Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

দেড় মাস অভিভাবকশূন্য

এফবিসিসিআই নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা

Icon

সাদ্দাম হোসেন ইমরান

প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

এফবিসিসিআই নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা

প্রায় দেড় মাস ধরে অভিভাবকশূন্য দেশের শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)। ফলে দেশের ব্যবসায়ীদের প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা প্রদানে ব্যর্থতাসহ নেতৃত্ব সংকটে পড়েছে সংগঠনটি। অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে এফবিসিসিআই’র পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচন নিয়েও।

বর্তমানে পরিচালনা পর্ষদ বা প্রশাসক কোনোটিই না থাকায় এফবিসিসিআই’র কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। ‘সিগনেটরি পাওয়ার’ না থাকায় গত শনিবার পর্যন্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সেপ্টেম্বর মাসের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে পারেনি এফবিসিসিআই। সংগঠনটিতে স্থায়ী কর্মকর্তা, স্টাফ এবং আউটসোর্সিং অফিসারসহ প্রায় ৮০ জন কর্মরত।

গত বছরের ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে এফবিসিসিআই’র সভাপতি মাহবুবুল আলম শারীরিক অসুস্থতার কারণে পদত্যাগ করেন। এরপর তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ওই বছর ১১ সেপ্টেম্বর প্রতিযোগিতা কমিশনের সদস্য ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব হাফিজুর রহমানকে প্রশাসক হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তার দায়িত্ব ছিল ১২০ দিনের মধ্যে একটি নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত পর্ষদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করা। চলতি বছরের জুনের মাঝামাঝি নাগাদ পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করে এফবিসিসিআই নির্বাচন বোর্ড। তফশিল অনুযায়ী, গত ৭ সেপ্টেম্বর নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। পরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচনের সময়সীমা আরও ৪৫ দিন পেছানো হয়। এদিকে একাধিকবার বাড়ানোর পর প্রশাসক হিসাবে হাফিজুর রহমানের মেয়াদ শেষ হয় গত ১০ সেপ্টেম্বর। প্রশাসকের অবর্তমানে এফবিসিসিআই’র দাপ্তরিক দায়িত্ব পালন করছেন সংগঠনটির মহাসচিব আলমগীর।

এ বিষয়ে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, এফবিসিসিআই’র পরিচালনা পর্ষদ গঠন নিয়ে জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। প্রথম তফশিল ঘোষণার পর আদালতে রিট হয়। এ কারণে নির্বাচন আয়োজন করা যায়নি। এর মধ্যে প্রশাসকের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। তাছাড়া বাংলাদেশের সব চেম্বার-অ্যাসোসিয়েশন এফবিসিসিআই’র সদস্য হওয়ায় সেখানকার মনোনীত নেতারা এফবিসিসিআই’র ভোটার হন। বেশির ভাগ চেম্বার-অ্যাসোসিয়েশন এখনো এজিএমের মাধ্যমে নিজেদের প্রতিনিধি ঠিক করতে পারেনি। আবার অনেক চেম্বার-অ্যাসোসিয়েশনে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়েছে। এ ধরনের চেম্বার-অ্যাসোসিয়েশনের প্রশাসক ভোটার হতে পারেন না বিধায় ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা যাচ্ছে না। তিনি জানান, নতুন প্রশাসক নিয়োগের কাজ চলছে। দু-একদিনের মধ্যে নতুন প্রশাসক নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি হবে। নতুন প্রশাসক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ঠিক করবে।

সাধারণ ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, অতীতে এফবিসিসিআইকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে। গণভবনের পছন্দের প্রার্থীই সভাপতি হয়েছেন। তারা সাধারণ ব্যবসায়ীদের কল্যাণের চেয়ে সরকারপ্রধানকে তুষ্ট করতে চাইতেন। সে কারণে অনেক সময় ব্যবসা-বাণিজ্যবিরোধী নীতি প্রণয়ন করলেও তারা বিরোধিতা করতেন না। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দীর্ঘদিন যাবৎ পরিচালনা পর্ষদ না থাকায় ব্যবসায়ীরা তাদের দাবি-দাওয়া সরকারের কাছে যথাযথ চ্যানেলে উপস্থাপন করতে পারেনি। সরকার নিয়োজিত প্রথম প্রশাসক নির্বাচন আয়োজনের চেয়ে অন্য কাজে ব্যস্ত ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এখন নতুন প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হলেও তিনি জাতীয় নির্বাচনের আগে এফবিসিসিআই নির্বাচন দিতে পারবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কারণ তফশিল ঘোষণার পর ভোটার তালিকা হালনাগাদসহ আনুষঙ্গিক কাজ রয়েছে। অর্থাৎ সহসাই এফবিসিসিআই’র সংকট উত্তরণের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে এফবিসিসিআই’র সভাপতি পদে নির্বাচন করতে আগ্রহী বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল যুগান্তরকে বলেন, এফবিসিসিআই’র সংস্কার প্রক্রিয়ায় ধীরগতি দেখা যাচ্ছে। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এক বছর যাবৎ নেতৃত্বশূন্য সেটা সরকারের ব্যর্থতাই বলা যায়। এই এক বছর নেতৃত্বশূন্য থাকায় ব্যবসায়ীরা তাদের সুখ-দুঃখ নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে পারছে না। সরকারও বাণিজ্যসংক্রান্ত নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে জবাবদিহিতার আওতায় আসতে চাচ্ছে না বলে মনে হয়। তিনি আরও বলেন, সরকার যদি অন্য কোনো কারণে বা এজেন্ডা বাস্তবায়নে নির্বাচন দীর্ঘায়িত করতে চায় তাহলে তাদের কোনো না কোনোদিন এর জবাব দিতে হবে।

আরেক পদপ্রার্থী রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানিকারক সমিতির সভাপতি আব্দুল হক বলেন, এফবিসিসিআই সম্পূর্ণ অকার্যকর থাকায় নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে ব্যবসায়ীরা প্রতিনিধিত্ব করতে পারছে না বিধায় বেসরকারি খাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্যসংক্রান্ত নীতির সংকট সমাধানে সাধারণ ব্যবসায়ীরা কার কাছে যাবে, সরকারও নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে কার মতামত নেবে, সে বিষয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। ফলে সরকারকে একতরফা অনেক নীতি প্রণয়ন করতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সরকারের তরফে বাণিজ্য সংগঠনগুলোতে সংস্কারের নানা কথা বলা হলেও বাস্তবে তা দেখা যাচ্ছে না। যা শিল্পের ওপর সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম