|
ফলো করুন |
|
|---|---|
শেষ মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফর ছিলেন মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট বাবরের ১৯তম উত্তরসূরি। তিনি ১৮তম মুঘল সম্রাট মইনুদ্দীন আকবর শাহের দ্বিতীয় সন্তান। বাহাদুর শাহ জাফর ১৭৭৫ সালের ২৪ অক্টোবর দিল্লির লাল কেল্লায় জন্মগ্রহণ করেন। তার মা ছিলেন সম্রাজ্ঞী লাল বাঈ। ব্যক্তিগতভাবে বাহাদুর শাহ জাফর একজন গুণী মানুষ হিসাবে পরিচিতি পেয়েছিলেন। তিনি একজন দক্ষ ক্যালিগ্রাফার, আধ্যাত্মিক কবি ও ধর্মীয় সাধক হিসাবে সবার শ্রদ্ধাভাজন ছিলেন। তিনি যখন সিংহাসনে আরোহণ করেন, তখন তার বয়স ৬২ বছর। ১৮৩৭ সালে তার পিতার মৃত্যুর পর নানা নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে সিংহাসনে বসেন তিনি। তখন মুঘল সাম্রাজ্যের শোচনীয় অবস্থা। মুঘল কর্তৃত্ব তখন লাল কেল্লার চার দেওয়ালে বন্দি। ইংরেজরা ধীরে ধীরে তাদের কর্তৃত্ব বৃদ্ধি করে চলছিল। বাহাদুর শাহ জাফর জানতেন তার সীমাবদ্ধতার কথা। কিন্তু কিছুই করতে না পারার হতাশা ভুলে থাকতে তিনি কাব্যচর্চায় সময় কাটাতেন।
তিনি হয়তো শেষ কয়েকজন মুঘল সম্রাটের মতো ইতিহাসের পাতায় বেতনভোগী শাসক হিসাবেই হারিয়ে যেতেন। কিন্তু ইতিহাসের যুগসন্ধিক্ষণে সিপাহি বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে আসায় ইতিহাসে তিনি জায়গা করে নেন অনন্য মর্যাদায়। ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়ার মধ্য দিয়ে অগণিত মানুষের মনে জায়গা করে নেন স্বাধীনতার প্রতীক হিসাবে। যদিও এর জন্য তাকে ভোগ করতে হয়েছে সীমাহীন দুর্ভোগ, নির্যাতন; হারাতে হয়েছে সন্তান, সম্পত্তি, রাজ্য। বাহাদুর শাহ জাফর সিপাহি বিদ্রোহের নেতৃত্ব নিজের কাঁধে নেওয়ার মাধ্যমে সিপাহি বিদ্রোহ একটি রাজনৈতিক রূপ পায়। এ বিদ্রোহে তিনি সর্বতোভাবে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছিলেন। সিপাহিদের খরচ মেটাতে তিনি তার সব সম্পদ বিক্রি করে দেন। বিদ্রোহ ব্যর্থ হওয়ার পর সিপাহি-জনতার ভাগ্যে নেমে আসে অন্ধকার। ইংরেজ সেনাপতি হডসনের নেতৃত্বে একদল সৈন্য বাহাদুর শাহ জাফরকে পরিবারের সদস্যসহ গ্রেফতার করে। তার দুই পুত্র মীর্জা মুঘল ও মীর্জা খিজির সুলতান, নাতি মীর্জা আবু বকরসহ জাফরের দরবারের লোকজন এবং বিদ্রোহের পক্ষে থাকা সৈন্যদের নির্মমভাবে নির্বিচারে হত্যা করে। বাহাদুর শাহ জাফরকে জাহাজে করে পাঠিয়ে দেওয়া হয় রেঙ্গুনে। সেখানে একটি পরিত্যক্ত বাড়ির কক্ষে শুরু হয় ভারতের শেষ মুঘল সম্রাটের নির্বাসন। অবশেষে ১৮৬২ সালের ৭ নভেম্বর তিনি নশ্বর পৃথিবী থেকে বিদায় নেন।
