Logo
Logo
×

খেলা

বাংলাদেশের প্রথম অধিনায়ককে এক বছরেই ভুলে গেল সবাই!

Icon

মোজাম্মেল হক চঞ্চল

প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:৪৬ এএম

বাংলাদেশের প্রথম অধিনায়ককে এক বছরেই ভুলে গেল সবাই!

জাকারিয়া পিন্টু/ফাইল ছবি

মাত্র এক বছরেই ব‍াত‍্য হয়ে গেছেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টু। ৩৬৫ দিনেই সবাই ভুলে গেছেন প্রয়াত বর্ষিয়ান এই ক্রীড়াবিদ ও সংগঠককে। গত বছর ১৮ নভেম্বর পরলোকে পাড়ি জমিয়েছেন জাকারিয়া পিন্টু। মঙ্গলবার ছিল তার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। কিন্তু ক্রীড়াঙ্গণে তার কোন ছাপ দেখা যায়নি। এই অধিনায়ককে বেমালুম ভুলে গেছেন সবাই। কতই না বেদনাদায়ক।

স্ত্রী আগেই গত হয়েছিলেন। ছেলে, ছেলের স্ত্রী ও নাতি-নাতনিদের নিয়েই বয়সের শেষ দিকে সময় কেটেছে জাকারিয়া পিন্টুর।

১৯৫৮ সালে ইস্ট অ্যান্ড ক্লাবের হয়ে ট্রায়ালে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৫৯-৬০ মৌসুমে যোগ দেন ওয়ান্ডারার্সে। সে বছর চ্যাম্পিয়ন হন। পরের মৌসুমে যোগ দেন মোহামেডানে। একটানা ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত সাদা কালো জার্সিতে খেলেছেন তিনি। মধ্যে ১৯৬৮ সালে পাকিস্তান জাতীয় দলে নাম লেখান। এরপর দেশ-বিদেশ ঘুরেছেন ১৯৭০ সাল পর্যন্ত। প্রতি পদে বৈষম্যের শিকার হয়ে পাকিস্তান দলে খেলা সহজ ছিল না বাঙালি ফুটবলারদের জন্য। সাদা কালো শিবিরে দীর্ঘসময়ের সবচেয়ে স্মরণীয় ছিল ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের নেতৃত্ব দেওয়া।

১৯৭১ সালের ২৩ জুন গঠিত হয় বাংলাদেশ ক্রীড়া সমিতি। সে সময় 'বাংলাদেশ ক্রীড়া সমিতি' কে স্বাগত জানিয়ে কলকাতা থেকে প্রকাশিত আনন্দবাজার পত্রিকা লিখেছিল 'আরেক মুজিব বাহিনী'। কিন্তু ভারতের মাটিতেই তাদের হামলার শিকার হতে হয়। ১৯৭১ সালের অক্টোবরে বিহারে ম্যাচ খেলতে যাওয়ার সময় হামলার শিকার হয় স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল। সে সময় 'ইনকিলাব জিন্দাবাদ' বলে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের ওপর হামলা করা হয়।

একই মাসে অক্টোবরে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের বিপক্ষে মাঠে ভারতের কিংবদন্তি ফুটবল দল। ভারতের কিংবদন্তি ফুটবলার চুনি গোস্বামীর নেতৃত্বে গোষ্ঠ পাল একাদশ নামে খেলেছিল তারা। যদিও সে ম্যাচে গোষ্ঠ পাল একাদশের বিপক্ষে জিততে পারেনি স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল। ম্যাচ হেরেছিল ৪-২ গোলে।

জীবিত থাকা অবস্থায় পিন্টু বলেছিলেন, ‘পাকিস্তান আমলে ট্রায়াল হতো করাচি বা লাহোরে। সেখানে ট্রায়াল হলে আমরা ভয়ে ভয়ে খেলতাম। বাঙালি খেলোয়াড়দের তারা নিতেই চাইত না। তারা আমাদের ঘৃণার চোখে দেখত। বলত-এলোক চাওল খাতা, কিয়া খেলতা। এর মধ্যেও আমরা পাকিস্তান দলে খেলেছি।’

পাকিস্তান দলে খুব সম্মান পেয়েছিলেন। মানুষ তাকিয়ে থাকত তাদের দিকে। বলত দেখ পাকিস্তান দলের খেলোয়াড় যায়। খেলা ছাড়ার পর সংগঠক হিসাবে অনেক দায়িত্ব পালন করেছেন জাকারিয়া পিন্টু। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সিনিয়র সহসভাপতি (২০০২ সাল) ছিলেন। ১৯৮০-৮২ পর্যন্ত জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পরিচালক (ক্রীড়া), বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তা ছিলেন।

ক্রীড়াঙ্গণে অবদানের জন্য বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠনের পক্ষ থেকে অজস্র স্বীকৃতি, সম্মাননা ও পুরস্কার পেয়েছিলেন জাকারিয়া পিন্টু। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো-১৯৯৫ সালে স্বাধীনতা পদক, ১৯৭৮ সালে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার, ১৯৯৪ সালে পিসি সরকার অ্যাওয়ার্ড এবং ২০০৫ সালে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন পুরস্কার অন্যতম। এছাড়া ১৯৯৩ সালে ঢাকা সাফ গেমসে মশাল প্রজ্বলন করে দারুণভাবে সম্মানিত হন তিনি।

সেই পিন্টু এখন অতীত। সবাই ভুলে গেলেও একমাত্র ছেলে তানভীরের দিনটি কেটেছে বিষন্নতায় । ছেলেকে নিয়ে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে গিয়েছিলেন পিতার কবর জিয়ারত করতে।

তানভীরের কথা, ‘বাবার জানাজায় কত লোক এসেছিলেন। কত প্রতিশ্রুতি ছিল। এক বছরের মধ্যেই সব যেন ধূসর। বাফুফের কোন কর্মকর্তা কিংবা কোন ফুটবলার এই সময়ে আমাদের একটিবারও খোঁজ নেয়নি। কতটা মানবতাহীন সমাজে বাস করছি আমরা’।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম