আইএলও-ইউনিসেফের প্রতিবেদন
বাংলাদেশে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম কমেছে
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১৩ জুন ২০২৫, ১২:০৩ এএম
প্রতীকী ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বাংলাদেশে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমের হার হ্রাস পেয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ও ইউনিসেফ। বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক যৌথ প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে ২০১৩ সালে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমের হার ছিল ৩ দশমিক ২ শতাংশ, যা ২০২২ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৭ শতাংশে। এতে প্রায় ১০ লাখ ৭০ হাজার শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে সরে এসেছে।
তবে একই সময়ে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সি শিশুদের মধ্যে শ্রমে যুক্ত থাকার হার ৮ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ৮ দশমিক ৯ শতাংশে দাঁড়ায়। ‘ক্ষতিকর কাজে’ যুক্ত বৃহত্তর শিশুশ্রমের হার ২০১৩ সালে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ ছিল, ২০২২ সালে তা বেড়ে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ হয়। কৃষি খাতে ৬১ শতাংশ, সেবা খাতে (গৃহস্থালি কাজ বা বাজারে পণ্য বিক্রি) ২৭ শতাংশ এবং শিল্প খাতে (খনি ও উৎপাদন শিল্প) ১৩ শতাংশ শিশু শ্রম দিচ্ছে।
‘চাইল্ড লেবার গ্লোবাল এস্টিমেটস ২০২৪, ট্রেন্ডস অ্যান্ড দ্য রোড ফরওয়ার্ড’ শীর্ষক এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিগত এক দশকে স্কুলে ভর্তি হার বৃদ্ধি, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি সম্প্রসারণ এবং সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে এ অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, শ্রমে যুক্ত অধিকাংশ শিশু কাজ করছে অনানুষ্ঠানিক খাতে, যেখানে তারা দীর্ঘ সময় ধরে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। এই বাস্তবতা পরিবর্তনে বাংলাদেশে জরুরি প্রয়োজন স্থায়ী, দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই প্রচেষ্টা।
এদিকে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী প্রায় ১৩ কোটি ৮০ লাখ শিশু বিভিন্ন ধরনের শ্রমের সঙ্গে যুক্ত ছিল। এর মধ্যে ৫ কোটি ৪০ লাখ শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যুক্ত রয়েছে, যা তাদের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করছে।
বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, আমরা ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম কমানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জনকে স্বীকৃতি দিই। এটি প্রমাণ করে যে, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর যৌথ প্রচেষ্টা, সমাজের সচেতনতা এবং পরিবারকেন্দ্রিক সহায়তা শিশুশ্রম নিরসনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
তিনি আরও বলেন, তবে এখনো শিশুশ্রমের মোট পরিমাণ অপরিবর্তিত থাকায় আমাদের দায়িত্ব শেষ হয়নি। সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হবে, শিক্ষাব্যবস্থাকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে হবে এবং শিশুশ্রম প্রতিরোধে আরও বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
প্রতিবেদনে সরকার ও অংশীদারদের প্রতি ইউনিসেফ ও আইএলও কয়েকটি সুপারিশ করেছে। এগুলো হলো অসহায় পরিবারগুলোর জন্য জীবনচক্রভিত্তিক সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থায় বিনিয়োগ করতে হবে, যাতে তাদের শিশুশ্রমের ওপর নির্ভর করতে না হয়। এর মধ্যে সর্বজনীন শিশু ভাতার মতো সামাজিক সুরক্ষা নেটওয়ার্ক অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
শিশু সুরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে যাতে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুদের চিহ্নিত করা যায়, শিশুশ্রম প্রতিরোধ করা যায় এবং তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী সহায়তা দেওয়া যায়। এছাড়া প্রতিটি শিশুর জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা এবং প্রাপ্তবয়স্ক ও তরুণদের জন্য সম্মানজনক কাজ ও উৎপাদনশীল অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরি করা দরকার।
