প্রধান উপদেষ্টা মূল দলিল থেকে বহু দূরে সরে গেছেন: বিএনপি
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:৫৬ পিএম
ফাইল ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর আগে আদেশের সারসংক্ষেপে স্বাক্ষর করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
তবে বিএনপি বলছে, সংবিধান অনুসারে রাষ্ট্রপতির আদেশ জারির ক্ষমতা নেই, তিনি শুধু অধ্যাদেশ জারি করতে পারেন।
প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পর নিজ বাড়িতে ডাকা এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এর আইনি বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। সাধারণ প্রজ্ঞাপন, নোটিফিকেশন হলে এই প্রশ্ন তুলতাম না। একইসঙ্গে সংবিধান সংস্কার পরিষদ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে দলটি। তাদের দাবি, সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠনের কোনো এজেন্ডা ঐকমত্য কমিশনে ছিল না।ফলে এ নিয়ে কোনো আলোচনাও হয়নি।
তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা মূল দলিল থেকে বহু দূরে সরে গেছেন।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, কারণ জাতীয় সনদে তিনি স্বাক্ষর করেছেন এবং এ ভাষণের মাধ্যমে তা তিনি লঙ্ঘন করেছেন। আপাতত এটুকুই আমার প্রতিক্রিয়া।
তবে জুলাই সনদ লঙ্ঘন কীভাবে হয়েছে- এই বক্তব্যের কোনো ব্যাখ্যা দেননি এই বিএনপি নেতা।
বিএনপি বলছে, সংবিধান অনুসারে রাষ্ট্রপতির আদেশ জারির ক্ষমতা নেই, তিনি শুধু অধ্যাদেশ জারি করতে পারেন।
দুপুর আড়াইটায় জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা ভাষণ দিয়ে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে এক সঙ্গে আয়োজনের ঘোষণা দেন।
এদিন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করেন, সেখানে গণভোট কী প্রশ্ন থাকবেন তা তুলে ধরা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনে গণভোটের আয়োজন করা হবে। অর্থাৎ জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে মিলিয়ে ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে একই দিনে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। এতে কোনোভাবেই সংস্কারের লক্ষ্য ব্যাহত হবে না। নির্বাচন আরও উৎসবমুখর ও সাশ্রয়ী হবে। গণভোটের আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় আইন উপযুক্ত সময়ে প্রণয়ন করা হবে।
তিনি বলেন, গত ৯ মাস ধরে রাষ্ট্র গঠনের জন্য জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেছে। সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ ৩০টি বিষয়ে একমত হয়েছে দলগুলো। এটি ভবিষ্যত রাজনীতির জন্য আশাব্যঞ্জক। এজন্য কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
ড. ইউনূস আরও বলেন, জুলাই সনদের আলোকে আমরা গণভোটের ব্যালটে উপস্থাপনীয় প্রশ্নও নির্ধারণ করেছি। আমি প্রশ্নটি এখন আপনাদের সামনে পাঠ করে শোনাচ্ছি। প্রশ্নটি হবে এরকম : আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ এবং জুলাই জাতীয় সনদে লিপিবদ্ধ সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত নিম্নলিখিত প্রস্তাবগুলোর প্রতি আপনার সম্মতি জ্ঞাপন করছেন?
ক) নির্বাচনকালীন সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়ার আলোকে গঠন করা হবে।
খ) আগামী সংসদ হবে দুই কক্ষ বিশিষ্ট। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১০০ জন সদস্য বিশিষ্ট একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে এবং সংবিধান সংশোধন করতে হলে উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অনুমোদন দরকার হবে।
গ) সংসদে নারীর প্রতিনিধি বৃদ্ধি, বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার ও সংসদীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সীমিতকরণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি, মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও স্থানীয় সরকার-সহ বিভিন্ন বিষয়ে যে ৩০টি প্রস্তাবে জুলাই জাতীয় সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমত হয়েছে সেগুলো বাস্তবায়নে আগামী নির্বাচনে বিজয়ী দলগুলো বাধ্য থাকবে।
ঘ) জুলাই সনদে বর্ণিত অন্যান্য সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুসারে বাস্তবায়ন করা হবে। গণভোটের দিন এই চারটি বিষয়ের ওপর একটিমাত্র প্রশ্নে আপনি ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোট দিয়ে আপনার মতামত জানাবেন।
এর আগে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশে স্বাক্ষর করেছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন। বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি এই আদেশে স্বাক্ষর করেন।
স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠক সন্ধ্যায়
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠক ডেকেছেন। সন্ধ্যা ৭টায় এই বৈঠক হবে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে।
বৈঠকের বিষয়ে তথ্য দিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে যে ভাষণ দিয়েছেন বৈঠকে তা নিয়ে আলোচনা করা হবে। পরে দলের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হবে।
