‘দ্রোহ’ থেকে নতুন বারো ফন্ট, লিপিকলার প্রথম বর্ষপূর্তি উদযাপন
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭ আগস্ট ২০২৫, ১০:৩৭ পিএম
প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে ১২টি নতুন বাংলা ফন্ট প্রকাশ করেছে লিপিকলা।
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
একটি ভালো লেখাকে সহজপাঠ্য করে তুলতে টাইপফেসের গুরুত্ব অনেক। সংবাদপত্র, বই, ওয়েবসাইট বা মোবাইল অ্যাপে ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা অনেকটাই নির্ভর করে ফন্টের মানের উপর। কিন্তু সঠিকভাবে নকশা করা টাইপফেস আজকালকার সময়ে ব্যবহার হচ্ছে না। টাইপফেস শুধু লিখনচিহ্ন নয়, এটি এখন ভিজ্যুয়াল আর্টের অংশ। বিজ্ঞাপন, পোস্টার, চলচ্চিত্র, সবখানেই এটার আলাদা তাৎপর্য রয়েছে।
এবার বাংলা অক্ষরের নকশা ও ব্যবহারকে আরও সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে অভিজ্ঞতা, গবেষণা ও ভবিষ্যৎ ভাবনার সমন্বয়ে রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে শনিবার অনুষ্ঠিত হলো ‘লিপিকলা টাইপক : ডিসকাসিং বাংলা টাইফেস’।
এ আয়োজন ছিল লিপিকলার প্রথম বর্ষপূর্তি ও ১২টি নতুন বাংলা ফন্ট প্রকাশ উপলক্ষে। অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট শিল্পী, গবেষক, শিক্ষক এবং গণমাধ্যমকর্মীরা অংশ নেন।
স্বাগত বক্তব্যে লিপিকলার ফাউন্ডার ও সিইও কাজী যুবাইর মাহমুদ জানান, ‘লিপিকলা টাইপ ফাউন্ড্রি’ পেরিয়েছে এক বছরের যাত্রা। এই এক বছরে আমরা ১২টি টাইপফেস নিয়ে ১২টি বাংলা ফন্ট নির্মাণ করেছি, যেগুলো বাংলা লেখার দৃশ্যমান রূপকে নতুন মাত্রা দেবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

তিনি বলেন, ‘বাংলা বারো মাসের নামে একসঙ্গে ১২টি ফন্ট প্রকাশ করেছি আমরা। যে ফন্টগুলো লিপিকলার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট www.lipikola.cm থেকে ডাউনলোড করা যাবে। এর আগে গত বছর জুলাই গণঅভ্যুত্থানের দিনগুলিতে লিপিকলার ‘দ্রোহ’ ফন্ট যেভাবে দেশব্যাপী আন্দোলন, দেয়াললিখন আর পোস্টারে পোস্টারে জায়গা করে নিয়েছিল, সেই ঘটনা থেকে আমরা অনুপ্রাণিত হয়েছি।’
বক্তাদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাকসুদুর রহমান বাংলা ফন্টের ‘শরীর’ বা গঠন নিয়ে তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ উপস্থাপন করেন।
তিনি ব্যাখ্যা করেন, কখন অক্ষর শুধু লিখনচিহ্ন হয়, কখন তা টাইপোগ্রাফিক নকশায় রূপ নেয় এবং কখন মুদ্রাক্ষরের প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়। বাংলা টাইপফেসের ঐতিহাসিক বিকাশ, ডিজিটাল যুগে টাইপফেসের প্রয়োজনীয়তা এবং অক্ষরের গঠনশৈলী নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা উপস্থাপন করেন।

নিউএইজের ডেপুটি এডিটর ও টাইপফেস বিশেষজ্ঞ আবু জার মোঃ আক্কাস বাংলা টাইপফেসে বিবর্তন, নকশা, টাইপোগ্রাফি ও ব্যবহার নিয়ে তাত্ত্বিক আলোচনা করেন। তিনি টাইপফেস ও ফন্টের অভিজ্ঞতা ও গবেষণার নানা দিক তুলে ধরেন। টেক্সট ফন্ট ও ডিসপ্লে ফন্টের পার্থক্য ব্যাখ্যা করেন। পাশাপাশি বাংলা টেক্সটফন্টের অভাব, নতুন বাংলা ফন্টের সম্ভাবনা এবং ডিজিটাল মাধ্যমে এর বিস্তারের বিষয়েও আলোকপাত করেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্য আলোচকের মধ্যে ছিলেন, বিশিষ্ট শিল্পী ও টাইপফেস ডিজাইনার আনিসুজ্জামান সোহেল, তার মতে, একজন ডিজাইনারের জন্য সবচেয়ে দরকারি হলো এমন ফন্ট, যা কাজকে সহজ ও স্বাভাবিকভাবে এগিয়ে নিতে সক্ষম।
বেঙ্গলবুকস-কিন্ডারবুকস এর প্রকল্প প্রধান, শিল্পী ও টাইপফেস ডিজাইনার আজহার ফরহাদ এর আলোচনায় কাজী যুবাইর মাহমুদের ফন্ট-জার্নির অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। পাশাপাশি তিনি নতুন একটি স্বতন্ত্র উদ্যোগের কথা উল্লেখ করেন, যা তরুণদের টাইপোগ্রাফি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেবে এবং সরকারি কাঠামোর বাইরে গুণগত চর্চার সুযোগ তৈরি করবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন—‘Good typography is invisible, bad typography is everywhere’.

ইবিএলআইসিটি প্রকল্পের পরামর্শক মামুন অর রশিদ বলেন, দেশের ফন্ট শিল্পীদের সীমাবদ্ধতা যেমন আছে, তেমনই রয়েছে সম্ভাবনার দিগন্তও। তিনি সরকারের পক্ষ থেকে ফন্ট উন্নয়ন ও ব্যবহারে যেসব ক্ষেত্র নিয়ে কাজ চলছে, তার দিকনির্দেশনা দেন।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, ২০২৫ এ অভ্র কিবোর্ডের জন্য একুশে পদকপ্রাপ্ত এবং বাংলা সিয়াম রুপালী ও কালপুরুষ ফন্টের নির্মাতা তানবিন ইসলাম সিয়াম।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন শিল্পী ও গবেষক সিলভিয়া নাজনীন। অনুষ্ঠানে লিপিকলার নতুন বারোটি ফন্ট ও বাংলা লিপিকলার কয়েকশো বছরের ইতিহাস, বিবর্তন ও নকশা নিয়ে বিশেষ ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।
