|
ফলো করুন |
|
|---|---|
শাহেদ আলী ছিলেন ভাষাসৈনিক, শিক্ষাবিদ, সাংস্কৃতিক সংগঠক ও লেখক। তিনি ১৯২৫ সালের ২৪ মে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার মাহমুদপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সিলেটের এমসি কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। বগুড়া আজিজুল হক কলেজের অধ্যাপক হিসাবে ১৯৫১ সালে শাহেদ আলী কর্মজীবন শুরু করেন এবং পরবর্তীকালে রংপুর কারমাইকেল কলেজ, চট্টগ্রাম সিটি কলেজ, মিরপুর বাংলা কলেজ এবং ঢাকার আবুজর গিফারী কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। সমমতাদর্শীদের নিয়ে তিনি ১৯৪৮ সালে তমুদ্দুন মজলিস গঠন করেন এবং এর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন এবং পরবর্তীকালে এর সভাপতি হন। শাহেদ আলী সক্রিয়ভাবে ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। খেলাফতে রববানী পার্টির টিকিটে তিনি ১৯৫৪ সালে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক সভার সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত তিনি আইনসভার সদস্য ছিলেন। ১৯৬০ সালে যখন ইসলামিক একাডেমি (পরবর্তীকালে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ) প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন তিনি এর সচিব নিযুক্ত হন এবং বিভিন্ন পদে বিশ বছর ওই প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত থেকে অবশেষে অনুবাদ ও সংকলন বিভাগের পরিচালক হন।
শাহেদ আলী পঞ্চাশটিরও বেশি বই লিখেছেন। তিনি বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়েছেন তার উপন্যাস ‘হৃদয় নদী’ এবং ছয়টি গল্প গ্রন্থের জন্য। গল্পগ্রন্থগুলো হলো-জিবরাইলের ডানা, একই সমতলে, শা’নযর, অতীত রাতের কাহিনী, অমর কাহিনী এবং নতুন জমিদার। তার একমাত্র নাটিকা ‘বিচার’ সুধী মহলে প্রশংসিত হয়। ১৯৪৮ সাল থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক সৈনিকের (ভাষা আন্দোলনের মুখপত্র) প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হিসাবে তিনি ঢাকা ও কলকাতার সাময়িকীতে লিখতেন। ১৯৪০ সালে তিনি যখন অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত, তখন তার প্রথম গল্প ‘অশ্রু’ মাসিক সওগাত পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তিনি প্রভাতী (১৯৪৪-৪৬), দৈনিক বুনিয়াদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন গবেষণা পত্রিকা, মাসিক সবুজ পাতা (শিশুতোষ) এবং আল্লামা ইকবাল সংসদ গবেষণা পত্রিকারও সম্পাদক ছিলেন। তার অনুবাদকর্মের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-মক্কার পথে, আত-তওহীদ, ফান্ডামেন্টালস অব ইকোনমিকস, হিস্ট্রি অব পলিটিক্যাল থিওরি, ইসলাম ইন বাংলাদেশ ইত্যাদি। তিনি বাংলা একাডেমি সম্মাননা, একুশে পদকসহ বেশকটি সম্মাননা, পুরস্কার ও পদক লাভ করেছেন। ২০০১ সালের নভেম্বরে তিনি মারা যান।
