ধোনির বুদ্ধিতে সেই পাকিস্তান বধ বদলে দিয়েছিল ভারতের ক্রিকেটকেই
প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০১:২৬ পিএম
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আজ ১৪ সেপ্টেম্বর। বহুজাতিক টুর্নামেন্ট, এশিয়া কাপে ভারত আজ মুখোমুখি পাকিস্তানের। কাকতালীয়ভাবে দেড় যুগ আগে আজকের এই দিনেই এক বিখ্যাত ম্যাচ মাঠে গড়িয়েছিল, সেখানে মুখোমুখি হয়েছিল ভারত আর পাকিস্তান। ম্যাচটা বিখ্যাত, কারণ সেদিনই প্রথম ও শেষ বারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দেখেছিল অদ্ভুত নিয়মের ‘বোল আউট’ টাইব্রেকার।
সে বিশ্বকাপের আগে বিসিসিআই টুর্নামেন্টটাকে তো বটেই, ফরম্যাটটাকেও খুব একটা আমলে নেয়নি। শচীন টেন্ডুলকার, সৌরভ গাঙ্গুলী, রাহুল দ্রাবিড় কিংবা অনিল কুম্বলেদের মতো তারকাদের বাদ দিয়ে স্কোয়াড ঘোষণা; ধোনির মতো আনকোরা একজন, যার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অভিজ্ঞতাই মেরেকেটে দেড় বছরের, তাকে অধিনায়ক করে দেওয়া তো সে দিকেই ইঙ্গিত দেয়!
বিসিসিআই যেমনই ভাবুক, ধোনি বিষয়টাকে মোটেও হালকাভাবে নেননি। ফরম্যাটটা ছিল একেবারেই নতুন, এমন পরিস্থিতিতে খেলাটার খুঁটিনাটি সব কিছুতেই নজর দিচ্ছিলেন। দেখলেন, ম্যাচ টাই হয়ে গেলে ফলাফল নির্ধারণ হবে ফুটবলের পেনাল্টি শ্যুট আউটের মতো ‘বোল আউট’ টাইব্রেকারে।
বোলিং কোচ ভেঙ্কটেশ প্রসাদের সঙ্গে মিলে লেগে পড়েন কাজে। পুরো দলকে দিয়েই করান বোল আউটের অনুশীলন। খুব বেশি ‘সিরিয়াস’ মেজাজে হয়তো নয়, তবু বিষয়টা নিয়মিতই চর্চায় রাখত দলটা। মাঝে মাঝে হতো ব্যাটার গ্রুপ আর বোলার গ্রুপের মধ্যে ‘বোল আউট’ ম্যাচ।
সেখানেই দেখা গেল, প্রথাগত বোলারদের চেয়ে এক্ষেত্রে এগিয়ে ব্যাটাররা! সবচেয়ে বেশি স্টাম্পে আঘাত করছে বীরেন্দর সেহওয়াগ, রবিন উথাপ্পা আর রোহিত শর্মার ছোঁড়া বল। বিষয়টা যে ম্যাচেও কাজে লেগে যাবে, তখন কে জানত!
১৮ বছর আগের আজকের এই দিনে ঠিক লেগে গেল সে অনুশীলনটা। ডারবানে ভারত করেছিল ১৪১ রান, জবাবে পাকিস্তান ম্যাচের অনেকটা সময় এগিয়ে থেকেও কাকতালীয়ভাবে এসে থামল ১৪১ রানে। ফলাফল, খেলা গড়াল টাইব্রেকারে।
সেখানে ভারতের হয়ে বল করতে এলেন যারা, তারা হলেন– ব্যাটার বীরেন্দর সেহওয়াগ, ব্যাকআপ উইকেটরক্ষক উথাপ্পা আর স্পিনার হরভজন সিং! যাদের প্রথম দুই জনকে বল হাতে নিয়মিত দেখাই যায় না!
সেহওয়াগ যখন বল করতে এলেন, তখন দেখা গেল আরেক অদ্ভুত কাণ্ড। বোলিংয়ের সময় উইকেটরক্ষকের কাজ কী হয়? জায়গামতো গিয়ে দাঁড়ানো, এই তো? সেখানে ধোনি গিয়ে হাঁটু গেঁড়ে বসে পড়লেন উইকেটের ঠিক পেছনে, হাতটা রাখলেন উইকেটের পেছন বরাবর। সেটা কাজ সহজ করে দিয়েছিল বোলারদের।
বিষয়টা সম্পর্কে রবিন উথাপ্পা এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘এমএস (ধোনি) উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়েছিল। যা আমাদের কাজটা সহজ করে দিয়েছিল। আমাদের স্রেফ বলটা এমএস বরাবর মারতে হতো। আমরা সেটাই করেছি।’
পুরো বিষয়টা যে একটা দীর্ঘ পরিকল্পনার ফসল, তার দেখা মিলেছিল ডারবানের ওই ম্যাচে। আর পরিকল্পনায় এর অস্তিত্ব না থাকলে পরিণাম কী হতে পারে, তারও নমুনা দেখা গিয়েছিল সে ম্যাচে। পাকিস্তান তাদের প্রথাগত সব বোলার, ইয়াসির আরাফাত, ওমর গুল আর শহীদ আফ্রিদিদের পাঠিয়েছিল বোলিংয়ে, কামরান আকমল দাঁড়িয়েছিলেন উইকেট থেকে অনেক দূরে। যার ফল, পাকিস্তান একটা বলও লাগাতে পারেনি স্টাম্পে। ভারত ম্যাচটা জেতে ৩-০ ব্যবধানে। পাকিস্তানের এমন ব্যর্থতাও ধোনির বুদ্ধি আর দূরদর্শিতার মাহাত্ম্য আরও বাড়িয়ে দেয় বৈকি!
তবে আরও একটু সামনে যদি তাকানো যায়, তাহলে বুঝা যায় এই ম্যাচে জয়ের গুরুত্ব কত বেশি ছিল! ভারত সুপার এইটে খেলেছিল এ গ্রুপে। সেখানে প্রথম ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হেরে বসেছিল ধোনির দল। টুর্নামেন্টে এই একটা দলই ছিল, যাদের ভারত হারাতে পারেনি।
পাকিস্তানের বিপক্ষে ওই ম্যাচ ভারত হেরে বসলে তাদের জায়গা হতো বি গ্রুপে। সেখান থেকে সেমিফাইনালে তাদের সামনে পড়ত সেই নিউজিল্যান্ড। আর সেই ম্যাচে যদি এমন ফল হতো, তাহলে শিরোপার দেখা পাওয়াটাও অধরাই রয়ে যেত ধোনির দলের।
আধুনিক ভারতের জন্য ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ছিল এক ‘ক্যানন ইভেন্ট’। ২০০৯ সালের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপাটা ঘরে তোলা, ২০১১ সালের বিশ্বকাপ জয়, ২০১৩ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জেতা… ধোনির হাত ধরে সর্বজয়ের ভিত্তিটা গড়া হয়ে গিয়েছিল ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই।
শুধু কি ভারতের ক্রিকেট? আন্তর্জাতিক ক্রিকেটও কি বদলায়নি? সে বিশ্বকাপে সাফল্যের পর বিসিসিআই আইপিএল আনল, আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিরও রমরমা বাড়ল; বছর পাঁচেক না ঘুরতে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট এল! সব মিলিয়ে আজকের যে ক্রিকেটের রূপ দেখা যায়, তার পেছনে কলকাঠি নেড়েছে সে বিশ্বকাপ।
ধোনির বুদ্ধিতে ভারত ওই ম্যাচটা না জিতলে এত কিছু কি হতো? উত্তরটা নেতিবাচক হওয়ার সম্ভাবনাটাই হয়তো বেশি!

