বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড রেগুলেশনস (এফএসআর) বিভাগের সহকারী পরিচালক আনন্দ মণ্ডল।
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
দুর্নীতি, অসদাচরণ, প্রতারণা, পলায়ন ও নৈতিক স্খলনসহ নানা অভিযোগে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড রেগুলেশনস (এফএসআর) বিভাগের সহকারী পরিচালক আনন্দ মণ্ডল-এর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের হয়েছে। কর্মচারী চাকরি প্রবিধানমালা ২০২১ অনুযায়ী কেন তাকে বরখাস্ত করা হবে না, তা জানতে চেয়ে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে চাকরি থেকে বরখাস্তের প্রক্রিয়া শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ।
সূত্রমতে, গত ২ জুলাই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের উপ-ব্যবস্থাপক (ট্রেনিং–এভিওনিক্স) লুবনা রহমান লীনা-এর স্বামী হাফিজ উল্লাহ্ বেবিচক চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন কর্মকর্তার কাছে আনন্দ মণ্ডলের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দায়ের করেন। অভিযোগে বলা হয়, তিনি এয়ারক্রাফট মেইন্টেনেন্স ইঞ্জিনিয়ার (এএমই) লাইসেন্স ইস্যুর প্রক্রিয়ায় অপেশাদার ও অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন এবং ব্যক্তিগত সম্পর্কের অপব্যবহার ঘটিয়েছেন।
অভিযোগ পাওয়ার পর ২০ জুলাই উপ-পরিচালক (এটিএম) সাবেরা রহমানের সভাপতিত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি ২১ আগস্ট দাখিল করা প্রতিবেদনে অভিযোগের অধিকাংশের সত্যতা নিশ্চিত করে। প্রতিবেদনে কর্মকর্তা দ্বারা শৃঙ্খলা ও নৈতিকতার প্রতি অবহেলার বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
তদন্তে আনন্দ মণ্ডল-এর এএমই লাইসেন্স ইস্যু, নবায়ন ও রেটিং সংযোজনের বিনিময়ে আর্থিক লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। আবেদনকারীর কাছ থেকে অর্থ দাবি এবং দাবি পূরণ না হলে প্রক্রিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে বিলম্বিত করা হয়েছে বলেও প্রমাণ পায় তারা। এছাড়া সরকারি কর্মকর্তা হয়েও ভিন্ন নারী (লুবনা রহমান লীনা)-কে নিজের স্ত্রী পরিচয়ে কক্সবাজারের হোটেলে অবস্থান করা এবং ভুয়া আইডি কার্ড প্রদর্শন করেন তিনি। উক্ত নারী কর্মীর সঙ্গে অসৎ উদ্দেশ্যে সম্পর্ক তৈরি এবং তার কাছ থেকে মূল্যবান উপহার ও নগদ অর্থ গ্রহণের ঘটনা নিশ্চিত। ১৫ দিনের ছুটি শেষে অফিসে যোগ না দিয়ে ৬০ দিনের বেশি বিদেশে অবস্থান। পরবর্তীতে কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অমান্য করে পুনরায় ছুটি চাওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
তার বিরুদ্ধে আরও প্রমাণিত হয়, এএমই লাইসেন্স যাচাই প্রক্রিয়ায় নিয়ম মেনে না চলা এবং একেক প্রার্থীকে আলাদা নীতি অনুযায়ী যাচাই, নৈমিত্তিক ছুটির ফর্মে অননুমোদিত ঠিকানা পরিবর্তন ও অফিসের গুরুত্বপূর্ণ নথি বিকৃতি করেন।
জানা যায়, বেবিচক প্রবিধানমালা, ২০২১-এর ধারা ৪৯(ক), ৪৯(খ), ৪৯(গ), ৪৯(ঘ), ৪৯(ঙ) ও ৪৯(চ) অনুযায়ী আনন্দ মণ্ডলকে ‘দায়িত্ব পালনে অবহেলা’, ‘অসদাচরণ’, ‘পলায়ন’, ‘অদক্ষতা’, ‘দুর্নীতিপরায়ণতা’ ও ‘প্রতারণা’-এর অভিযোগে অভিযুক্ত করে বিভাগীয় মামলা নং-০৮/২০২৫ হিসেবে নথিভুক্ত হয়েছে।
বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিকের ৯ নভেম্বর স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে লিখিতভাবে আত্মপক্ষ সমর্থনের ব্যাখ্যা দিতে এবং ব্যক্তিগত শুনানিতে অংশগ্রহণের ইচ্ছা জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে আনন্দ মণ্ডলের মুঠোফোনে বার বার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এর আগে ফ্লাইট সেফটি অ্যান্ড রেগুলেশনের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মো. আহসান হাবীবকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে এক নারীকে মারধর, অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি এবং ওই নারীর বাবা-মাকে হুমকি দেওয়ার গুরুতর অভিযোগে সাধারণ ডায়েরি করেন এক নারী।
ভুক্তভোগী ফারাহ তাহসীন শেবতী বাদী হয়ে অভিযুক্ত কর্মকর্তা ও তার স্ত্রী তৌহিদা সুলতানার বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। ১৪ জুলাই করা ওই জিডির (নম্বর–১৩৬৬) কপি যুগান্তরের হাতে এসেছে।
জিডিতে ফারাহ তাহসীন উল্লেখ করেন, গত ফেব্রুয়ারিতে ফেসবুকের মাধ্যমে তার সঙ্গে আহসান হাবীবের পরিচয় হয়। পরবর্তীতে তাদের মধ্যে কয়েক দফা সাক্ষাৎ ও মোবাইল ফোনে কথা হয়। এ বিষয়টি জানাজানি হলে আহসান হাবীবের স্ত্রী তৌহিদা সুলতানা তাদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করেন।
অভিযোগে বলা হয়, ঘটনার জেরে ১১ জুলাই সকাল ১০টার দিকে আহসান হাবীব ও তার স্ত্রী তৌহিদা সুলতানা হঠাৎ করে শেবতীর উত্তরা পশ্চিম থানাধীন বাসায় ঢুকে তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন।
