়েন। এরপর তিনি নিজেকে আশুলিয়ার ফুলেরটেক এলাকায় আসামিদের মেসে নিজেকে দেখেন। বুঝতে পারেন তার সঙ্গে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক করা হয়েছে। এ সময় তিনি চিৎকার করলে আসামিরা ধারণ করা ভিডিও ও অশ্লীল ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়াসহ এসিড দিয়ে মুখ ঝলসে দেওয়ার হুমকি দেয়। এ ঘটনার পর থেকে তাকে জিম্মি করে একাধিক ধাপে তার কাছ থেকে ৯৬ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় আসামিরা।

৪ নভেম্বর ওই শিক্ষার্থীকে আবারও শারীরিক সম্পর্কের জন্য চাপ সৃষ্টি করে আসামিরা। ৬ নভেম্বর আসামি অন্তু দেওয়ানের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয়। রাজি না হলে তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও এলোপাতারি চড়থাপ্পড় ও টেনেহিঁচড়ে অন্তু দেওয়ানের কাছে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়। এ সময় আবারও নেশাজাতীয় পানীয় পান করতে তাকে বাধ্য করা হয়।

এ সময় কোনোমতে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে তিনি গুরুত্বর অসুস্থ ও অচেতন হয়ে পড়েন। গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেলে তাকে সহপাঠী ও শিক্ষকরা ভর্তি করেন। অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। এ ঘটনায় তার স্বজনরা বিশ্ববিদ্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দিলে আসামিরা আরও চড়াও হয়। ২৬ নভেম্বর তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কক্ষে আটকে রেখে অভিযোগটি তুলে নিতে হুমকি দেয় আসামিরা। এ ঘটনায় মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) ওই শিক্ষার্থী আশুলিয়া থানায় মামলা করেন।

পুলিশ জানায়, অন্তু দেওয়ান গণবিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য নির্বাচিত ভিপি ইয়াছিন আল মৃদুল দেওয়ানের চাচাতো ভাই। বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তু ত্রাস ও সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত এবং একচ্ছত্রভাবে মেয়ে শিক্ষার্থীদের উত্ত্যক্ত করার সঙ্গে জড়িত। ভিপির ভাই হওয়ায় কেউ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করার সাহস পেত না।

আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হান্নান বলেন, ৪ এপ্রিল থেকে ধারাবাহিকভাবে ঘটে যাওয়া সব ঘটনায় মামলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযোগ দেওয়ার পরও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী চারজনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন। ১৭ ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত চারজনকেই আশপাশের এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে ওসি আব্দুল হান্নান যুগান্তরকে জানান, এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বা ভিপি মৃদুল দেওয়ানের কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে কি না-তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম