Logo
Logo
×

বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি

বাংলাদেশের ডিজিটাল অগ্রযাত্রায় বড় বাধা উচ্চ স্পেকট্রাম মূল্য

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০২:০৮ এএম

বাংলাদেশের ডিজিটাল অগ্রযাত্রায় বড় বাধা উচ্চ স্পেকট্রাম মূল্য

ছবি: যুগান্তর

বাংলাদেশে অস্বাভাবিকভাবে উচ্চ স্পেকট্রাম মূল্য ও করের চাপ মোবাইল নেটওয়ার্কে বিনিয়োগে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে ইন্টারনেটের গতি কমছে, ৫জি বিস্তারে বিলম্ব ঘটছে এবং ডিজিটাল অগ্রযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। এমন তথ্য উঠে এসেছে মোবাইল অপারেটরদের বৈশ্বিক সংগঠন জিএসএমএ-এর নতুন গবেষণা প্রতিবেদনে।

বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘বাংলাদেশে স্পেকট্রাম মূল্যের প্রভাব’ শীর্ষক এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি) ফয়েজ আহমদ তাইয়্যেব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব আব্দুন নাসের খান, বিটিআরসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. এমদাদ উল বারী, অতিরিক্ত সচিব (টেলিকম) মো. জহিরুল ইসলাম, বিটিআরসি কমিশনার (স্পেকট্রাম) মাহমুদ হোসেন এবং জিএসএমএ এশিয়া প্যাসিফিকের প্রধান জুলিয়ান গোরম্যান।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে অপারেটরদের পুনরাবৃত্ত রাজস্বের প্রায় ১৬ শতাংশই স্পেকট্রাম ফির পেছনে ব্যয় হচ্ছে। এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে যেখানে এ হার গড়ে ১০ শতাংশ, আর বিশ্ব গড় মাত্র ৮ শতাংশ। ভোক্তা কর, সারচার্জ ও রাজস্ব ভাগাভাগি যোগ করলে মোট আর্থিক বোঝা দাঁড়াচ্ছে বাজার আয়ের ৫৫ শতাংশে, যা বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ।

গবেষণায় সতর্ক করে বলা হয়েছে, যদি ২০২৬ সালের নবায়ন ও নতুন ব্যান্ড নিলামে আগের মতো উচ্চমূল্য বহাল থাকে, তবে ২০৩৫ সালের মধ্যে স্পেকট্রাম খরচ অপারেটর আয়ের ২১ শতাংশে পৌঁছাবে। তখন অনেক অপারেটর স্পেকট্রামের অংশ ফেরত দিতে বা নতুন ব্যান্ড নিতে বিরত থাকতে বাধ্য হবে, যার ফলে ইন্টারনেট গতি, নেটওয়ার্ক মান এবং ৫জি গ্রহণ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

স্পেকট্রাম ফি এশিয়া-প্যাসিফিক গড়ের সাথে সামঞ্জস্য করলে (৫০% হ্রাস), ২০৩৫ সালের মধ্যে গড় ডাউনলোড গতি ১৭% বাড়বে, ৯৯% নাগরিক ৫জি কাভারেজ পাবে এবং অর্থনীতিতে ৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যুক্ত হবে।

বৈশ্বিক গড়ের সাথে সামঞ্জস্য করলে (৭৫% হ্রাস), ৪জি গতি ২২% বাড়বে, ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি ত্বরান্বিত হবে এবং অতিরিক্ত ৪৫ বিলিয়ন ডলার অর্থনৈতিক সুফল আসবে।

স্পেকট্রাম ফি কমানো মানেই সরকারের রাজস্ব ক্ষতি নয়; বরং উন্নত সংযোগ ও বাড়তি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সেই ঘাটতি পূরণ সম্ভব।

জিএসএমএ এশিয়া প্যাসিফিকের প্রধান জুলিয়ান গোরম্যান বলেন, ‘মোবাইল সংযোগ বাংলাদেশের ডিজিটাল স্বপ্নের অক্সিজেন। অথচ অপারেটররা বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ স্পেকট্রাম ও করের চাপ বহন করছে। সাশ্রয়ী মূল্য ও আধুনিক লাইসেন্স শর্ত নিশ্চিত করা জরুরি। সরকার ও শিল্প খাত একসঙ্গে কাজ করলে বাংলাদেশ ট্রিলিয়ন-ডলার অর্থনীতির স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে।’

প্রতিবেদনটিতে চারটি অগ্রাধিকারমূলক পদক্ষেপ প্রস্তাব করা হয়েছে

১. বাজার বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্য রেখে স্পেকট্রাম মূল্য পুনর্নির্ধারণ ও ভ্যাট অব্যাহতি।

২. ৭০০ মেগাহার্টজ ও ৩.৫ গিগাহার্টজ ব্যান্ড দ্রুত বরাদ্দ।

৩. কর কাঠামো সহজীকরণ করে স্মার্টফোন ব্যবহারে উৎসাহ।

৪. দীর্ঘমেয়াদি লাইসেন্স ও নমনীয় কিস্তি ব্যবস্থা চালু।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সময়োপযোগী নীতি সংস্কার ছাড়া বাংলাদেশে দ্রুত, সাশ্রয়ী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল সংযোগ নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম