মবের বিরুদ্ধে সব দল
সবাইকে শান্ত ও সতর্ক থাকার আহ্বান
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
প্রতীকী ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদিকে হত্যায় জড়িতদের বিচারের পাশাপাশি প্রতিটি মবের বিচারের দাবি জানিয়েছে বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল। দলগুলোর নেতারা বলেছেন, প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন ‘মব সন্ত্রাস’ পুরো জাতিকে বিভক্ত করেছে। সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে তারা বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে একটি গোষ্ঠী। এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। যে কোনো অপশক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকারও আহ্বান জানানো হয়েছে। শুক্রবার পৃথক বিবৃতিতে ফ্যাসিবাদবিরোধী দলগুলোর নেতারা এসব কথা বলেন।
ফেসবুকের ভেরিফায়েড পেজে এক পোস্টে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। এ দেশের প্রতিটি নাগরিকের জানমালের দায়িত্ব বর্তমান সরকারের। শহীদ হাদির মৃত্যুতে শোকার্ত জাতি যখন সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া করছে তার আত্মার মাগফিরাতের জন্য, তখন ডেইলি স্টার-প্রথম আলোসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বরেণ্য সাংবাদিক নূরুল কবীরসহ আরও অনেকের ওপর হীন হামলা সংঘটিত হলো। বিএনপির মহাসচিব লেখেন, দেশের সংকটময় মুহূর্তকে কাজে লাগানোর জন্য যারা অপেক্ষা করে, এরা এই দেশের শত্রু। তারা অপেক্ষা করে সংকটের। আজ এই দুঃখ ভারাক্রান্ত মুহূর্তকে এরা ধ্বংসাত্মক কাজে রূপান্তর করল। এই সন্ত্রাসের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সরকারকে এই ঘটনার পুরো দায়িত্ব নিতে হবে।
তিনি উল্লেখ করেন, হাদি নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন। জনগণের দরজায় গিয়েছিলেন। নির্বাচন হবে। বাংলাদেশে একটি গণতান্ত্রিক জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। হাদির আততায়ীর বিচার এবং প্রতিটি মব সন্ত্রাসের বিচার করতে হবে। এক বছরের বেশি সময়কাল ধরে বিভিন্ন মব সন্ত্রাস পুরো জাতিকে বিভক্ত করেছে।
তিনি আরও লেখেন, স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকারের পতনের পর সরকারের প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে গণতান্ত্রিক, স্থিতিশীল এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠন করা। সব পক্ষকে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। অনতিবিলম্বে সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে।
এক বিবৃতিতে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, সর্বস্তরের দেশপ্রেমিক জনগণ শরিফ ওসমান হাদির রুহের মাগফিরাত কামনা করছে। একই সঙ্গে তার জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থতার বিষয়টি নিয়ে গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করছে। এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, শহীদ ওসমান হাদির শাহাদতের পর দেশের ছাত্র-জনতার মধ্যে যে ক্ষোভ ও আবেগ সৃষ্টি হয়েছে, তা ন্যায্য ও বোধগম্য। কিন্তু এই ক্ষোভকে পুঁজি করে কোনো পক্ষ যদি নিজেদের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করে, তা কখনোই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা স্পষ্টভাবে আশঙ্কা প্রকাশ করছি-এ ধরনের কর্মকাণ্ড পরিকল্পিতভাবে আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা হতে পারে।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ এবং জনগণের কণ্ঠস্বর প্রকাশের অন্যতম প্রধান মাধ্যম। আমাদের মনে রাখতে হবে, গণমাধ্যমের ওপর হামলা মানে গণতান্ত্রিক চর্চা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও আইনের শাসনের ওপর আঘাত।
জামায়াতের আমির আরও বলেন, যে কোনো ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত হওয়া বাঞ্ছনীয়। নইলে মূল লক্ষ্য অর্জন ব্যর্থ হতে পারে। দেশের এ সংকটময় সময়ে সংযম, দায়িত্বশীলতা ও জাতীয় ঐক্যই হতে পারে সামনে এগিয়ে যাওয়ার একমাত্র পথ। সব দেশপ্রেমিক ছাত্র-জনতা ও নাগরিককে ধৈর্য, সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার আহ্বান জানান তিনি।
আরেক বিবৃতিতে গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট অবিলম্বে খুনি এবং তাদের পেছনের শক্তির বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানান। একই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন স্থানে এই হত্যাকাণ্ডকে ব্যবহার করে চলমান উচ্ছৃঙ্খলতার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান নেতারা। এই জোটে রয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), এবি পার্টি ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। জোটের শীর্ষ নেতা নাহিদ ইসলাম, হাসনাত কাইয়ূম ও মজিবুর রহমান মঞ্জু যৌথ বিবৃতিতে বলেন, পরাজিত ও পলাতক হাসিনার খুনি-সন্ত্রাসী, ভারতীয় আগ্রাসনবাদী ও দেশের মধ্যে লুকিয়ে থাকা দোসররা মিলে দেশে একটা চরম অরাজকতা তৈরি করতে চায়। দেশে একটা গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি তারা তৈরি করতে চায়। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কার পরিষদ বানচাল করে এ দেশে অগণতান্ত্রিক তৃতীয় শক্তির উত্থান করতে চায়। তাদেরই উসকানিতে একাধিক পত্রিকা অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কূটনীতিকের বাসভবনে হামলা হয়েছে। দেশবরেণ্য সাংবাদিক ও জুলাইয়ের অন্যতম পক্ষশক্তি নূরুল কবীরকে নাজেহাল করা হয়েছে। এসব ঘটনায় দোষীদের চিহ্নিত করে দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানান তারা।
পৃথক বিবৃতিতে গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ওসমান হাদির মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার এবং ছায়ানট ভবনে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাট, নিউএজ সম্পাদক নূরুল কবীরকে হেনস্তা করার ঘটনায় ক্ষোভ ও নিন্দা জানান। তিনি বলেন, এসব সন্ত্রাসী ঘটনার দায়দায়িত্ব সরকারকে বহন করতে হবে।
শরিফ ওসমান হাদির মর্মান্তিক মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে দেশবাসীকে চরম ধৈর্য ও সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব। গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যার ঘটনায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। পতিত ফ্যাসিস্ট ও তাদের দেশি-বিদেশি দোসররা নৈরাজ্য তৈরি করে নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক উত্তরণের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছে। তাদের রুখে দেওয়ার জন্য জনগণের বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। এছাড়াও ইসলামী আন্দোলনসহ আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দল বিবৃতি দিয়ে সবাইকে ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলার পাশাপাশি ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
