সমন্বিত অভিযান
বান্দরবানে কেএনএফের ৫৪ সদস্য গ্রেফতার
অস্ত্র-গুলিসহ নানা সরঞ্জাম উদ্ধার * ডাকাতিতে ব্যবহৃত গাড়ি জব্দ, চালকসহ গ্রেফতার আরও ২
বান্দরবান ও দক্ষিণ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বান্দরবানে ব্যাংক ডাকাতি ও অস্ত্র লুটের পর শুরু হওয়া সমন্বিত অভিযানে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) ৫৪ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ সময় বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গুলিসহ নানা সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। থানচিতে কৃষি ব্যাংক ডাকাতির সময় ব্যবহৃত জিপ গাড়ি জব্দ এবং এর চালককে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া সন্দেহভাজন হিসাবে গ্রেফতার করা হয় রুমা শাখা সোনালী ব্যাংকের একজন কর্মকর্তাকে। এদিকে রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়িতে সব ধরনের যান চলাচলে অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কেএনএফ।
গ্রেফতারদের মধ্যে রয়েছেন ভানন্নূন ময় বম, জেমেনিউ বম ও আমে লানচেও বম। তাদের রুমার সিমত্লাংপি পাড়া থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে জেমেনিউ বম ও আমে লানচেও বম ভাইবোন। রুমা বেতেলপাড়া থেকে ১৮ নারীসহ ৪৯ জনকে আটক করেছে পুলিশ। তাদের নাম জানা যায়নি। একই এলাকা থেকে পৃথক অভিযানে সোনালী ব্যাংকের সহকারী ক্যাশিয়ার লালপিয়ামসহ আরও দুই কেএনএফ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। অপরদিকে থানচি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত গাড়ির চালক মো. কফিল উদ্দিন সাগরকে। তার বাড়ি থানচির টিএনটি পাড়ায়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে রুমার সেনা জোনের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কেএম আরাফাত আমিন জানান, রুমায় অভিযান চালিয়ে কেএনএফ-এর ২ জনসহ সন্দেহভাজন হিসাবে রুমা সোনালী ব্যাংকের এক জুনিয়র অফিসারকে (ক্যাশ) গ্রেফতার করা হয়েছে। এ সময় ৭টি দেশীয় বন্দুক, ২০ রাউন্ড গুলি, কেএনএফ-এর পোশাক, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত ল্যাপটপ, দুই জোড়া বুট, ১টি ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানায়, সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফ-এর তাণ্ডবের ঘটনায় রুমা ও থানচিতে ৮টি মামলা হয়েছে। জড়িতদের ধরতে সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশের সমন্বিত অভিযান চলছে রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি ও আলীকদম উপজেলায়।
বান্দরবানের পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন জানান, থানচি থেকে ১ জন এবং রুমা থেকে ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর আগে সদরের স্যারনপাড়া থেকে কেএনএফ-এর প্রধান সমন্বয়ক চেওচিম বমকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
অভিযানে যুক্ত হয়েছে সাঁজোয়া যান : জেলায় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। চলমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৪টি বিশেষ সাঁজোয়া যান আনা হয়েছে দুই উপজেলায়, যা দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় টহল দেবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ বিষয়ে পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন বলেন, চারটি সাঁজোয়া যান (এপিসি) আনা হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় তা আরও বাড়ানো হবে।
রুমা-থানচিতে আতঙ্ক কাটছে না: এদিকে কেএনএফ-এর তাণ্ডবের ঘটনায় রুমা ও থানচিতে এখনো থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। তিন উপজেলায় (রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়ি) ব্যাংক বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। এ কারণে বান্দরবান জেলা সদরের ব্যাংকগুলোয় গ্রাহকের ভিড় দেখা গেছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েন তারা।
একজন জনপ্রতিনিধি জানান, সকাল থেকে গণপরিবহণসহ অভ্যন্তরীণ সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। বিনা প্রয়োজনে বাড়ি থেকে কেউ বের হচ্ছে না। রুমা বাজারও জনশূন্য।
যান চলাচলে অনির্দিষ্টকালের নিষেধাজ্ঞা কেএনএফের : রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়িতে সব ধরনের যান চলাচলে অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে কেএনএফ। সশস্ত্র সংগঠনটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বার্তায় এই নিষেধাজ্ঞা জারি করে। কেএনএফ-এর সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মির (কেএনএ) ক্যাপ্টেন ফ্লেমিং সোমবার সকালে এই বার্তা দেন। এতে বলা হয়, সোমবার বিকাল ৫টা থেকে রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়িতে সব ধরনের যান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। সব গাড়ি সমিতির জন্য এই সতর্কবার্তা। নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারী সমিতি ও যানবাহনের মালিকরা এজন্য দায়ী থাকবেন।
