হাদিকে হত্যাচেষ্টা: যে অভিযোগ তুললেন নাহিদ ইসলাম
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:৪০ পিএম
শরিফ ওসমান হাদি ও নাহিদ ইসলাম।ফাইল ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা–৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ দল আওয়ামী লীগ ও ভারতের সম্পৃক্ততার অভিযোগ তুলেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
নাহিদ অভিযোগ করেন— ‘আওয়ামী লীগ তাদের সব পরিকল্পনা দিল্লিতে বসেই করে। ভারত সরকারের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদদ ছাড়া আওয়ামী লীগের পক্ষে এ ধরনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তারা এখন জঙ্গি তৎপরতায় লিপ্ত হচ্ছে। ফলে অবশ্যই ভারত সরকারকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। আমাদের দেশে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাসের সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে অ্যাকাউন্টেবল করা জরুরি।’
তিনি বলেন, সরকারকে তাদের (ঢাকাস্থ ভারতীয় দূতাবাস কর্তৃপক্ষ) ডেকে স্পষ্ট করে জানাতে হবে—একজন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত গণহত্যাকারীকে আশ্রয় দিয়ে ভারত সরকার ইতোমধ্যেই একটি গুরুতর অপরাধ করেছে। এখন তারা বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে আওয়ামী লীগকে সহায়তা করছে।’
শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টা সঙ্গে বৈঠক শেষে যমুনার সামনে তিনি এসব কথা বলেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, আমাদের শুধু নেতাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করলেই হবে না। যদি সামগ্রিকভাবে নেতৃত্বের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা যায়, তাহলে জুলাই টিকে থাকবে না। সমাজ ও রাজনীতি থেকে যদি আওয়ামী লীগের প্রশ্নের সুরাহা করা না যায়, যদি ফ্যাসিবাদবিরোধী গণপ্রতিরোধ বজায় রাখা না যায়, তাহলে বাস্তবে আমাদের কারও নিরাপত্তাই থাকবে না।
তিনি আরও বলেন, জনগণই আমাদের প্রকৃত নিরাপত্তা। সেই জনগণের কাছ থেকেই আমাদের নিরাপত্তা নিতে হবে। রাজনৈতিক দায়িত্ব আমাদেরই পালন করতে হবে। সরকার অবশ্যই প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করবে। তবে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে, পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে এবং মিডিয়াসহ নানা ছদ্মবেশে আওয়ামী লীগের লোকজন সক্রিয় রয়েছে। সরকারকে তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে তিনটি প্রধান ক্ষেত্রে কাজ করা জরুরি। তিনি কোর্টপাড়া ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গাগুলোতে থাকা সব ফ্যাসিবাদবিরোধী দলকে নিজ নিজ মতাদর্শের মানুষদের একত্রিত করে সংগঠিত (মোবিলাইজ) হওয়ার আহ্বান জানান।
তার মতে, এই প্রতিরোধ কেবল রাজনৈতিক মাঠেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং কোর্ট, মিডিয়া, বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন সেক্টরে সম্মতি ও ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। এসব জায়গায় আওয়ামী লীগের তৎপরতা অবশ্যই প্রতিরোধ করতে হবে। একই সঙ্গে তিনি প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান, আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করতে হবে এবং ভারতকে জবাবদিহির (অ্যাকাউন্টেবল) আওতায় আনার উদ্যোগ নিতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে এই তিনটি বিষয়ে আমাদের স্পষ্ট অবস্থান থাকা জরুরি বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, তিনটি দলের নেতাদের ডেকে বৈঠক করা হয়েছিল। সেখানে শরিফ ওসমান হাদি ও তার পরিবারের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন, তার মা-ও ছিলেন। তিনি বলেন, গতকালের (১২ ডিসেম্বর) ঘটনাটি কোনো একক ব্যক্তি বা একটি প্রার্থীর সঙ্গে ঘটে যাওয়া বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি নির্বাচনকে ঘিরে একটি বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ, যার সূচনা মাত্র বলা যেতে পারে। এই পরিস্থিতি কীভাবে সম্মিলিতভাবে মোকাবিলা করা যায় এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য কীভাবে অটুট রাখা যায়—সে বিষয়ে সবাই একমত হয়েছেন। তিনি বলেন, নির্বাচনের রাজনীতিতে প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে, একে অপরের সমালোচনাও হবে, কিন্তু তা যেন কখনোই সীমা অতিক্রম না করে এবং আওয়ামী লীগকে কোনো সুযোগ করে না দেয়—এ বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, গণঅভ্যুত্থানকে পরিকল্পিতভাবে ভিন্নভাবে উপস্থাপন ও ভেরিফাই করার চেষ্টা চলছে। মিডিয়া ও টকশোর মাধ্যমে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ফিরে আসাকে স্বাভাবিক করে তোলার (নরমালাইজিং) প্রক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকরা গোপন বৈঠকের সুযোগ পাচ্ছে, কোর্টপাড়ায় ‘জয় বাংলা’ স্লোগান শোনা যাচ্ছে, টকশোতে আওয়ামীপন্থি বুদ্ধিজীবীদের উপস্থিতি বাড়ছে। ভোটের মাঠে জাতীয় পার্টিকে প্রস্তুত করার উদ্যোগও দেখা যাচ্ছে। সব মিলিয়ে পরিকল্পিতভাবে আওয়ামী লীগকে রাজনীতির মাঠে পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা নানা পরিচয়ে সমাজে কথা বলার ও কাজ করার চেষ্টা করছে। এ কারণে প্রধান উপদেষ্টার কাছে সরকারের আরও কঠোর অবস্থানের দাবি জানানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা থাকতে হবে, যাতে তারা সবাইকে নিরাপত্তা দিতে পারে। একই সঙ্গে তিনি বলেন, শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টার সঙ্গে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে এবং শুধু সরাসরি জড়িতরাই নয়, এই পুরো পরিকল্পনার সঙ্গে যারা যুক্ত—তাদের বিরুদ্ধেও সরকারকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
