দেশে যেসব অ্যান্টিবায়োটিক সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৫ নভেম্বর ২০২৫, ০২:৩০ পিএম
দেশের আইসিইউতে ভর্তি রোগীর ৪১ শতাংশ কোনো অ্যান্টিবায়োটিকে সাড়া দিচ্ছে না।
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
দেশে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রতিরোধ ক্ষমতা (এএমআর) বিপজ্জনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) জানিয়েছে, দেশের আইসিইউতে ভর্তি রোগীর ৪১ শতাংশ কোনো অ্যান্টিবায়োটিকে সাড়া দিচ্ছে না।
সোমবার (২৪ নভেম্বর) আইইডিসিআরের নতুন ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে 'ন্যাশনাল এএমআর সার্ভেলেন্স রিপোর্ট ২০২৫' প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা প্রফেসর ড. জাকির হোসেন হাবিব।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে ২০২৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত দেশের ৯৬,৪৭৭ জন রোগীর নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। পাঁচটি আইসিইউতে ৭১ ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হলে দেখা গেছে, অনেক ক্ষেত্রে কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক
দেশে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ১০টি অ্যান্টিবায়োটিক হলো— সেফট্রিয়াক্সোন, সেফিক্সিম, মেরোপেনেম, সিপ্রোফ্লক্সাসিন, অ্যাজিথ্রোমাইসিন, অ্যামোক্সিসিলিন, মেট্রোনিডাজোল, ক্লক্সাসিলিন, পাইপেরাসিলিন-টাজোব্যাকটাম এবং ভ্যানকোমাইসিন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্যান-ড্রাগ-রেজিস্ট্যান্ট (পিডিআর) জীবাণু সব নমুনার ৭ শতাংশ এবং আইসিইউতে ৪১ শতাংশ পাওয়া গেছে। মাল্টি-ড্রাগ-রেজিস্ট্যান্ট (এমডিআর) জীবাণু সব নমুনার ৪৬ শতাংশ এবং আইসিইউতে ৮৯ শতাংশ দেখা গেছে। এছাড়া, হু ওয়াচ-গ্রুপ অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার বেড়ে ৭৭ শতাংশ থেকে ৯০.৯ শতাংশ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক ছিল সেফট্রিয়াক্সোন (৩৩ শতাংশ) এবং মেরোপেনেম (১৬ শতাংশ)।
প্রফেসর হাবিব সতর্ক করে বলেন, ‘অ্যান্টিবায়োটিকের নিয়মহীন ও অতিরিক্ত ব্যবহার এএমআরকে বিপজ্জনক পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। এটি এখন দেশের জন্য বড় জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি। সবাই দায়িত্বশীল হোক—অ্যান্টিবায়োটিক সংরক্ষণ করুন, নিজের জীবন রক্ষা করুন।’
গবেষণায় ১২৩টি ‘ড্রাগ-বাগ কম্বিনেশন’ সংবেদনশীলতা বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত বছরের তুলনায় ৩৮টির সংবেদনশীলতা বেড়েছে, ৭৯টির কমেছে এবং ৬টির কোনো পরিবর্তন হয়নি। আইসিইউ-এর পরিস্থিতি আরও আশঙ্কাজনক। সেখানে পাঁচটি প্রধান প্যাথোজেনের (অণুজীব) জন্য ৭১টি অ্যান্টিবায়োটিক পরীক্ষায় মাত্র পাঁচটিতে সংবেদনশীলতা ৮০ শতাংশের বেশি পাওয়া গেছে, আর মাত্র একটি কম্বিনেশনে তা ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ। বাকি সব ক্ষেত্রেই সংবেদনশীলতা ৬০ শতাংশের নিচে নেমে গেছে, যা গুরুতর রোগীর চিকিৎসাকে সরাসরি ঝুঁকির মুখে ফেলছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘ক্রিটিক্যাল প্রায়োরিটি’ (অত্যন্ত ঝুঁকি) তালিকায় থাকা জীবাণুগুলোর প্রতিরোধ ক্ষমতাও দ্রুত বাড়ছে। ২০২২ থেকে ২০২৫ সময়কালে ক্লেবসিয়েলা নিউমোনিয়ার সেফট্রিয়াক্সোন রেজিস্ট্যান্স ৪০ দশমিক ১ শতাংশ থেকে বেড়ে ৫২ দশমিক ২ শতাংশ হয়েছে। একই সময়ে মেরোপেনেম রেজিস্ট্যান্স ১৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৯ দশমিক ২ শতাংশ। অ্যাসিনেটোব্যাক্টরের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরও খারাপ। মেরোপেনেমের বিরুদ্ধে প্রতিরোধক্ষমতা ৪৬ দশমিক ৭ থেকে ৭১ শতাংশে উঠে গেছে। প্যান-ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট নমুনার মধ্যেও সবচেয়ে বেশি-২৭ শতাংশ পাওয়া গেছে অ্যাসিনেটোব্যাক্টরে।
স্বাস্থ্য সূচকে (এসডিজি লক্ষ্য ৩.ডি.২) রক্তের নমুনায় এমআরএসএ পাওয়া গেছে ৫৩ দশমিক ৯ শতাংশ এবং ইএসবিএল উৎপাদক ই. কোলি পাওয়া গেছে ৮৪ দশমিক ৩ শতাংশ, যা আন্তর্জাতিক মানের তুলনায় অত্যন্ত উচ্চ। কেসভিত্তিক নজরদারিতে সবচেয়ে ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক ছিল সেফট্রিয়াক্সোন (৩৩ শতাংশ) ও মেরোপেনেম (১৬ শতাংশ)। তবে সবচেয়ে উদ্বেগের তথ্য হলো, হাসপাতালে ‘ওয়াচ’ গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের হার গত বছরের ৭৭ শতাংশ থেকে এবার ১০৯ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছে, যা অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের ইঙ্গিত দেয়।


