Logo
Logo
×

রাজনীতি

কোটি টাকা খরচের রীতি ভেঙে জনগণের দেওয়া টাকায় ভোট করছিলেন হাদি

নাজমুশ শাহাদাৎ

নাজমুশ শাহাদাৎ

প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:২৩ পিএম

কোটি টাকা খরচের রীতি ভেঙে জনগণের দেওয়া টাকায় ভোট করছিলেন হাদি

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা-৮ আসনের আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী প্রচারণা জোরালভাবে চালিয়ে যাচ্ছিলেন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি।

এতে নিজের পকেট বা ফান্ড থেকে কোনোরকম খরচ না করলেও উলটো গণমানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন তরুণ এই নেতা। গত বেশ কয়েকদিনে পেয়েছেন ২১ লাখ টাকার বেশি।

বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় এ তথ্য জানান হাদি।

তবে এর ঠিক একদিন পরই (১২ ডিসেম্বর) জুমার পর রাজধানীর বিজয়নগরে নির্বাচনি প্রচারণাকালে দুর্বৃত্তের গুলির শিকার হন ধাকা-৮ আসনের এই স্বতন্ত্র প্রার্থী। মাথায় গুলিবিদ্ধ হওয়া হাদি এখন সংকটাপন্ন অবস্থায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এর আগে, তার ফেসবুক পেজে প্রকাশিত ওই ভিডিওতে হাদি জানান, চলতি ডিসেম্বর মাসের প্রথম ১০ দিনে মানুষ তাকে বিভিন্নভাবে ও উপায়ে টাকা-পয়সা পাঠিয়েছেন। যার পরিমাণ ৬ লাখ ২৪ হাজার ৮৮০ টাকা। 

এ নিয়ে নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করার পর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত গণমানুষের কাছ থেকে হাদি মোট পেয়েছেন ২১ লাখ ৬৫ হাজার ২৯২ টাকা।

এর আগে, গত ৩০ নভেম্বর রাতে নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে নির্বাচনি ক্যাম্পেইনের জন্য সমর্থকদের পাঠানো অনুদানের ২১ দিনের হিসাব প্রকাশ করেন হাদি।

সেখানে ওসমান হাদি লেখেন, গত ৭ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত তার নির্বাচনী ক্যাম্পেইনে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১৩ লাখ ৩১ হাজার ৫৫৭ টাকা; বিকাশে ১ লাখ ৯৮ হাজার ৯৮৯ টাকা; নগদে ৬ হাজার ২৮ টাকা; রকেটে ৩ হাজার ৮৩৮ টাকা। সব মিলিয়ে মোট ১৫ লাখ ৪০ হাজার ৪১২ টাকা জমা পড়েছে।

তিনি জানান, নির্বাচন শেষে ডোনারদের গোপনীয়তা বজায় রেখে ব্যাংক স্টেটমেন্টসহ পূর্ণ হিসাব প্রকাশ করা হবে।

এর আগে, এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা গত ৬ ডিসেম্বর দেওয়া এক পোস্টে বলেছেন, আমাদের দেশে নির্বাচনে একজন প্রার্থী আইনগতভাবে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা খরচ করতে পারেন। কিন্তু বাস্তবে আমরা দেখি প্রায় কেউই এ আইন মানেন না। শোনা যায়- একজন প্রার্থী ২০, ৫০, এমনকি ১০০ কোটি টাকা পর্যন্ত খরচ করেন। অথচ নির্বাচন কমিশনের কাছে গিয়ে বলেন মাত্র ২৫ লাখ টাকা ব্যয় করেছেন। ফলে প্রায় সবারই সংসদে যাওয়ার যাত্রাটাই শুরু হয় আইন ভাঙা ও মিথ্যা বলার মাধ্যমে। 

এর আগে গত ৭ নভেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক গোলটেবিল আলোচনায় সদ্য পদত্যাগ করা উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছিলেন, ১০-২০ কোটি টাকা না থাকলে নির্বাচন করা সম্ভব নয়। তাই যাদের কালোটাকা আছে, হয়ত তারাই শুধু নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে।

নির্বাচনে টাকার অত্যধিক ব্যবহার প্রসঙ্গে আসিফ আরও বলেন, ‘এই বাস্তবতায় আসলে যাদের কালোটাকা আছে, তাদেরই সুযোগ আছে আরকি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার।...সে জন্য আমাদেরও বারবার চিন্তা করতে হয়, ইলেকশন করব কী করব না। করলে কীভাবে করব। মানুষ টাকা ছাড়া ভোট দেবে কি না।’

মূলত, দেশের চলমান রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রেক্ষাপটে এমন ধারণাই বদ্ধমূল হয়ে আছে দেশের জনসাধারণের মন-মননে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে তথা ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে দেশের তরুণ নেতৃত্বের নতুন বাংলাদেশ ধারণা এবং নতুন ধারার রাজনৈতিক চর্চার ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। যার একটা জ্বলন্ত উদাহরণ শরিফ ওসমান হাদি।

চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, হুমকি-ধমকি ও পেশীশক্তির রাজনীতি পরিহার করে, এমনকি নিজের পকেটের টাকা খরচের বদলে আবাল বৃদ্ধ বণিতার ভালোবাসায় সিক্ত হয়েও যে রাজনীতি ও নির্বাচন করা যায়- সেটাই তিনি করে দেখিয়ে দিলেন ইতোমধ্যেই।

ঘটনাপ্রবাহ: ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ


আরও পড়ুন

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম