Logo
Logo
×

বাংলার মুখ

জুলাই অভ্যুত্থান

শহীদ রুশোর মা-বাবার কান্না আজও থামেনি

Icon

আব্দুল আজিজ মজনু, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম)

প্রকাশ: ০৫ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

শহীদ রুশোর মা-বাবার কান্না আজও থামেনি

দাদু মোখলেছুর। বয়স ৯০ ছুঁই ছুঁই করছে। চলাফেরা করা খুবই কঠিন। কথা বলতে পারেন না। শুধু শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছেন। চোখের পানি গড়িয়ে পড়ছে। একবার নাতির ছবির দিকে। অন্যবার দেখছেন ছেলে ও ছেলের স্ত্রীর দিকে। তিনজনই কাঁদছেন আর কাঁদছেন। দাদুসহ মা-বাবার কাছে শুধু এখন স্মৃতি ছবি। অনেকটা নির্জন এই বাড়িটিতে। তিনটি টিনের ঘর ভাঙাচোরা। এক বছর পেরিয়ে গেলেও পরিবারের কেউ মেনে নিতে পাচ্ছেন না হৃদয়বিদারক মৃত্যুটি। বোরবার সরজমিনে গিয়ে এমনটি দেখা গেছে, ফুলবাড়ী উপজেলার বড়লই গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত বিজিবির হাবিলদার জিয়াউর রহমানের বাড়িতে। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সুমন খানের বাসভবনে ভাঙচুর ও লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার পর ওই বাড়ি থেকে অগ্নিদগ্ধ যে ছয়টি লাশ উদ্ধার করা হয় তার একটি রাদিফ হোসেন রুশোর। সে উপজেলার বড়লই গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত বিজিবি হাবিলদার জিয়াউর রহমান ও রশিদা বেগম দম্পতির একমাত্র ছেলে। সে সময় লালমনিরহাট ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের রুশো একাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিল। প্রায় ১২ বছর বাবার চাকরির সুবাধে লালমনিরহাট শহরের তালুক খুটামারা এলাকায় ভাড়া বাসা থেকে পড়ালেখা চালাত। এদিকে ছেলের মৃত্যু সহ্য করতে না পেয়ে বাবা জিয়াউর রহমান ১২ বছর চাকরি মেয়াদ থাকার পরেও অবসর নিয়ে বাড়িতে চলে এসেছেন। রুশোর মা রশিদা বেগম যুগান্তরকে কান্না জড়িত কণ্ঠে জানালেন, আমাদের আর কোনো অবশিষ্ট নেই। রাদিফ হোসেন রুশোই একমাত্র ছেলে সন্তান। তাকে নিয়ে আমাদের অনেক আশা ছিল। সেটি কেড়ে নেওয়া হলো। অনেক স্বপ্ন ছিল তার। সে ব্যারিস্টার হবে। সেটা আর হলো না। এখনো মনে হয়, রুশো আমাকে মা মা বলে ডাকছে।

বাবা মো. জিয়াউর রহমান জানালেন, আমি যখন চাকরিতে ছিলাম তখন কতবার যে আমায় ফোন দিত আমার সোনার ছেলে রুশো। এখন আর দেয় না। গত বছরের ৫ আগস্ট সে সকাল থেকে কতবার যে আমায় ফোন দিয়েছিল। সর্বশেষ আমাকে বিকালে ফোন দিয়ে জানালো বাবা আমি লালমনিরহাট জেলা পরিষদ থেকে বৈষম্যবিরোধী আনন্দ মিছিলে যাচ্ছি। আমার জন্য দোয়া করিও। এ কথা বলেই তিনি কেঁদে ফেলেন।

প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়লে ওইদিন বিকালে লালমনিরহাট জেলা শহরে ছাত্র-জনতার মিছিল বের হয়। একপর্যায় এসে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা লালমনিরহাটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পেছন পাশে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সুমন খানের বাসভবনে হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে গভীর রাতে আগুন নিভে গেলে ভবনের ৪র্থ তলায় বাথরুমে তিনটি ও মেঝেতে তিনটি অগ্নিদগ্ধ লাশ পাওয়া যায়। তার একটি হলো ফুলবাড়ী উপজেলা বড়লই গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত বিজিবি হাবিলদার জিয়াউর রহমান ও রশিদা বেগম দম্পতির একমাত্র ছেলে রাদিফ হোসেন রুশো। বাদবাকিরা হলো রাজিব, জনি, জোবায়ের, শাহরিয়ার তম্ময়, শ্রাবণ।

ঘটনাপ্রবাহ: জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর


আরও পড়ুন

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম