রংপুরে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান
পুলিশের গুলিতেই চার হত্যা
রংপুর ব্যুরো
প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে রংপুরে ১৯ জুলাই সিটি বাজারের সামনে পুলিশের গুলিতে চারজন নিহতের সত্যতা পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। সিআইডির হাতে গ্রেফতার ওই কনস্টেবল ইতোমধ্যে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশে ৫০ রাউন্ড গুলি ছুড়তে বাধ্য হয়েছেন তিনি। এই ঘটনায়, তদন্তে নেমে তৎকালীন পুলিশ কমিশনার মনিরুজ্জামান, পুলিশের ডিসি (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেনসহ মেট্রোপলিটন পুলিশের শীর্ষ কর্তকর্তাদের সম্পৃক্ততা পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। পাশাপাশি গুলি চালানো সেই চায়না রাইফেলও সিআইডি হেফাজতে নিয়েছে। যার ফরেনসিক রিপোর্টও পেয়েছে তদন্ত সংস্থা। রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের রিজার্ভ অফিসে কর্মরত পুলিশ সদস্য আমিরুল ইসলাম ৫ আগস্ট পরবর্তী বদলি হয়ে খাগড়াছড়ি এপিবিএনে স্পেশালিস্ট ট্রেনিং সেন্টারে প্রশিক্ষণরত ছিলেন। খাগড়াছড়ি থেকেই গত ৬ সেপ্টেম্বর তাকে গ্রেফতার করা হয়। ৭ সেপ্টেম্বর তাকে রংপুর চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। ওই দিনই তিনি আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। এরআগে, পুলিশ সদস্য আমিরুল ইসলামকে ফল বিক্রেতা মেরাজুল ইসলাম হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। এদিকে ওই ঘটনায় রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার আবু মারুফ হোসেনকে গ্রেফতার করার অনুমতি চেয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দিয়েছে সিআইডি। একই সঙ্গে অভিযুক্ত অন্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গত ১৬ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যার পর উত্তাল হয়ে উঠে রংপুর। ১৮ ও ১৯ জুলাই তীব্র সংঘর্ষ চলে দিনভর। ১৯ জুলাই বিকালের সংঘর্ষে রংপুর সিটি বাজারের সবজি বিক্রেতা সাজ্জাদ হোসেন, ফল বিক্রেতা মেরাজুল ইসলাম, স্বর্ণ কারিগর মোসলেম উদ্দিন মিলন ও শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল তাহির। সাজ্জাদ হোসেন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় স্ত্রী জিতু বেগম পুলিশের ৬ কর্মকর্তাসহ ২১ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। ফল বিক্রেতা মেরাজুল ইসলাম হত্যায় মা আম্বিয়া খাতুন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার উৎপল কুমার রায়, সহকারী কমিশনার ইমরান হোসেন, সহকারী কমিশনার আরিফুজ্জামান আরিফ, এসআই মামুন, এসআই গণেশ, এসআই মজনু, ২০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌহিদুল ইসলাম, ২৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রফিকুল আলমসহ ২১ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। স্বর্ণ কারিগর মোসলেম উদ্দিন মিলন হত্যা মামলায় বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেন, ডিআইজি আব্দুল বাতেন, পুলিশ কমিশনার মনিরুজ্জামান, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, স্পিকার শিরিন শারমিনসহ ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল তাহির হত্যা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, রংপুর পুলিশ কমিশনার মনিরুজ্জামানসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গদলের ৪০ জনের নাম উল্লেখ করে রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেন তার বাবা আব্দুর রহমান। রংপুর সিআইডির পুলিশ সুপার (ভারপ্রাপ্ত) সুমিত চৌধুরী জানিয়েছেন, আমাদের কাছে সব ডিজিটাল প্রমাণ আছে। সাক্ষীরা সাক্ষ্য দিয়েছেন। ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও পাওয়া গেছে।
