|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ ছিলেন বিশ্ববিখ্যাত সংগীতজ্ঞ। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামে এক সংগীত পরিবারে তার জন্ম। তার পিতা সবদর হোসেন খাঁ ওরফে সদু খাঁও ছিলেন বিশিষ্ট সংগীতজ্ঞ। ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর মায়ের নাম সুন্দরী বেগম। শৈশবে অগ্রজ ফকির আফতাবউদ্দিন খাঁর কাছে সংগীতে আলাউদ্দিন খাঁর হাতেখড়ি হয়। সুরের সন্ধানে তিনি দশ বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে এক যাত্রাদলের সঙ্গে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়াতে শুরু করেন। ওই সময় তিনি জারি, সারি, বাউল, ভাটিয়ালি, কীর্তন-এসব গানের সঙ্গে পরিচিত হন। পরে কলকাতায় গিয়ে তিনি সংগীতসাধক গোপালকৃষ্ণ ভট্টাচার্য ওরফে নুলো গোপালের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন।
সাত বছর পর নুলো গোপালের মৃত্যু হলে আলাউদ্দিন কণ্ঠসংগীতের সাধনা ছেড়ে যন্ত্রসংগীত সাধনায় নিযুক্ত হন। স্টার থিয়েটারের সংগীত পরিচালক অমৃতলাল দত্ত ওরফে হাবু দত্তের কাছে তিনি বাঁশি, পিকলু, সেতার, ম্যান্ডোলিন ইত্যাদি দেশি-বিদেশি বাদ্যযন্ত্র বাজানো শেখেন। সেই সঙ্গে তিনি লবো সাহেব নামে এক ব্যান্ড মাস্টারের কাছে পাশ্চাত্য রীতিতে এবং বিশিষ্ট সংগীতজ্ঞ অমর দাসের কাছে দেশীয় পদ্ধতিতে বেহালা শেখেন।
আলাউদ্দিন খাঁ কিছুদিন ছদ্মনামে মিনার্ভা থিয়েটারে তবলাশিল্পী হিসাবে চাকরি করেন। এরপর ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার জমিদার জগৎকিশোর আচার্যের আমন্ত্রণে তার দরবারে সংগীত পরিবেশন করতে যান। সেখানে ভারতের বিখ্যাত সরোদিয়া ওস্তাদ আহমেদ আলী খাঁর সরোদবাদন শুনে তিনি সরোদের প্রতি আকৃষ্ট হন এবং তার কাছে পাঁচ বছর সরোদে তালিম নেন। পরে ভারতখ্যাত তানসেন বংশীয় সংগীতজ্ঞ ওস্তাদ ওয়াজির খাঁর কাছে সরোদ শেখার জন্য তিনি রামপুর যান। ওস্তাদ ওয়াজির খাঁ রামপুরের নবাব হামেদ আলী খাঁর সংগীতগুরু ও দরবার-সংগীতজ্ঞ ছিলেন। আলাউদ্দিন তার কাছে দীর্ঘ ত্রিশ বছর সেনী ঘরানায় সংগীতের অত্যন্ত দুরূহ ও সূক্ষ্ম কলাকৌশল আয়ত্ত করেন। ১৯১৮ সালে নবাব তাকে মধ্যপ্রদেশের মাইহার রাজ্যে প্রেরণ করেন। মাইহারের রাজা ব্রিজনারায়ণ আলাউদ্দিন খাঁকে নিজের সংগীতগুরুর আসনে অধিষ্ঠিত করলে তিনি মাইহারে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ১৯৩৫ সালে তিনি নৃত্যশিল্পী উদয়শঙ্করের সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সফর করেন। তিনি সমাজসেবামূলক বহু কাজ করেছেন। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ‘দেশিকোত্তম’ এবং দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ‘ডক্টর অব ল’ উপাধিতে ভূষিত করে।
