বিবিএস’র জরিপ প্রতিবেদন
পর্যাপ্ত টয়লেট নেই ৭১ শতাংশ স্কুলে
স্বাস্থ্যঝুঁকিতে শিক্ষার্থী ও রোগীরা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:১৬ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
দেশের স্কুল ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি (ওয়াশ) ব্যবস্থার চিত্র এখনো উদ্বেগজনক। পর্যাপ্ত ও উন্নত টয়লেটের অভাব, নিরাপদ মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনার ঘাটতি এবং হাত ধোয়ার মৌলিক সেবা নিশ্চিত করতে না পারায় শিক্ষার্থী ও রোগীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘ওয়াশ ইন এডুকেশন অ্যান্ড হেলথ কেয়ার ফ্যাসিলিটিজ সার্ভে ২০২৪’-এর প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিসংখ্যান ভবনের সম্মেলন কক্ষে জরিপ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
এতে বলা হয়েছে, দেশের ৭১ দশমিক ৪ শতাংশ স্কুলে ৫০ জন শিক্ষার্থীর জন্য একটি করে উন্নত টয়লেট নেই। মাত্র ২৮ দশমিক ৬ শতাংশ স্কুলে একটি উন্নত টয়লেট রয়েছে, যা আন্তর্জাতিকভাবে সুপারিশ করা ন্যূনতম মানদণ্ড পূরণ করে। এছাড়া ৬৬ দশমিক ১ শতাংশ স্কুল এবং ৫৪ দশমিক ৬ শতাংশ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিরাপদভাবে মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা হয় না। এক্ষেত্রে ৩৩ দশমিক ৯ শতাংশ স্কুল ও ৪৫ দশমিক ৪ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান নিরাপদভাবে মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনা করে থাকে।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব আলেয়া আক্তার। বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মাসুদ রানা চৌধুরী এবং ওআইসি ইউনিসেফ বাংলাদেশ প্রতিনিধি ফারুক আদরিয়ান ডুমন।
জরিপ ফলাফল উপস্থাপন করেন বিবিএস-এর এসডিজি সেলের ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন। বক্তব্য দেন বিবিএস-এর ডেমোগ্রাফি অ্যান্ড হেলথ উইং-এর পরিচালক মো. এমদাদুল হক।
বিবিএস বলেছে, জরিপে দেশের আটটি বিভাগ ও ৬৪টি জেলা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। যার মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং বিস্তৃত স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রতিনিধিত্বমূলক তথ্য নিশ্চিত করার জন্য ওয়াটসনের সূত্র অনুসারে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল এবং ২০২৪ সালের ২৬ জুন থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত মাঠ পর্যায়ের তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের শতকরা ৯৫ দশমিক ৪ শতাংশ স্কুল এবং ৮৭ দশমিক ৫ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে উন্নত পানির উৎসের সুবিধা আছে। তবে মৌলিক পানি সেবার সংজ্ঞা অনুযায়ী, উন্নত পানির উৎস প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গণের ভেতরে থাকতে হয়-এই মানদণ্ড পূরণ করে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম।
মাত্র ৮৬ দশমিক ১ শতাংশ স্কুল এবং ৭০ দশমিক ৫ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান এই মানদণ্ড পূরণ করে। দেশের মাত্র ৫৫ দশমিক ৪ শতাংশ স্কুলে প্রতিবন্ধীদের উপযোগী উন্নত পানির পয়েন্টের সুবিধা রয়েছে। অপরদিকে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোয় এই হার আরও কম-মাত্র ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ।
এতে আরও বলা হয়েছে, মাত্র ১১ দশমিক ১ শতাংশ স্কুল এবং ৩৪ দশমিক ৯ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে ওয়াশ খাতে বরাদ্দ রয়েছে। ৯০ দশমিক ৬ শতাংশ স্কুল এবং ৯৮ দশমিক ৫ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে অন্তত একটি টয়লেট রয়েছে। তবে এর মান ও ব্যবহারযোগ্যতা নিয়ে ভিন্নচিত্র পাওয়া যায়।
অপরদিকে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে হাত ধোয়ার সুবিধা থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে পানি ও সাবানের অভাব রয়েছে। ফলে মাত্র ৫১ দশমিক ৭ শতাংশ স্কুল এবং ৫ দশমিক ০ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান হাত ধোয়ার মৌলিক সেবার মানদণ্ড পূরণ করতে পারছে। এতে কার্যকর স্বাস্থ্যবিধি অনুশীলন ব্যাহত হচ্ছে এবং সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের মান ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।
নারীদের মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা সুবিধাও অপর্যাপ্ত। মাত্র ২০ দশমিক ৭ শতাংশ স্কুলে কিশোরীদের জন্য পৃথক, নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট রয়েছে। মাত্র ৬ দশমিক ৯ শতাংশ স্কুল মাসিককালীন মৌলিক সেবা প্রদান করে থাকে। এসব সুবিধার ঘাটতি শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতি, অস্বস্তি ও শিক্ষায় লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য বাড়িয়ে তোলে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে যৌথভাবে স্যানিটেশন, পানি সরবরাহ ও হাত ধোয়া সুবিধা রয়েছে মাত্র ১ শতাংশ।
এর মধ্যে শহরে ৩ দশমিক ২ শতাংশ এবং গ্রামে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে এসব সুবিধা আছে। পানিপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে রাজশাহী বিভাগে ৮১ দশমিক ৯ শতাংশ এবং সবচেয়ে পিছিয়ে ময়মনসিংহ বিভাগে ৬১ দশমিক ৯ শতাংশ।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, এ প্রতিবেদনটি সরকারের নীতিনির্ধারণ কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। দেশের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে স্কুল ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ উন্নত করতে হবে।

