Logo
Logo
×

রাজনীতি

ভারতের দাদাগিরি বন্ধ করতে হবে: মির্জা ফখরুল

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ০১:২৯ পিএম

ভারতের দাদাগিরি বন্ধ করতে হবে: মির্জা ফখরুল

মহানন্দার পাড়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর/ছবি-সংগৃহীত

পদ্মাসহ একাধিক নদ-নদী অসম পানিবণ্টন চুক্তির কুফল ভোগ করছে। শুকিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের একাধিক প্রধান নদী। সঙ্গে বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙনে ঘরবাড়ি হারাচ্ছেন হাজারো মানুষ। নাব্যতা সংকট ও ভাঙনকবলিত মানুষের দুর্দশার প্রতিবাদে ‘চলো যাই ভাই, পদ্মা বাঁচাই’— স্লোগানে চাঁপাইনবাবগঞ্জে মহাসমাবেশের আয়োজন করেছে বিএনপি। 

সেই সমাবেশের আগে মহানন্দার পাড় পরিদর্শনে গিয়েছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেখানে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি জানান, বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেশের স্বার্থ, বিশেষ করে পানিবণ্টন চুক্তিতে ন্যায্যতা বিধানকে সামনে রেখে কাজ করবে। সঙ্গে ভারতের দাদাগিরি বন্ধ করতে চেষ্টা করবে।

তিনি বলেন, ‘পদ্মার পানি আমরা পাচ্ছি না আপনারা জানেন। ২০২৬ সালে চুক্তিটা শেষ হবে। এটা শেষ হলে কী আসবে তা আমরা জানি না। সবসময় যে সমস্যা হয়েছে, গঙ্গার পানি ফারাক্কায় আটকে দিয়ে আমাদের বাংলাদেশের একটা বিরাট, উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের বিরাট অংশকে মরুভূমিতে পরিণত করা হয়েছে। ছোট ছোট নদী খাল বিল শুকিয়ে গেছে। জীবন জীবিকা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। তাদের সঙ্গে কথা বলার পরেও এই পানিবণ্টনের বিষয়ে ভারতের আগ্রহ দেখা যায়নি।’ 

তিনি জানান, জিয়াউর রহমানের পানিবণ্টন চুক্তির পর থেকে ন্যায্য পানির অংশ পায়নি বাংলাদেশ, ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালে চুক্তি করেছিলেন। তার ফলে আমরা কিছু পানি পাই। এরপর আবার যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক নিয়মিত হয়নি। এগুলো আমাদের বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

ন্যায্য পানির অংশ পাওয়ার দাবি তুলতেই চাপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী হারুনুর রশীদের আয়োজনে পদ্মা বাঁচাও আন্দোলনে নেমেছে বিএনপি। ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ, তিনটা প্রধান নদী পদ্মা মেঘনা যমুনা, পদ্মার পানি আটকে দিয়ে আমাদের দেশের মানুষের জীবন জীবিকাকে আটকে দেওয়া হয়েছে। সেজন্যেই আমাদের আজকে যেখানে আন্দোলন, হারুন সাহেবের নেতৃত্বে শুরু হয়েছে ‘পদ্মা বাঁচাও আন্দোলন’, সে আন্দোলনের অংশ হিসেবে আমরা এখানে এসেছি। আমরা মানুষের মধ্যে জাগরণ সৃষ্টি করতে চাই। গ্যাঞ্জেস ব্যারেজ রাজবাড়ীতে করা গেলে মধ্যাঞ্চলসহ দক্ষিণাঞ্চল-উত্তরাঞ্চলের বিরাট উপকার হবে। এটাই আমরা জনগণের সামনে বলতে চাই, তাদের সচেতন করে তুলতে চাই। এই আন্দোলনটা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে চাই।’ 

তিনি বাংলাদেশকে টিকিয়ে রাখতে নদী রক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, ‘এখন যে ক্লাইমেট চেঞ্জের যে বিষয়টা, প্রকৃতি পরিবর্তনের যে ব্যাপারটা হচ্ছে, নদীগুলোকে যদি বাঁচাতে না পারি, পরিবেশকে যদি রক্ষা করতে না পারি, তাহলে এই দেশকে টিকিয়ে রাখাটা ইকোলজিকালি খুব কঠিন হয়ে যাবে।’ 

ফখরুল জানান, এই কাজটা করতে হলে নির্বাচিত সরকার থাকা প্রয়োজন। তিনি বলেন, ‘আমার দেশের স্বার্থ আমাকে দেখতে হবে। প্রত্যেকটা দেশ তার স্বার্থ দেখবে। এখানে আমাদের দায়িত্ব হবে যে সরকারই আসুক, জনগণকে পাশে রেখে চাপ সৃষ্টি করে তারা এই দাবিগুলোকে আদায় করবেন। তবে নির্বাচিত সরকার না থাকলে সেটা এই গুরুত্বটা পায় না, শক্তিও পায় না। অথবা হাসিনার মতো যদি জোর করে দখল করে তাহলেও সেটা হয় না।’ 

বিএনপি মহাসচিব জানান, তার দল ক্ষমতায় এলে প্রাধান্য পাবে বিষয়টি, ‘আমরা আশা করি বিএনপি যদি জনগণের ভোটে আসতে পারে, তাহলে নিঃসন্দেহে এটা টপ প্রায়োরিটি পাবে, এবং বিশেষ করে গ্যাঞ্জেস প্রকল্প, ফারাক্কার ইস্যু যেটা আছে, অন্যদিকে তিস্তা ব্যাপারটা এগুলোতে আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেব। আমরা শতভাগ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এটাই আমাদের রাজনীতি। আমাদের সীমান্তে হত্যা, ব্যালেন্স অফ ট্রেড ঠিক করা এগুলোই  আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি।’ 

সঙ্গে ভারতকেও দাদাগিরি বন্ধ করতে চাপ দেওয়া হবে। ফখরুল বলেন, ‘বেশি গুরুত্ব দিতে চাই, আমাদের ওপর দাদাগিরি বন্ধ করা। আমরা চাই যে আমাদের প্রতিবেশী দেশ, তারা চাইলেই আমাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে পারে এবং আমি মনে করি ১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে তারা আমাদের সহযোগিতা করেছেন, তারা বেশি করে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করা দরকার। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিগত সরকারের সময়ে আমরা যা দেখেছি, তারা সব নিয়ে গেছেন, বাংলাদেশকে কিছু দেননি, তারা বাংলাদেশকে চাপে ফেলেছেন উলটো, এটাই আওয়ামী লীগ সরকারের ব্যর্থতা। ওদের মন্ত্রীদের বক্তব্য আপনারা শুনেছেন, দেনদরবার করতে যায় ভারতে, স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের কথা বলে, এইভাবে তারা পুরো বিষয়টাকে নিচে নামিয়ে দিয়েছে, ইকুয়াল ফুটিংয়ের কথা বলতে হবে, সমমর্যাদা রাখতে হবে, এই দেশের স্বার্থটাকে সবার আগে গুরুত্ব দিতে হবে।’

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম