২০০ রুপির সিরাজ এখন কোটি কোটি ভারতীয়র নয়নমণি
ক্রীড়া ডেস্ক
প্রকাশ: ০৬ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
তার সিংহহৃদয়। মাঠে নিজেকে নিংড়ে দেন। দ্য ওভালে পঞ্চম টেস্টের শেষদিনের সকালে মোহাম্মদ সিরাজের বোলিং-বৈভব ভারতকে এনে দেয় অবিস্মরণীয় জয়। যে জয়ে সিরিজে সমতা আনেন শুবমান গিলরা। যে ডেলিভারিতে ইংল্যান্ডের ‘শেষ দুর্গ’ গাস অ্যাটকিনসনের অফ-স্টাম্প ছত্রখান করে দেন, তার গতি ছিল ঘণ্টায় ১৪৩ কিলোমিটার। সেটাই টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে ভারতের অন্যতম স্মরণীয় জয় নিশ্চিত করে।
সিরাজ ম্যাচসেরার পুরস্কার নিতে আসেন সহাস্যে। ইংল্যান্ডের ড্রেসিংরুমে যিনি ‘অ্যাংরি ম্যান’র পরিচিতি পেয়েছেন। সেই তিনি এখন পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ। পঞ্চম টেস্টে তার শিকার নয় উইকেট। এর মধ্যে দ্বিতীয় ইনিংসে পাঁচ। এর জন্য ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের দেওয়া অর্থপুরস্কারে তিনি তার সতীর্থদের চেয়ে পাঁচ লাখ রুপি বেশি পাবেন। সিরাজের মুখে এখন ‘মিলিয়ন ডলার’ হাসি।
সিরাজের অবিশ্বাস্য বোলিং-সাফল্য তার নিরলস পরিশ্রম, অধ্যবসায় ও অবিরাম লড়াই করে যাওয়ার কঠিন মানসিকতার ফসল। এক দশক আগে হায়দরাবাদের একটি করপোরেট দলে ম্যাচপ্রতি ২০০ রুপিতে খেলতেন এই ফাস্ট বোলার। তার বাবা প্রয়াত মোহাম্মদ গাউসের কাছে ছেলেকে একটা জুতসই কেডস কিনে দেওয়ারও টাকা ছিল না। ইংল্যান্ডে যাওয়ার আগে এবার বাবার কবরে গিয়ে মোনাজাত করেছেন। তবে ছেলের স্বপ্নপূরণের জন্য অবিরল চেষ্টা চালিয়ে যান মা শাবানা বেগম। ভারতের সাবেক প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটার আবদুল আজিমের বোনের বাড়িতে গৃহকর্মী ছিলেন শাবানা। তিনি প্রায় প্রতিদিন আজিমের কাছে মিনতি করতেন তার ছেলেকে সাহায্য করার জন্য।
‘সাহেব, আমার ছেলেকে একটু সাহায্য করুন। পড়ালেখায় ওর মন নেই। সারা দিন শুধু ক্রিকেট খেলে,’ সিরাজের মা হররোজ অনুরোধের পর অনুরোধ করে যেতেন। আজিম শেষ পর্যন্ত সিরাজকে একটি ক্লাবে ঢুকিয়ে দেন। সেখান থেকে হায়দরাবাদ অনূর্ধ্ব-২৩ দলের ট্রায়ালে নির্বাচকদের নজর কাড়েন সিরাজ, কখনো হাল ছেড়ে না দেওয়ার অদম্য মানসিকতার কারণে।
সদ্যসমাপ্ত ইংল্যান্ড সিরিজে পাঁচ টেস্টে ২৩ উইকেট ঝুলিতে ভরে কোটি কোটি ভারতীয়র নয়নমণি এখন তিনি। ক্রিকেটবিশ্ব কুর্নিশ করছে তাকে। তার গুণমুগ্ধ ভক্তদের তালিকায় রয়েছেন জো রুটও, যিনি সিরাজকে ‘একজন যোদ্ধা’ হিসাবে আখ্যায়িত করতে কুণ্ঠিত হননি। পাঁচ টেস্টে ১৮৭ ওভারের বেশি বোলিং করা সিরাজ এমন একটি উপজাতির বংশধর, যারা হায়দরাবাদের একসময়ের শাসক নিজামদের দেহরক্ষী ছিল। তাদের রক্ত বইছে সিরাজের ধমনীতে।
