Logo
Logo
×

বাতায়ন

গাজার আকাশে শান্তির সূর্য উঠবে তো?

তোফায়েল গাজালি

তোফায়েল গাজালি

প্রকাশ: ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ০৫:৩৫ পিএম

গাজার আকাশে শান্তির সূর্য উঠবে তো?

ফাইল ছবি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাম ইতিহাসে যেভাবেই লেখা হোক না কেন গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে তার মধ্যস্থতা নিঃসন্দেহে এক কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। বহু বছরের রক্তক্ষয়, বোমার শব্দ, ধ্বংসস্তূপ আর শরণার্থী শিবিরের করুণ বাস্তবতার ভেতর হঠাৎ করেই একটুখানি আলো দেখা দিয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন রয়ে গেছে, এ আলো কি স্থায়ী সূর্যোদয়ের প্রতিশ্রুতি, নাকি এক ক্ষণস্থায়ী আলোর ঝলক?

মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তির পথ বরাবরই বন্ধুর। ইতিহাস যেন এখানে বারবার নিজেকে পুনরাবৃত্তি করে যুদ্ধ থামায়, কিন্তু ঘৃণার আগুন  নেভাতে পারে না। 

ফরাসি সংবাদ সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৭৯ বছর বয়সী ট্রাম্প, যিনি প্রায়ই কূটনৈতিক বাস্তবতা উপেক্ষা করার জন্য সমালোচিত। তিনি কি সত্যিই দীর্ঘমেয়াদি এ সংকটে সময় ও ধৈর্য দিতে পারবেন? নাকি এ চুক্তিও ইতিহাসের আরেকটি ক্ষণস্থায়ী অধ্যায় হয়ে থাকবে?

মার্কিন কূটনীতিক ও মধ্যপ্রাচ্য শান্তি-আলোচনার অভিজ্ঞ ব্যক্তি অ্যারন ডেভিড মিলার বলেন, ‘ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে সমঝোতা করানো যেমন কঠিন, হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনার ব্যবস্থা করা তার চেয়েও জটিল। ট্রাম্প এমন কিছু করেছেন যা আগে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট সাহস করেননি। নেতানিয়াহুর মতো শক্তিশালী নেতার ওপর এমন একটি ইস্যুতে চাপ প্রয়োগ করা, যেটিকে তিনি নিজের রাজনৈতিক জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে করেন।’

তবে মিলারের সতর্কতা স্পষ্ট, চুক্তির বাস্তবতা এখনো পুরোপুরি সামনে আসেনি; শান্তির কাগজে স্বাক্ষর পড়েছে, কিন্তু মাঠে সেই শান্তি এখনও পরীক্ষাধীন।

গাজার আকাশে এখন আপাত নীরবতা। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানায়, শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে অস্ত্রবিরতি কার্যকর হয়েছে। ইতোমধ্যে কিছু জিম্মি মুক্তিও পেয়েছেন। 

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইসরাইল পৌছেছেন আজ। টাইমস অব ইসরাইলের সরাসরি সম্প্রচারে দেখা যায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে লাল গালিচায় স্বাগত জানিয়েছে ইসরাইল। এ সময় বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুসহ উপস্থিত সবার সঙ্গে তিনি কুশল বিনিময় করেন। এরপরে ট্রাম্প ইসরাইলের পার্লামেন্ট নেসেটের উদ্দেশে রওনা হন। নেসেটের উদ্দেশ্যে গাড়িতে ওঠার পর ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুকে বেশ কিছুক্ষণপারস্পরিক আলাপচারিতায় ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। নেসেটে ভাষণ দেওয়ার পর ট্রাম্প যুদ্ধবিরতি চুক্তির শীর্ষ সম্মেলনে সহ-সভাপতিত্ব করতে মিশরে যাবেন।

দীর্ঘ বছরের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান চুক্তির মধ্য দিয়ে গাজা উপত্যকায় শান্তির আলো দেখা দিতে শুরু করেছে। এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে প্রেক্ষাপটে ইসরাইলের পার্লামেন্ট নেসেটে ট্রাম্পের বক্তব্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।

ইতিহাস সাক্ষী, গত দুই দশকে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টই ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের স্থায়ী সমাধান আনতে পারেননি। কিন্তু এবার ট্রাম্প সেই ইতিহাসে এক ভিন্ন পৃষ্ঠা খুলেছেন। যদিও পাতার কোণে এখনো জমে আছে রক্ত ও ধুলোর দাগ।

চুক্তির পর গাজার ধ্বংসস্তূপে ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। শহরটি যেন ধীরে ধীরে নিজের দিকে ফিরে তাকাচ্ছে। কিন্তু সেই ফিরতি যাত্রা কতটা নিরাপদ  কেউ জানে না।

রিপাবলিকান দলের এই ধনকুবের প্রেসিডেন্টের স্বপ্ন আরও বড়। তিনি চান তার প্রথম মেয়াদের সেই ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ড’ আবার প্রাণ ফিরে পাক। আব্রাহাম চুক্তির মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মরক্কো ইসরায়েলকে কূটনৈতিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছিল। এবারও এ চুক্তির দায়িত্বে আছেন তার জামাতা জ্যারেড কুশনার যিনি প্রথম আব্রাহাম চুক্তির অন্যতম স্থপতি।

ট্রাম্প তার কূটনৈতিক খেলায় কঠোরতা ও কোমলতা দুটোই কৌশলে ব্যবহার করেছেন। একদিকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর প্রতি ব্যক্তিগত চাপ, অন্যদিকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানসহ আরব ও মুসলিম নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক সবকিছুই এই চুক্তির পথে ভূমিকা রেখেছে।

অ্যারন ডেভিড মিলারের ভাষায়, ‘ট্রাম্প নিঃসন্দেহে একটি সিদ্ধান্তমূলক ভূমিকা রেখেছেন। কিন্তু চুক্তির প্রথম ধাপ পেরিয়ে এখনো বহু প্রশ্ন ঝুলে আছে। হামাস কি অস্ত্র নামাবে? ইসরায়েল কি প্রতিশ্রুতি রাখবে? আর জনগণ কি শান্তির প্রতিশ্রুতিতে নতুন করে বিশ্বাস করতে পারবে?

ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যাঁ নোয়েল বারো বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় ও আরব পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের পর এক গভীর সত্য উচ্চারণ করে বলেন, ‘যুদ্ধবিরতি মানে এখনো শান্তি নয়।’

হয়তো সত্যিই তাই। গাজার আকাশে এখনো ঝুলে আছে এক অদৃশ্য ছায়া, ভয় ও আশার মেঘ। শুধু সময়ই বলবে, এই আকাশে সত্যিই শান্তির সূর্য উঠবে কি না!

সূত্র : উর্দু নিউজ

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম