Logo
Logo
×

সোশ্যাল মিডিয়া

বড় মেয়ে নোভাকে নিয়ে গুলতেকিনের আবেগঘন পোস্ট

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ২৮ আগস্ট ২০২৫, ০৬:৩২ পিএম

বড় মেয়ে নোভাকে নিয়ে গুলতেকিনের আবেগঘন পোস্ট

গুলতেকিন খান ও নোভা আহমেদ। ছবি ফেসবুক থেকে নেওয়া

প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ ও গুলতেকিন খান দম্পতির প্রথম সন্তান নোভা আহমেদ। গুলতেকিন বৃহস্পতিবার ফেসবুকে দুটি ছবি পোস্ট করেন। ছবির ক্যাপশনে মেয়েকে নিয়ে আবেগঘন কথা লিখেছেন। 

মেয়ের বিষয়ে তিনি লিখেন- গভীর রাতে ওর ঘুম ভেঙে যায়, চিৎকার করে কাঁদে। আমার পাশে শুয়ে থাকা আম্মা (শাশুড়ি) তাড়াতাড়ি ওকে কোলে নিয়ে হাঁটেন আর বলেন- এটা কলিক পেইন।

গুলতেকিনের পোস্টটি যুগান্তরের পাঠকদের জন্য হুবহু দেওয়া হলো- 

‘আমার প্রথম সন্তান জন্মের আগে আমি নামাজ পড়ে দোয়া করি, আল্লাহ আমার যেন একটি মেয়ে হয়। আর সে যেন দেখতে হয় আমার বড় বোনের মতো! 

বাচ্চার জন্মের সময় আমার মা আর শাশুড়ি আম্মা দুজনেই আসেন। আর আসেন আমার বড় বোন। বাচ্চা হওয়ার পর ডাক্তার বলেন, ওহ হো, লাড়কি! আমার শাশুড়ি আম্মা বলেন, আমরা মেয়েই চেয়েছিলাম! (এটা সম্ভবত বাংলাদেশের কিছু ডাক্তারদেরই পক্ষে বলা সম্ভব)!

বাচ্চাকে আমি দেখতেই পাই না! সে তার খালা, ফুফু, মামা, চাচা, দাদু ও নানুদের কোলে ঘুরতে থাকে!

আমেরিকা থেকে মেয়ের বাবা কালেক্ট কল (কালেক্ট কল হলো এক ধরনের টেলিফোন কল, যেখানে কলকারী ব্যক্তি খরচ না করে, যার কাছে কল করা হচ্ছে সেই রিসিভারের কাছ থেকে কল করার খরচ নেওয়া হয়) করেন! আমার বাবা-মা বলেন, খুব সুন্দর মেয়ে তোমাদের! সে বলে- গুলতেকিন কেমন আছে?  তারা বলেন, ও ভালো আছে। ও বলে- কিন্তু এই নিয়ে আমি তিন দিন ফোন করলাম, একদিনও তো গুলতেকিনের সঙ্গে কথা হলো না! ওকি বেঁচে আছে?

বাবার ডাকে বাচ্চা রেখে ফোন ধরি আমি, হ্যালো বলতেই ও বলে- গুলতেকিন তুমি বেঁচে আছো! আমার শুধু মনে হচ্ছিল বাচ্চা হবার সময় তুমি মারা যাবে! আমি বলি, কি যে বলো! আমি খুব ভালোভাবে বেঁচে আছি! তুমি আর ফোন করো না, আমার খুব লজ্জা লাগে!

গভীর রাতে ওর ঘুম ভেঙে যায়, চিৎকার করে কাঁদে। আমার পাশে শুয়ে থাকা আম্মা (শাশুড়ি) তাড়াতাড়ি ওকে কোলে নিয়ে হাঁটেন আর বলেন- এটা কলিক পেইন (কলিক পেইন বা কোলিক পেইন বলতে কোনো ফাঁপা অঙ্গ যেমন- পিত্তনালী বা পরিপাকতন্ত্রের পেশিবহুল দেওয়ালে সংকোচনের ফলে সৃষ্ট তীব্র ব্যথাকে বোঝায়)। গ্রাইপ ওয়াটার খেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। কখনো কখনো আহসান হাবীবও ওকে কোলে নিয়ে হাঁটে। আমি ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে থাকি তারপর আবার ঘুমিয়ে পড়ি!

বাচ্চার নাম রাখি ‘শবনম’ সৈয়দ মুজতবা আলীর বই পড়ে! আকিকা হয় ছাগল দিয়ে। পিরোজপুর থেকে শেফু আপা এসে বলেন, শর্মির নাম আমি অনেক আগেই শবনম ঠিক করেছি! ততদিনে ওর বার্থ সার্টিফিকেট এবং পাসপোর্টে ওর নাম ‘শবনম আহমেদ’। আমি বলি, ওর নাম ‘নোভা আহমেদ’।

সাত মাসের নোভাকে নিয়ে আমেরিকার দিকে রওনা দেই।

নোভা খুবই লক্ষ্মী মেয়ে, শুধু ভাত খেতে চায় না। সারা দিন নোভা আঙুর, সবধরনের মিষ্টি ফল আর চকোলেট আর লজেন্স খায়! যার জন্য নোভার দুই বছর বয়েসেই ওপরের দিকের দুটো দাঁত উঠিয়ে ফেলতে হয়। দেশে ফেরার পথে সে যে কী উচ্ছ্বসিত! বাংলাদেশের প্লেনে উঠেই বিমানের ফুল ফুল আঁকা সিট (খুব চোখে লাগার মতো বিশ্রী) দেখে বলে- দিজ সিটস আর বিউটিফুল!

দেশে ফিরে আমরা শ্যামলীতে তিনতলা একটি বাড়ি ভাড়া করি। আমাদের একান্নবর্তী পরিবার।

নোভার তখন পাঁচ বছর! দুপুরে সবাই ঘুমাচ্ছে। তখন একজন ভিক্ষুক বলে- মাগো, চাইরটা ভাত দেও খুব ক্ষুধা লাগছে!

নোভা ভাত না খুঁজে পেয়ে রেফ্রিজারেটর খুলে একটি আপেল (সেই সময়ে আমাদের কাছে মহামূল্যবান) দেয়। এরপর থেকে নোভার নাম হয়ে গেল “মাদার তেরেসা”!

নোভা খুব আস্তে কথা বলে। আমার বাসায় চা খেলেও পিঠে হাত বুলিয়ে বলে- চা-টা খুব ভালো হয়েছিল, খালা!

নোভা ও আরসাদ পিএইচডি করেছে- Georgia Institute of Technology থেকে। একবার আমি গিয়েছি আটলান্টায় ঈদের কিছুদিন পর। নোভার প্রিয় রঙের ফতুয়া, পুরোটা হাতের কাজ করা তাই দামও একটু বেশি। পরদিন ওর একজন বন্ধু আসে। নোভার ওই বন্ধুকে আমার নিয়ে যাওয়া বিভিন্ন জিনিস দেখায়। ওর বন্ধু বলে- সবচেয়ে সুন্দর হাতের কাজ করা ফতুয়াটি। নোভা সঙ্গে সঙ্গে সেটা প‍্যাকেট করে দিয়ে দেয়। বন্ধু চলে যাবার পর আমার কাছে আসে, তোমার কি মন খারাপ? আমি যে ফতুয়াটা ওকে দিয়ে দিলাম? আমি ওকে জড়িয়ে ধরে বলি, না বাবা (আর মনে মনে বলি, আমি হলে কখনো এটা করতে পারতাম না! I’m so proud of you! 

নোভা বাবা, তুমি সবসময় এরকমই থেকো!

HAPPY BIRTHDAY, baba!’    

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম