Logo
Logo
×

জাতীয়

‘বিপ্লব থেকে শিক্ষা না নিলে ফের বিপ্লবের শঙ্কা থাকে’

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:২৮ পিএম

‘বিপ্লব থেকে শিক্ষা না নিলে ফের বিপ্লবের শঙ্কা থাকে’

গণতন্ত্রকে কেবল নির্বাচনের প্রতিযোগিতা হিসাবে দেখা যাবে না। এর জন্য প্রয়োজন শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান, জবাবদিহিতা ও নাগরিক সমাজের সক্রিয় ভূমিকা। আত্মতুষ্ট হলেই গণতন্ত্র ভঙ্গুর হয়ে পড়বে। ইন্দোনেশিয়ার সংকট-পরবর্তী অভিজ্ঞতা এবং পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর রাজনৈতিক রূপান্তরের উদাহরণ বাংলাদেশের জন্য বড় শিক্ষা হতে পারে। বিপ্লব থেকে শিক্ষা না নিলে ফের বিপ্লবের শঙ্কা থাকে। 

রোববার ‘সংকট, সহিংস সংঘাত ও গণতন্ত্রের সংহতি: ইন্দোনেশিয়ার অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা’ শীর্ষক এক  সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) এ সেমিনারের আয়োজন করে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে সংস্থাটির মিলনায়তনে এটি অনুষ্ঠিত হয়। 

বিআইডিএসের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. একে এনামুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (অর্থ মন্ত্রণালয়) ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অস্ট্রেলিয়ার ওয়েস্টার্ন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের সহযোগী অধ্যাপক ড. জুলফান তাজুদিন। 

মূল প্রবন্ধে ড. জুলফান বলেন, ১৯৯৮ সালে প্রেসিডেন্ট সুহার্তোর পতনের মধ্য দিয়ে ইন্দোনেশিয়ায় তিন দশকের কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান ঘটে। অর্থনৈতিক মন্দা ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার সময় দেশটির অর্থনীতি ভেঙে পড়ার মুখে পড়লেও ১৯৯৯ সালে চার দশক পর প্রথম অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তবে এ সময় বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতা তীব্র আকার ধারণ করে। সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, কর্তৃত্ববাদী প্রবৃদ্ধি সাময়িক সাফল্য আনলেও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান দুর্বল হলে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ও সহিংসতার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাই গণতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ও নতুন সামাজিক চুক্তির।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, গণতন্ত্রের সৌন্দর্য হলো মতপার্থক্য ও সংঘাতকে সহিংসতা ছাড়াই সমাধান করার ক্ষমতা। কিন্তু গণতন্ত্রের সীমাবদ্ধতাও আছে। হিটলারও নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে স্বৈরশাসক হয়েছিলেন। তাই গণতন্ত্রের শক্তি বৃদ্ধির প্রক্রিয়া সব সময় চলমান রাখতে হবে। আÍতুষ্ট হওয়া যাবে না। 

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ইন্দোনেশিয়ার দুর্নীতি দমন কমিশন এতটাই শক্তিশালী ছিল যে, কর্মরত একজন মন্ত্রীকেও কারাগারে পাঠানো সম্ভব হয়েছিল। শুধু নির্বাচন কমিশন নয়, বরং নির্বাচনসংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য স্বাধীন আদালতও থাকা জরুরি।

তিনি আরও বলেন, ইন্দোনেশিয়ার অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, অভিজাত গোষ্ঠী সব সময় নতুনরূপে ফিরে আসে। জোকো উইদোদো সাধারণ মানুষ হিসেবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলেও পরে তিনি নিজের ছেলেকে সুবিধা দিয়েছেন এবং বিতর্কিত শক্তির সঙ্গে জোট করেছেন। বাংলাদেশের জন্য এখানেই বড় সতর্কবার্তা রয়েছে।

আনিসুজ্জামান আরও বলেন, দক্ষিণ কোরিয়ার ১৯৯৭ সালের আর্থিক সংকটের সময় সাধারণ মানুষ দেশকে বাঁচাতে অলংকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে টাকা জমা দিয়েছিল, যা পরবর্তী সময়ে জাতীয় সংহতির আন্দোলনে রূপ নেয়। মালয়েশিয়া আইএমএফের কঠোর শর্ত প্রত্যাখ্যান করে নিজস্ব পথে টিকে ছিল। আজও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো বিকল্প আঞ্চলিক সহায়তা ব্যবস্থার মাধ্যমে একে অপরকে সহযোগিতা করে। তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া ও মালয়েশিয়ার মতো দেশগুলো এক সময় স্বৈরশাসকের অধীনে থাকলেও কঠিন সংগ্রামের মাধ্যমে গণতন্ত্র সংহত করেছে এবং জাতীয় ঐক্যের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

ইন্দোনেশিয়া ও পূর্ব এশিয়ার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, সহিংস পরিবর্তন বা বিদ্রোহের পর সংঘাত এবং গণপিটুনি একটি স্বাভাবিক চিত্র। ইন্দোনেশিয়ায়ও এমন হয়েছে, তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা কমে এসেছে। সংঘাত সমাজজীবনের অংশ, কিন্তু যখন তা সহিংস রূপ নেয়, তখনই সমস্যা দেখা দেয়।

তিনি বলেন, গণতন্ত্রের সৌন্দর্য এখানেই যে তার সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও এটি মতপার্থক্য ও সংঘাতকে সহিংসতা ছাড়াই সমাধানের পথ তৈরি করে। মানুষের গণতন্ত্রে আকৃষ্ট হওয়ার মূল কারণ এর এই অন্তর্নিহিত মূল্য। তবে গণতন্ত্রেরও দুর্বলতা আছে। উদাহরণস্বরূপ, হিটলারও নির্বাচনের মাধ্যমেই ক্ষমতায় এসে স্বৈরশাসক হয়ে ওঠেন। তাই গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার প্রক্রিয়া চলমান রাখতে হবে, আত্মতুষ্ট হওয়া যাবে না। বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো গণতন্ত্র শেষ হয়ে যাওয়ার মতো কোনো বিষয় নয়, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। 

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম