Logo
Logo
×

খেলা

‘সেভেন আপের’ এমন মার্কেটিং হয়নি কখনো!

হোসাইন মাহমুদ আব্দুল্লাহ

হোসাইন মাহমুদ আব্দুল্লাহ

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৫, ০৫:১৪ পিএম

‘সেভেন আপের’ এমন মার্কেটিং হয়নি কখনো!

ফাইল ছবি

নিজেদের ব্র্যান্ডের নামকে মুখে মুখে ছড়িয়ে দিতে কত কিছুই না করে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। কাড়ি কাড়ি অর্থ ঢালতে হয়, অনেক জনসংযোগকারী প্রতিষ্ঠানে ধরনা দিতে হয়। অথচ এসবের কিছু না করেও ২০১৪ সালের ৮ জুলাই ‘সেভেন আপ’ নামক কোমল পানীয়ের নাম ছড়িয়ে যায় বিশ্বব্যাপী। এক রাতেই যেন আজীবনের মার্কেটিং হয়ে যায় তাদের।

তবে এই মার্কেটিংয়ের পেছনে সেভেন আপের কোনো বৈপ্লবিক বিপণন কৌশলের অবদান নেই। এর পুরোটা কৃতিত্ব ব্রাজিল আর জার্মানির জাতীয় ফুটবল দলের। সেদিন ব্রাজিলের বেলো হরিজন্তের এস্তাদিও মিনেইরোতে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা আতিথ্য দিয়েছিল জার্মানদের। পরে ৯০ মিনিটের ফুটবল দ্বৈরথে ‘মেজবানদের’ কাঁদিয়ে ছেড়েছিল ইউরোপের দেশটি।

ফুটবল যাদের ধ্যান-জ্ঞান, সে ব্রাজিলকে ফুটবল খেলা ভুলিয়ে দিয়েছিল জার্মানি। সেলেসাওদের একে একে সাত গোল দিয়ে সেভেন আপকে অমর করার গল্পটাও সে রাতেই তৈরি। ৭-১ গোলের বিশাল ব্যবধানে ব্রাজিলকে হারিয়ে মারাকানার ফাইনালে জায়গা করে নেয় জার্মানরা। এরপর ফাইনালে অতিরিক্ত সময়ে মারিও গোটশের গোলে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনাকে টপকে চতুর্থবারের মতো বিশ্বকাপ জয় করে দলটি।

ম্যাচের পর ক্রন্দনরত ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার দাভিদ লুইজকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন আরেক ডিফেন্ডার থিয়াগো সিলভা। ছবি: সংগৃহীত

তবে মারাকানার সেই ফাইনালের চেয়েও বিশ্বকাপে সাড়া জাগানো ম্যাচ ছিল ব্রাজিল-জার্মানি সেমিফাইনাল। ২০০২ সালের পর আর বিশ্বকাপ জেতেনি ব্রাজিল। ঘরের মাঠে এক যুগের বিশ্বকাপখরা কাটানোর মোক্ষম সুযোগ। শিরোপা থেকে মোটে দুই ম্যাচের দূরত্বে দাঁড়িয়ে সেলেসাওরা।

গ্যালারির ৬২ হাজার সমর্থক আর বিশ্বজোড়া কোটি ব্রাজিল-ভক্ত অপেক্ষায় ছিল উদ্দাম জোগো বোনিতোর ছন্দ দেখবে বলে। কিন্তু বিধি বাম!

১১ মিনিটে থমাস মুলারের গোল দিয়ে শুরু যান্ত্রিক জার্মানদের গোল উৎসব। ২৩ থেকে ২৯–মাত্র সাত মিনিট। এই সাত মিনিটে যা ঘটল, তা যেন কিংবদন্তির ‘মারাকানাজ্জোকেও’ ছাড়িয়ে গেল।

২৩ মিনিটে মিরোস্লাভ ক্লোসা, ২৪ ও ২৬ মিনিটে টনি ক্রুসের জোড়া আর ২৯ মিনিটে সামি খেদিরার গোলের পর শোকে স্তব্ধ হয়ে যায় মিনেইরো। গ্যালারিতে আবালবৃদ্ধবনিতার ফুঁপিয়ে কান্নার দৃশ্য দেখা যাচ্ছিল টিভি পর্দায়। ৫-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় জার্মানি।

গ্যালারিতে ব্রাজিল সমর্থকদের কান্নার রোল। ছবি: সংগৃহীত

পরের ৪৫ মিনিটে আরও কয় গোল করে জার্মানরা, তা দেখতে তখন মুখিয়ে ফুটবল অনুরাগীরা। আর ব্রাজিলের তখন ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা’। দ্বিতীয়ার্ধে জার্মানরা সত্যিকার অর্থে ব্রাজিলকে ছেড়েই দেয়। যেন স্বাগতিকদের আর বিব্রত করতে চায়নি তারা। এই অর্ধে ৬৯ ও ৭৯ মিনিটে দুটি গোলের মাধ্যমে সেই ‘সেভেন আপ’ মার্কে পৌঁছায় জার্মানি। ৯০ মিনিটে সান্ত্বনার এক গোল পায় ব্রাজিল।

ফুটবল যতদিন পায়ে পায়ে ঘুরবে, ততদিন ‘সেভেন আপ’ ফিরে ফিরে আসবে আলোচনায়। বিশেষ করে বাংলাদেশে আর্জেন্টিনার ভক্তরা চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলকে খোঁচা দিতে এই মোক্ষম ‘অস্ত্রের’ ব্যবহার চালিয়ে যাবেন অনন্তকাল, তা নির্দ্বিধায় বলে দেওয়া যায়।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম