‘আগন্তুক নই’—মাতৃভূমিতে ফখরুলের আবৃত্তির প্রশংসায় সবাই
এটিএম সামসুজ্জোহা, ঠাকুরগাঁও
প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:৩৬ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে যখন নিত্যনতুন উত্তাপ, ঠিক তখনই এক ভিন্ন আবহে ধরা দিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ঠাকুরগাঁও শহরের তাঁতিপাড়া মহল্লায় তার পৈতৃক বাসভবনের বারান্দায় বসে তিনি আবৃত্তি করলেন কবি আহসান হাবীবের কালজয়ী কবিতা ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’।
ব্যক্তিগত মুহূর্তের এ দৃশ্যায়ন মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, যা কেবল রাজনৈতিক কর্মী নয়—সাধারণ মানুষের মধ্যেও ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই আবৃত্তির মাধ্যমে বিএনপি মহাসচিব একটি গভীর রাজনৈতিক বার্তা দিলেন—নিজের জন্মভূমি এবং সমগ্র দেশের সঙ্গে তার আত্মিক ও অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ককে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করলেন।
জানা যায়, মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় নিজ জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে সাংগঠনিক ও পারিবারিক ব্যস্ততার মাঝে একান্ত মুহূর্তে মির্জা ফখরুল এ কবিতাটি আবৃত্তি করেন।
ঠাকুরগাঁও চেম্বার অব কমার্সের সাবেক পরিচালক মামুন উর রশিদ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মির্জা ফখরুল ঠাকুরগাঁও জেলা আইনজীবী সমিতির হলরুমে মতবিনিময় অনুষ্ঠান শেষে বাসভবনে ফেরেন। এরপর অধ্যাপনা জীবনের সহকর্মী, নাট্যকর্মী এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার প্রাক্কালে তিনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ কবিতাটি আবৃত্তি করেন।
সাধারণত রাজনৈতিক সমাবেশে কর্মীদের উদ্দীপ্ত করতে তিনি কবিতার পঙক্তি ব্যবহার করেন। তবে নিজ বাসভবনের বারান্দায়, স্বজনদের মাঝে তার এ আবৃত্তি অনেকের চোখে ব্যক্তিগত অনুভূতির এক অকপট প্রকাশ হিসেবে ধরা দিয়েছে।
তিনি কবিতার যে অংশটুকু আবৃত্তি করেছেন, তার ছন্দে নিজ ভূমির প্রতি কবির একাত্মতা স্পষ্ট:
‘আমি কোনো আগন্তুক নই, আমি
ছিলাম এখানে, আমি স্বাপ্নিক নিয়মে
এখানেই থাকি আর
এখানে থাকার নাম সর্বত্রই থাকা–
সারা দেশে।
আমি কোনো আগন্তুক নই। এই
খর রৌদ্র জলজ বাতাস মেঘ ক্লান্ত বিকেলের
পাখিরা আমাকে চেনে
তারা জানে আমি কোনো অনাত্মীয় নই।’
‘শেকড়ের বার্তা’ দেখছেন বিশ্লেষকরা
দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতার কণ্ঠে এমন জনপ্রিয় দেশাত্মবোধক কবিতা আবৃত্তিকে নানা দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাদের অভিমত, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যখন প্রায়শই নেতাদের ‘জনবিচ্ছিন্নতা’ নিয়ে আলোচনা হয়, তখন মির্জা ফখরুলের এ পদক্ষেপ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক মনতোষ কুমার দে এ বিষয়ে যুগান্তরকে বলেন, এটি অত্যন্ত প্রতীকী একটি কাজ। এর মাধ্যমে তিনি বোঝাতে চাইলেন যে, দলের শীর্ষ পদে থেকেও তিনি মাটির মানুষ এবং দেশের সঙ্গে তার সম্পর্ক কোনো সাময়িক আগন্তুকের নয়, বরং চিরন্তন। এ বার্তাটি তার দলের কর্মী ও সাধারণ মানুষের কাছে এক ধরনের 'রুটস' বা শেকড়ের বার্তা পৌঁছে দেয়।
পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন, বিএনপি মহাসচিবের এই আবৃত্তি নিজ ভূমির সঙ্গে তার অবিচ্ছেদ্য বন্ধনকেই নতুন আঙ্গিকে সামনে আনল, যা জাতীয় রাজনীতিতে এক ভিন্নমাত্রা যোগ করবে।
