|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আজ হাটবার। শীতের সবজি বিক্রি করতে যাবে আক্কাস আলী। খুব ব্যস্ত। বিক্রি শেষ হলে তার ৭ বছরের ছেলে আবু কাশেমকে নিয়ে যাবে পৌষের মেলায়। তাই বাপ-বেটা রওয়ানা দেয় হাটের উদ্দেশ্যে। ছোট কাশেম এতটা পথ বাবার পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে ক্লান্ত। হাটে এসে অন্য মানুষদের চাউলের বস্তার ওপরে ঢ্যাবস দিয়ে বসে হাঁপাচ্ছে। বারবার বাবার দিকে তাকাচ্ছে কখন বিক্রি শেষ হবে আর তাকে নিয়ে মেলায় যাবে।
আবু কাশেমের ছোট মনে খুব উত্তেজনা। তাকে খুব অস্থির লাগছে দেখতে। ভাবছে বাবা কেন বুঝতে পারছে না চিনির তৈরি হাতি, ঘোড়া, বাঘ সব শেষ হয়ে যাবে। কটকটি আর জিলাপিও ঠান্ডা হয়ে যাবে। বাবার দিকে তাকিয়ে সে মনে মনে বলে, সূর্য তো ডুবে গেল বাবা। আক্কাস আলী বুঝতে পারে ছেলের মন। বলে ‘বাজান সবজির ডালিতে উইঠা বসেন, আমি দৌড়াতে দৌড়াতে মেলায় নিয়া যাই।’ ডালিতে সত্যি সত্যি উঠে বসে আবু কাশেম। সঙ্গে সঙ্গে দৌড় এবং জোরে হাঁটার মাঝামাঝি একটা গতিতে ছুটতে থাকে আক্কাস আলী। ছেলেকে বলে, ‘রূপকথার পক্ষীরাজ আমাগো দেইখ্যা লজ্জা পাইব বাজান।’ অনেক দূর থেকে দেখা যায় পৌষের মেলার আলোকিত এলাকা রঙিন হয়ে আছে। কুপি, হারিকেন আর হ্যাজাকের আলোতে স্বপ্নের কোনো দৃশ্য মনে হচ্ছে। যেখানে শুধু আলো আর আলো, কোনো অন্ধকার নেই। আবু কাশেম কল্পনাপ্রবণ শিশু। কল্পনায় কোথায় যেন হারিয়ে গেল।
মেলায় পৌঁছে আক্কাস আলীর হঠাৎ মনে হয় আবু কাশেমকে সে হারিয়ে ফেলেছে। ডালি মাথায় নিয়েই জোরে জোরে বলতে থাকে, ‘কাশেম বাজান ও বাজান’। কাশেম নিঃশব্দে বসে থাকে, ভাবে বাবা ওর সঙ্গে খেলা করছে। পরিচিত একজন এগিয়ে এসে হাসতে হাসতে বলে, আক্কাস ভাই কাশেম তো তোমার মাথায় ডালির মধ্যে। অন্য একজন কাশেমকে ডালি থেকে নামিয়ে দেয় আর বলতে থাকে, শয়তান ইবলিশ চুপচাপ বইসা আছে, তুই বলবি না আমি তোমার মাথার ওপরে।
অনেকক্ষণ সবার ঝারি ঝাপটা খেয়ে এইমাত্র গরম জিলাপি খেতে পেয়েছে কাশেম। সঙ্গে চিনি দিয়ে বানানো বাঘ আর ঘোড়া। মায়ের জন্যও টোপলা করেছে একটা।
এবার বাড়ি ফিরতে চায় আক্কাস আলী। বটগাছের নিচে বেঞ্চে বসে চা ফুঁ দিয়ে ঠান্ডা করে ছেলেকে দুই-একবার খাওয়ায়। এত ভালোবাসা পেয়ে ছোট আবু কাশেম বাবার শরীর ঘেঁষে বসে। ফিরতি পথে গ্রামের আরও কয়েকজন সঙ্গী হয়। মাথার ওপরে পৌষের ঘোলা চাঁদ কুয়াশা জড়িয়ে সঙ্গে সঙ্গে আসছে। বাড়ির কাছাকাছি আসতেই আবু কাশেমের মনে পড়ে মা তো কেরোসিন তেল আনতে বলেছিল, আনা হয় নাই।
ছোট কাশেম চাঁদের আলোতে মায়ের কাছে বসে খটখটিতে ভাগ বসায় আর বলে, ‘মা আমি তো বুঝলাম না, তেল কেনার কথা কে জানি ভুলায়ে দিল আমারে।’ মা হেসে বলে, ‘এমন ফকফকা চান্দের আলো তো কুপি জ্বালাইলে কইমা যাইত বাজান।’
