Logo
Logo
×

বাতায়ন

ইকো-ফ্রেন্ডলি স্টার্টআপ: টেকসই অর্থনীতির নতুন দিগন্ত

সাইদুল ইসলাম

সাইদুল ইসলাম

প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৭:৫৮ পিএম

ইকো-ফ্রেন্ডলি স্টার্টআপ: টেকসই অর্থনীতির নতুন দিগন্ত

ছবি: সংগৃহীত

একুশ শতকের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ দূষণ। একদিকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, অন্যদিকে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা, এই দ্বন্দ্বে আজ মানবসভ্যতা নতুন সমাধানের সন্ধান করছে। প্রচলিত শিল্পায়ন ও উৎপাদন পদ্ধতি পরিবেশের জন্য যেমন ক্ষতিকর প্রমাণিত হয়েছে, তেমনি এর ফলে টেকসই উন্নয়নও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে “ইকো-ফ্রেন্ডলি স্টার্টআপ” বা পরিবেশবান্ধব উদ্যোক্তা উদ্যোগ এখন বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।

ইকো-ফ্রেন্ডলি স্টার্টআপ কী?

ইকো-ফ্রেন্ডলি স্টার্টআপ হলো এমন ব্যবসায়িক উদ্যোগ, যা পরিবেশ সংরক্ষণ, প্রাকৃতিক সম্পদের সাশ্রয় এবং নবায়নযোগ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। এ ধরনের স্টার্টআপ কেবল মুনাফার দিকে নয়, বরং সমাজ ও পরিবেশের ওপর ইতিবাচক প্রভাব রাখার দিকেও সমান গুরুত্ব দেয়।

বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট

বিশ্বব্যাপী ইকো-ফ্রেন্ডলি স্টার্টআপ এখন দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইউরোপ ও আমেরিকায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্য উৎপাদন, কার্বন-নিউট্রাল সেবা ও বৈদ্যুতিক যানবাহনভিত্তিক স্টার্টআপ বিপুল সাফল্য পেয়েছে।

চীনে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, সবুজ কৃষি, সোলার টেকনোলজি ও স্মার্ট সিটি ডেভেলপমেন্টকে ঘিরে অসংখ্য ইকো-স্টার্টআপ গড়ে উঠেছে। রাষ্ট্রীয় নীতি, ভর্তুকি ও বিনিয়োগ চীনের এ সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।

ভারতে শহরভিত্তিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, প্লাস্টিক রিসাইক্লিং এবং টেকসই কৃষি প্রযুক্তিতে অসংখ্য তরুণ উদ্যোক্তা কাজ করছেন।

এই প্রবণতা প্রমাণ করে যে টেকসই অর্থনীতির দিকে অগ্রসর হতে হলে পরিবেশবান্ধব স্টার্টআপই হতে পারে ভবিষ্যতের চালিকাশক্তি।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও লবণাক্ততা প্রতিনিয়ত আমাদের অর্থনীতি ও জীবনযাত্রায় প্রভাব ফেলছে। এই প্রেক্ষাপটে ইকো-ফ্রেন্ডলি স্টার্টআপ কেবল একটি বিকল্প নয়, বরং অপরিহার্য সমাধান। বাংলাদেশে ইতিমধ্যেই কিছু সম্ভাবনাময় উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে:

সোলার এনার্জি ও নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ প্রকল্প, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও রিসাইক্লিং স্টার্টআপ (যেমন– প্লাস্টিক, ই-বর্জ্য), জৈব সার ও পরিবেশবান্ধব কৃষি উদ্যোগ, ইকো-ট্যুরিজম (গ্রামীণ ও প্রাকৃতিক সম্পদভিত্তিক পর্যটন), সবুজ নির্মাণ সামগ্রী (Green Building Materials)

যদিও এই উদ্যোগগুলো এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, তবে সঠিক সহায়তা ও নীতিমালা পেলে এগুলো জাতীয় অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখতে পারবে।

চ্যালেঞ্জসমূহ:

বাংলাদেশে ইকো-ফ্রেন্ডলি স্টার্টআপ বিস্তারে বেশ কিছু বাধা রয়েছে:

১. পর্যাপ্ত বিনিয়োগের অভাব

২. গবেষণা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে সীমাবদ্ধতা

৩. পরিবেশবান্ধব পণ্যের বাজার সচেতনতার ঘাটতি

৪. নীতিগত সহায়তা ও প্রণোদনার ঘাটতি

সম্ভাবনা ও করণীয়:

ইকো-ফ্রেন্ডলি স্টার্টআপ বিস্তারে বাংলাদেশ কিছু কৌশল নিতে পারে-

-- সরকারি নীতিগত সহায়তা: কর ছাড়, ভর্তুকি ও সহজ ঋণ প্রদান।

-- সবুজ অর্থায়ন (Green Finance): ব্যাংক ও ভেঞ্চার -- ক্যাপিটাল ফান্ডকে ইকো-স্টার্টআপে বিনিয়োগে উৎসাহিত করা।

-- তরুণ উদ্যোক্তা তৈরি: বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে সবুজ উদ্যোক্তা কর্মশালা চালু করা।

-- প্রযুক্তি স্থানান্তর: চীন, ইউরোপ ও অন্যান্য দেশের সাথে যৌথ উদ্যোগে কাজ করে নতুন প্রযুক্তি আনা।

-- বাজার সচেতনতা বৃদ্ধি: ভোক্তাদের পরিবেশবান্ধব পণ্য ব্যবহারে উৎসাহিত করতে গণসচেতনতামূলক প্রচারণা।

অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও পরিবেশ সংরক্ষণের মধ্যে ভারসাম্য আনার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো ইকো-ফ্রেন্ডলি স্টার্টআপ। এটি শুধু কর্মসংস্থান তৈরি করবে না, বরং দীর্ঘমেয়াদে পরিবেশ রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। বাংলাদেশের তরুণ উদ্যোক্তাদের এই খাতে এগিয়ে আসতে হবে। আর সরকার ও বেসরকারি খাতকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে হবে। একমাত্র তখনই আমরা টেকসই অর্থনীতির দিকে এগিয়ে যেতে পারব এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সবুজ ও নিরাপদ পৃথিবী রেখে যেতে পারব।

লেখক: নির্বাহী পরিচালক, সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিজিডি) ও পিএইচডি গবেষক

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম