গায়েবি মিলে বড় বরাদ্দ
ক্ষেতলালে আমন ধান-চাল সংগ্রহ
ক্ষেতলাল (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ক্ষেতলালে চলতি আমন মৌসুমে সরকারি মূল্যে খাদ্যগুদামে চাল সংগ্রহ অভিযানে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে মিল মালিক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সরেজমিন পরিদর্শন ছাড়াই অস্তিত্বহীন চাতাল, বিদ্যুৎ সংযোগবিহীন অচল মিল ও বন্ধ হয়ে যাওয়া অটো রাইচ মিলের নামে বিপুল পরিমাণ চাল সংগ্রহের বরাদ্দ দিয়েছেন। উপজেলা খাদ্য অফিসের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নামসর্বস্ব এসব মিলের অনুকূলে আমন মৌসুমে সরকারি মূল্যে ধান ও চাল সংগ্রহের বরাদ্দের তালিকা প্রণয়ন করায় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে আমন মৌসুমে ক্ষেতলাল উপজেলা খাদ্যগুদামে মিলারদের মাধ্যমে দুই ২৯০ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল এবং কৃষক পর্যায়ে ১১ হাজার ১০০ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ২৪ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া এ কার্যক্রম চলবে আগামী বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। তালিকায় ৪১টি হাসকিং চাতাল এবং চারটি অটো রাইচ মিল সচল দেখিয়ে এসব চাল সংগ্রহের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৪১টি হাসকিং চাতাল থেকে গড়ে ১১ হাজার ৮২০ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল এবং চারটি অটো রাইচ মিল থেকে ১৭৬৮.৬৩৭ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল সংগ্রহের চুক্তি করা হয়েছে। তবে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, তালিকায় থাকা ৪১টি হাসকিং চাতালের একটিও বর্তমানে সচল নেই। অধিকাংশ চাতাল বিলুপ্ত হয়ে সেখানে এখন ভূতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে। অনেক মিলে হাসকিং বয়লার তো দূরের কথা, বিদ্যুৎ সংযোগ পর্যন্ত নেই। তালিকায় থাকা চারটি অটো রাইচ মিলের মধ্যে মেসার্স চৌধুরী অটো রাইচ মিলে গিয়ে দেখা যায় এবং সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সাল থেকে মিলটির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন। অথচ এ মিলের নামেও চাল সংগ্রহের বিশাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, গুদামে চাল সরবরাহের জন্য এসব অচল মিলের নাম ব্যবহার করে মধ্যস্বত্বভোগী ও প্রভাবশালী সিন্ডিকেট সুবিধা হাতিয়ে নিচ্ছে। গত ২১ ডিসেম্বর খাদ্যগুদামে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইতোমধ্যে ১৪৫১.১৭০ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ সম্পন্ন হয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, যেসব মিল বন্ধ বা অচল, সেসব মিল মালিকরা বাইরে থেকে নিুমানের চাল এনে গুদামে ঢোকাচ্ছেন। এ বিষয়ে উপজেলা মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শওকত চৌধুরী বলেন, ‘বরাদ্দের বিষয়ে আমি কোনো তথ্য দিতে পারব না। বরাদ্দ বিষয়ে যা তথ্য ডিসিফুড দিতে পারবেন।’ এছাড়া অচল মিলে বরাদ্দের বিষয়ে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা শামীমা আখতার অনিয়মের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। সময় স্বল্পতার কারণে কোনো রকম পরিদর্শন ছাড়াই বরাদ্দের তালিকা করতে হয়েছে। তবে নিয়ম অনুযায়ী বরাদ্দ পেতে হলে মিল সচল এবং বিদ্যুৎ সংযোগ থাকা বাধ্যতামূলক। আগামীতে সব নিয়ম মেনেই বরাদ্দ বণ্টন করা হবে।’ সরেজমিন পরিদর্শন ছাড়া কীভাবে অচল ও অস্তিত্বহীন মিলের নামে সরকারি চাল সংগ্রহের বরাদ্দের তালিকা করা হলো এ নিয়ে জেলা খাদ্য বিভাগ ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের তদন্ত দাবি করেছেন স্থানীয় সচেতন মহল।
