Logo
Logo
×

ডাক্তার আছেন

সংসারের আয়-ব্যয় নিয়ন্ত্রণে বাজেট করবেন যেভাবে

Icon

লাইফস্টাইল ডেস্ক

প্রকাশ: ০৩ জুন ২০২৫, ০৩:৩৮ পিএম

সংসারের আয়-ব্যয় নিয়ন্ত্রণে বাজেট করবেন যেভাবে

ছবি: সংগৃহীত

সংসার চালানোর একটি বড় চ্যালেঞ্জ হল আয় অনুযায়ী ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করা। অগোছালো খরচের কারণে অনেক পরিবারেই মাসের শেষে আর্থিক সংকট দেখা দেয়। কিন্তু একটি সঠিক বাজেট প্ল্যানিং করলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তাই জেনে নিন কীভাবে একটি কার্যকরী সংসারিক বাজেট তৈরি করবেন।

সংসারের বাজেট করার জন্য কিছু সহজ ধাপ অনুসরণ করতে পারেন:

১. আয়ের উৎস চিহ্নিত করুন:

প্রথমে আপনার পরিবারের সব উৎস থেকে মোট মাসিক আয় কত, তা হিসাব করুন। এর মধ্যে বেতন, ব্যবসা থেকে আয়, বাড়ি ভাড়া, বা অন্য কোনো নিয়মিত আয়ের উৎস অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। যদি আপনার আয় প্রতি মাসে ওঠানামা করে, তবে গত কয়েক মাসের গড় আয় হিসাব করতে পারেন।

২. ব্যয়গুলো তালিকাভুক্ত করুন:

এবার আপনার সব মাসিক ব্যয়ের একটি তালিকা তৈরি করুন। ব্যয়গুলোকে দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়:

স্থির ব্যয় (Fixed Expenses): এই ব্যয়গুলো সাধারণত প্রতি মাসে একই থাকে। যেমন:

  •  বাড়ি ভাড়া/গৃহঋণের কিস্তি
  •  বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল (অনেক সময় কিছুটা ওঠানামা করতে পারে, তবে গড় হিসাব করুন)
  •  মোবাইল বিল/ইন্টারনেট বিল
  •  বাচ্চাদের স্কুলের বেতন/টিউশন ফি
  •  বীমার প্রিমিয়াম
  •  ঋণের কিস্তি (গাড়ি, ব্যক্তিগত ঋণ ইত্যাদি)

পরিবর্তনশীল ব্যয় (Variable Expenses): এই ব্যয়গুলো প্রতি মাসে পরিবর্তিত হতে পারে। যেমন:

  • খাবার খরচ (বাজার)
  •  পরিবহন খরচ
  • পোশাক ও ব্যক্তিগত যত্ন
  •  বিনোদন/আউটডোর কার্যকলাপ
  •  স্বাস্থ্যসেবা (ঔষধ, ডাক্তারের ফি)
  • উপহার ও দান
  •  অন্যান্য অপ্রত্যাশিত খরচ

৩. ব্যয়গুলো ট্র্যাক করুন:

এক মাসের জন্য আপনার সব ব্যয় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ট্র্যাক করুন। আপনি একটি খাতা-কলম, স্প্রেডশিট (যেমন এক্সেল), অথবা বাজেট অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন। প্রতিটি ছোট থেকে ছোট ব্যয়ও লিখে রাখা জরুরি, কারণ ছোট ছোট খরচগুলোও যোগ হয়ে বড় অঙ্কে পরিণত হতে পারে।

৪. আয় এবং ব্যয়ের তুলনা করুন:

এক মাস শেষে আপনার মোট আয় এবং মোট ব্যয়ের তুলনা করুন।

যদি আয় > ব্যয়: অভিনন্দন! আপনার হাতে বাড়তি টাকা আছে, যা আপনি সঞ্চয় বা বিনিয়োগ করতে পারেন।

যদি আয় < ব্যয়: আপনার ব্যয় আপনার আয়ের চেয়ে বেশি। এটি একটি অ্যালার্মিং পরিস্থিতি। আপনাকে ব্যয়ের খাতগুলো পর্যালোচনা করে কাটছাঁট করতে হবে।

যদি আয় = ব্যয়: আপনি ভারসাম্য বজায় রাখছেন, তবে সঞ্চয়ের জন্য কোনো সুযোগ থাকছে না।

৫. বাজেট তৈরি ও সমন্বয় করুন:

আয় এবং ব্যয়ের হিসাব পেয়ে গেলে, একটি বাস্তবসম্মত বাজেট তৈরি করুন। আপনি আপনার ব্যয়ের খাতগুলোতে সীমা নির্ধারণ করুন। উদাহরণস্বরূপ:

যদি আপনার ব্যয় আয়ের চেয়ে বেশি হয়, তবে অপ্রয়োজনীয় ব্যয়গুলো কমানোর চেষ্টা করুন। যেমন: বাইরে খাওয়া কমানো, অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা এড়ানো, বা বিনোদন খরচ কমানো।

৬. সঞ্চয় ও বিনিয়োগের লক্ষ্য নির্ধারণ করুন:

আপনার বাজেট থেকে যদি কিছু টাকা উদ্বৃত্ত থাকে, তবে তা সঞ্চয় বা বিনিয়োগ করার জন্য একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। এটি জরুরি তহবিল তৈরি করা, ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ করা, বা কোনো বড় কেনাকাটার জন্য হতে পারে। আপনার আয়ের অন্তত ১০-২০% সঞ্চয় করার চেষ্টা করুন।

৭. নিয়মিত পর্যালোচনা ও সামঞ্জস্য করুন:

বাজেট একবার তৈরি করেই শেষ নয়। প্রতি মাসে আপনার বাজেট পর্যালোচনা করুন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সামঞ্জস্য করুন। আপনার আয় বা ব্যয় পরিবর্তিত হলে, বাজেটও সে অনুযায়ী আপডেট করা উচিত। এতে আপনার বাজেট সবসময় বাস্তবসম্মত থাকবে।

বাজেট করার কিছু টিপস

বাস্তবসম্মত হোন: এমন বাজেট তৈরি করুন যা আপনি মেনে চলতে পারবেন। অতিরিক্ত কঠোর বাজেট ব্যর্থ হতে পারে।

পরিবারের সবাইকে সম্পৃক্ত করুন: যদি আপনার পরিবার থাকে, তবে সবাইকে বাজেট প্রক্রিয়ায় যুক্ত করুন। এতে সবাই সচেতন থাকবে এবং বাজেট মেনে চলতে সাহায্য করবে।

জরুরি তহবিল: অন্তত ৩-৬ মাসের জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহের জন্য একটি জরুরি তহবিল তৈরি করুন। অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় এটি খুব সহায়ক হবে।

প্রযুক্তি ব্যবহার করুন: বিভিন্ন বাজেট অ্যাপ (যেমন Mint, YNAB) বা অনলাইন স্প্রেডশিট টুলস ব্যবহার করে বাজেট তৈরি ও ট্র্যাক করা সহজ হতে পারে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম