Logo
Logo
×

জাতীয়

ন্যাম ভবনে পড়ে আছে সাবেক সংসদ সদস্যদের মালামাল, চিঠি দিয়েও মিলছে না সায়

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০২৫, ০১:৩৯ পিএম

ন্যাম ভবনে পড়ে আছে সাবেক সংসদ সদস্যদের মালামাল, চিঠি দিয়েও মিলছে না সায়

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়। ওইদিন শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে আশ্রয় নেন। তার সঙ্গে সঙ্গে অনুগত সংসদ-সদস্যরাও পালিয়ে যান। এরপর থেকেই ফাঁকা হয়ে যায় সংসদ-সদস্যদের জন্য সংরক্ষিত ন্যাম ভবনের ফ্ল্যাটগুলো। তবে তাদের সবার ব্যবহৃত আসবাবপত্র ও মালামাল রয়ে যায়। 

এ অবস্থায় সংসদ সচিবালয়ের পক্ষ থেকে কয়েক দফা সাবেক সংসদ-সদস্যদের নিজস্ব মালামাল ও আসবাবপত্র নিয়ে যাওয়ার জন্য চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ যোগাযোগ করেননি। ফলে সবকিছু এখনো পড়ে আছে যার যার ফ্ল্যাটে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সরকার পতনের খবরের পর ছাত্র-জনতা সংসদ ভবন, গণভবনে ভাঙচুর চালানোর পাশাপাশি এসব ভবনেও ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। এরপর থেকেই এক-দেড় মাস দুয়েকজন কর্মচারী ছাড়া সেখানে কেউ ছিলেন না। সব ফ্ল্যাট খালি অবস্থায় পড়ে থাকে। কিছুদিন পর সেনাবাহিনী, আনসারসহ আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তাদের অনুকূলে তিন নম্বর ভবনের ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া শুরু হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়,  ৫ আগস্টের আগের দিন পর্যন্ত বিকালে ভবনের নিচে শিশুদের খেলাধুলা করতে দেখা যেত। ছিল এলাকার লোকজন ও রাজনৈতিক নেতাদের আনাগোনা। ছিল সাধারণ মানুষের পদচারণা। এসব ভবনেই সংসদ-সদস্যদের আত্মীয়স্বজন ছাড়াও বিভিন্ন তদবির নিয়ে ছুটে আসতেন নেতাকর্মীরা। গণ-অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বদলে যায় ভবনগুলোর চিত্র। চকচকে এই এলাকায় নেমে আসে নীরবতা, রাত হলে যা ভূতুড়ে রূপ নিত। 

তবে সম্প্রতি রাতে এসব ভবনের কয়েকটি ফ্ল্যাটে নিয়মিতই আলো জ্বলতে দেখা যাচ্ছে। তাই কৌতূহলী অনেকেরই মনে প্রশ্ন উঠেছে-সংসদ এখন অকার্যকর, তাহলে সংসদ-সদস্যদের নামে থাকা এসব ভবনে এখন থাকছেন কারা।


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নাখালপাড়ায় অবস্থিত তিনটি ন্যাম ভবনে ৪৯টি ফ্ল্যাট আছে। ৫ আগস্টের পর এই তিনটি ভবনের সব ফ্ল্যাটেই তালা ঝুলছে। শেরেবাংলা নগরের মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে রয়েছে ছয়টি ভবন। সবমিলিয়ে এখানে ফ্ল্যাট রয়েছে ২১৬টি। ৫ আগস্টের পর বেশ কয়েক মাস এসব ভবনের কোনো ফ্ল্যাটেই আলো জ্বলেনি। তবে সম্প্রতি দুটি ভবনের বেশ কিছু ফ্ল্যাটে সন্ধ্যার পর আলো জ্বলতে দেখা গেছে। এর মধ্যে তিন নম্বর ভবনে রয়েছে ৩৬টি ফ্ল্যাট। এসব ফ্ল্যাটে সেনাবাহিনী, আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা থাকছেন। আর ছয় নম্বর ভবনের পাঁচটি ফ্ল্যাটে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কর্মরত রাষ্ট্রপক্ষের পাঁচজন প্রসিকিউটর তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে থাকছেন। এর বাইরে বাকি ফ্ল্যাটগুলোয় তালা ঝুলছে।

সংসদ সচিবালয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ মুহূর্তে সংসদ নেই। কার্যক্রমও নেই। ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। সংসদ সচিবালয় ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত সংসদ ভবন সংস্কারে হাত দিয়েছে। এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই তারা এ কাজ শেষ করতে চান। 

পাশাপাশি নির্বাচিত নতুন সংসদ-সদস্যদের আবাসনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে ন্যাম ভবনের ফ্ল্যাটগুলোও প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে চায় সংসদ সচিবালয়। এজন্য গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সংসদ সচিবালয়ের চিঠি চালাচালি চলছে। প্রয়োজনীয় সবুজ সংকেত মিললে ন্যাম ভবনের ফ্ল্যাটগুলোয়ও সংস্কারে হাত দেবে সংসদ সচিবালয়। তবে এক্ষেত্রে সাবেক সংসদ-সদস্যদের ব্যবহৃত মালামাল ও আসবাবপত্রের ভাগ্যে কী ঘটবে, তা এখনো ঠিক করতে পারেননি তারা।

ন্যাম ভবনের দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়। জানতে চাইলে এ বিষয়ে সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারা কথা বলতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, এ ভবনগুলোর দেখভালের দায়িত্ব সংসদ সচিবালয়ের ছিল। তবে সংসদ-সদস্যরা চলে যাওয়ার পর গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কাছে এই দায়িত্ব চলে গেছে। তাই ভবনগুলোর ব্যবস্থাপনায় এখন মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি নিয়ে কিছু সরকারি কর্মকর্তা এখানে বসবাস করছেন।

তিনি আরও বলেন, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের ন্যাম ভবনের কিছু ফ্ল্যাটে সেনাবাহিনী, আনসার ও পুলিশের অস্থায়ী ক্যাম্প রয়েছে। এছাড়া কিছু ফ্ল্যাটে বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটররা বসবাস করছেন। বাকি ফ্ল্যাটে সাবেক সংসদ-সদস্যদের ব্যবহৃত মালামাল ও আসবাবপত্র রয়েছে। তাদের এগুলো নিয়ে যাওয়ার জন্য একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু একজনও তাদের জিনিসপত্র নিতে আসেননি।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম