|
ফলো করুন |
|
|---|---|
মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী ছিলেন সাংবাদিক ও সাহিত্যিক। ১৩০৩ বঙ্গাব্দের (১৮৯৬) ২৮ ভাদ্র সাতক্ষীরা জেলার বাঁশদহ গ্রামে তার জন্ম। তার পিতা মুনশি মোহাম্মদ ইব্রাহিম ছিলেন একজন পল্লি চিকিৎসক। তার ডাক্তারখানায় সংবাদপত্র পাঠ ও নানা বিষয়ে বিতর্ক চলত। এসব বিষয় কিশোর ওয়াজেদ আলীকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। এ থেকেই ভবিষ্যতে একজন সাংবাদিক হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন তিনি।
ওয়াজেদ আলীর শিক্ষাজীবন শুরু হয় বাঁশদহের ইংরেজি বিদ্যালয়ে। স্থানীয় বাবুলিয়া উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় থেকে বৃত্তিসহ এন্ট্রান্স পাশ করার পর তিনি কলকাতার বঙ্গবাসী কলেজে এফএ ক্লাসে ভর্তি হন। কিন্তু মওলানা আকরম খাঁর প্রভাবে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে তিনি পরীক্ষার আগে কলেজ ত্যাগ করেন এবং ব্রিটিশবিরোধী অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন। পরে তিনি সাংবাদিকতা শুরু করেন এবং ১৯২০ থেকে ১৯৩৫ সাল পর্যন্ত কলকাতায় মুসলিম মালিকানাধীন বেশকটি দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক পত্রিকা সম্পাদনা করেন। সেগুলোর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো : মোহাম্মদী, নবযুগ, সেবক, বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা, The Musalman, খাদেম, সওগাত, সহচর, বুলবুল ও সাম্যবাদী।
বিশ শতকের মধ্যভাগে প্রাঞ্জল ভাষায় প্রবন্ধ রচনা করে যেসব লেখক খ্যাতি অর্জন করেছিলেন, মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী তাদের অন্যতম। পত্রিকায় বিভিন্ন বিষয়ে লিখে তিনি খ্যাতি অর্জন করেন। দুশতাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধের লেখক ওয়াজেদ আলীর জীবদ্দশায় প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা খুবই কম। ছোট ও মাঝারি আকারের জীবনী, অনুবাদ ইত্যাদি মিলিয়ে তার আটটি গ্রন্থের সন্ধান পাওয়া যায়; সেগুলো হলো-মরুভাস্কর, স্মার্ণানন্দিনী (অনুবাদ), ছোটদের হজরত মোহাম্মদ, কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, মোহাম্মদ আলী, ডন কুইজসোটের গল্প, মহামানুষ মুহসিন ও সৈয়দ আহমদ। বাংলা একাডেমি থেকে তার রচনাবলির অংশবিশেষ দুখণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। ওয়াজেদ আলী প্রথম দিকে ইংরেজিতেও কিছু প্রবন্ধ রচনা করেছিলেন।
মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী ছিলেন মুসলিম সংস্কৃতি ও সমাজজীবনের একজন ব্যাখ্যাকার এবং একজন আদর্শবাদী সাহিত্যিক। তিনি সরকারি চাকরি পরিত্যাগ করে সাংবাদিকতা ও সাহিত্যচর্চার মাধ্যমে সমাজসেবাকে জীবনের ব্রত হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন। তিনি সমাজের নানা অসংগতি, নতুন রাজনৈতিক পটভূমিতে সমাজ ও জীবন বিকাশের ধারা এবং ভাষা ও সাহিত্যের গতিপ্রকৃতি-এসব বিষয়েও সমকালীন পত্র-পত্রিকায় গুরুত্বপূর্ণ বহু প্রবন্ধ রচনা করেছিলেন। তার রচনায় যুক্তিবাদী মননের পরিচয় স্পষ্ট। ১৯৫৪ সালের ৮ নভেম্বর নিজ গ্রামে তিনি মারা যান।
