|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আজ টুকটুকিদের বাড়িতে ইঁদুর ধরার জন্য ফাঁদ কেনা হয়েছে। ফাঁদটা খুব মনোযোগ দিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখল সে। ফাঁদের ভেতর খাবার রেখে ক্ষুধার্ত ইঁদুরকে বোকা বানানোর ব্যাপারটায় কষ্ট পাচ্ছে সে। ইঁদুররা কত ক্ষুধা নিয়েই না খেতে এসে ধরা পড়বে ভাবতেই বুকের ভেতরে কেমন ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে ওর।
রাতে ঘুমিয়ে হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালাকে স্বপ্নে দেখল, যার বাঁশির সুরে মুগ্ধ হয়ে শহরের সব ইঁদুররা পিছু নিয়েছে। আর টুকটুকি জানালা দিয়ে দেখছে তাদের চলে যাওয়া।
টুকটুকিদের শহরে কয়েকদিন থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে। মা বলছিল, পৌষের বৃষ্টির সঙ্গে শীতও নেমে আসে। সত্যিই শীত লাগছে ওর, তাই দাদির নরম শাড়ি দিয়ে বানানো কাথায় মুড়ি দিয়ে আরও কিছুক্ষণ শুয়ে থাকতে ইচ্ছা হচ্ছিল। কিন্তু ফাঁদে আটকে পড়া ইঁদুরের অস্থিরতা দেখে ও আর শুয়ে থাকতে পারছিল না। টুকটুকি দেখছিল কাচের পাল্লাটা বন্ধ আর ঝড়ের মেঘের মতো ছাই রঙের ইঁদুরটা কেমন গুটিসুটি হয়ে ভেতরে বসে আছে। খুব মায়া লাগছিল টুকটুকির। ইঁদুরের দিকে তাই সে তাকিয়ে ছিল কিছুক্ষণ। টুকটুকিকে দেখে ইঁদুরটা কাচের পাল্লায় ভর দিয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করল। হয়তো ইঁদুরটি ভাবছে তার পরাধীনতা আর টুকটুকির স্বাধীনতার কথা। মনে হলো কাকুতি মিনতি করে ছেড়ে দিতে বলছে।
ইঁদুর এত সুন্দর দেখতে! ইঁদুরের দাঁত সুন্দর হয়। এজন্য ছোটবেলায় পড়ে যাওয়া দাঁত ইঁদুরের গর্তে ফেলতে বলতেন দাদি। কিন্তু ইঁদুরের চোখ যে এত মায়াকাড়া হয়, এর আগে কেউ তা বলেনি। সে খুব অবাক হয়ে দেখছিল-ইঁদুরের চোখ দুটো যেন দাদির আঙুরা সোয়েটারের বোতামের মতো। মানুষের মতো ওদের কর্ণিয়া দেখা যায় না। তবুও টুকটুকির কোনো অসুবিধাই হচ্ছে না; ওর অনুভূতি বুঝতে।
তাকিয়ে থাকতে থাকতে ইঁদুরটাকে আদর করতে ইচ্ছা করছিল ওর। ইচ্ছাটাকে পূর্ণ করতে বা ইঁদুরটাকে মুক্ত করতে যেই না ফাঁদের দরজাটা একটু ফাঁক করেছে অমনি সে নিমেষে পালিয়ে গেল। তবুও খুব শান্তি লাগছিল টুকটুকির। ভাবল এ পৃথিবী তো সবার। সব প্রাণীরাই তাই বেঁচে থাকুক। আর তারা যেন মায়ের বুকের উষ্ণতায় ঘুমাতে পারে।
