Logo
Logo
×

বাংলার মুখ

তজুমদ্দিনে পল্লী বিদ্যুৎ অফিস

জরিমানার নামে অর্থ বাণিজ্য

বাড়তি টাকা ছাড়া মেলে না নতুন লাইন ও মিটার

Icon

অমিতাভ অপু, ভোলা

প্রকাশ: ১৫ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

জরিমানার নামে অর্থ বাণিজ্য

ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগে জোনাল অফিসের লাইন টেকনিশিয়ান আক্তারুল ইসলাম (আক্তার)। পদবি ছোট হলেও তিনিই ওই অফিসের অলিখিত হর্তা-কর্তা (বড় কর্তা)। তাকে খুশি না করলে ওই এলাকায় মেলে না সাধারণ মানুষের বিদ্যুৎ সংযোগ ও মিটার। অভিযোগ রয়েছে চাকরির ২৩ বছরে অর্ধেক সময় কাটে ওই উপজেলায়। গেল সরকারের স্থানীয় নেতাদের ম্যানেজ করার পাশাপাশি নিজেকে তাদের ঘনিষ্টজন পরিচয়দানকারী এই আক্তার হালে এক বছরের মধ্যে নিজেকে বিএনপির রাজনীতিতে বিশ্বাসী বলেও দাবি করেন। স্থানীয় বিএনপি নেতারাও তাকে তাদের ঘনিষ্টজন বলে মনে করছেন। কিন্তু সাধারণ গ্রাহকের কাছে আক্তার একটি ভয়ের নাম। যাকে খুশি না করা পর্যন্ত গ্রাহকের নতুন মিটার জোটে না। সমস্যার সমাধান হয় না। জোনাল কর্মকর্তার পদ শূন্য থাকায়, লালমোহন উপজেলা কর্মকর্তা অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। এই সুবিধাও নেন আক্তার। সোমবার বিকালে পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের জেলা দপ্তরের ডিজিএম (টেকনিক্যাল) সাদেক মিয়া যুগান্তরকে জানান, অনেক বিষয় তাদের জানা ছিল না। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গ্রাহকদের নিয়ে ছোট ছোট সভা করে অভিযোগ শুনে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। বিশেষ করে আক্তারের বিষয়ে তদন্ত করা হবে।

আক্তার অবশ্য জানান, তার বিরুদ্ধে জিএম অফিসে দেওয়া অভিযোগ সত্য নয়। এমনকি সাংবাদিকদের কাছে যারা তথ্য দিয়েছেন তা সঠিক দেননি। লাইনম্যান হিসাবে ২০০৩ সালে তিনি যোগদান করেন। পরে পদোন্নতি পেয়ে লাইন টেকনিশিয়ান হয়েছেন। এর মধ্যে ৩ বারে তিনি ৮ বছরের মতো তজুমদ্দিনে চাকরি করেন। সর্বশেষ ২০২২ সালের মে মাসে যোগদান করেন। উপজেলার পানির ট্যাংকি এলাকায় মো. ওহাব নামের এক ব্যক্তির নামে বাড়ি ও তিনটি দোকানে ৪টি সংযোগ ও মিটার রয়েছে। এর মধ্যে একটি পুড়ে গেছে। অপর একটি লাইন পুড়ে যায়। তারা বিদ্যুতের অবৈধ ব্যবহার করায় ওই মিটার নষ্ট করা হয়েছে। তাই তাদের প্রথমে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। পরে অফিসে অডিট টিমের নজরে আসে ওই ফাইল। তারাই দেড় লাখ টাকা জরিমানা করে। এখানে তার কিছু করার ছিল না। এদিকে যুগান্তর প্রতিবেদক মঙ্গলবার শম্ভুপুর ইউনিয়নের শিবপুর পানির ট্যাংকি ওই এলাকায় গেলে শতাধিক মানুষ অভিযোগ জানাতে ছুটে আসেন। এদের মধ্যে কেউ জানান, মাসিক বিল ছিল দেড়শ টাকা। এখন দিতে হচ্ছে ৮শ থেকে এক হাজার টাকা। কেউ জানান জরিমানা আদায়ের নামে বাণিজ্য চলছে। গরুর খামারের স্টাফ মো. নিরব জানান পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে গেলে অন্যরা সহযোগিতা করলেও আক্তার সাহেব হ্যাঁ-না বলা পর্যন্ত সেবা মেলে না। ওহাব আলীর স্ত্রী আফরোজা বেগম জানান, তার স্বামী ঢাকায় চাকরি করেন। তাদের বসতঘরের সামনে একটি মার্কেট টাইপ ৩টি দোকান রয়েছে। তারা ৪টি মিটার ব্যবহার করছেন। চা স্টলের মিটারটি ৬ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে গভীর রাতে প্রাকৃতিক দুর্যোগে পুড়ে যায়। আরেকটি মিটারের তার পুড়ে গেছে। অফিসকে জানালে তারা এসে মিটার খুলে নিয়ে যায়। পরদিন অফিসে গিয়ে নতুন মিটার আনতে বলে যান। অফিসে গেলে আক্তার সাহেব জানান, আপনারা মিটার টেম্পারিং করেছেন, অবৈধ সংযোগ ব্যবহার করেছেন। আপনারা মিটার পাবেন না। একপর্যায়ে নতুন মিটারের জন্য ৭০ হাজার টাকা দাবি করেন। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সাবেক পরিচালক মো. কবির হোসেনের মধ্যস্থতায় এলাকার আলাউদ্দিন ৫০ হাজার টাকা আক্তার সাহেবের হাতে তুলে দেন। ২০ হাজার টাকা কম দেওয়ায়, টালবাহানা করতে থাকেন আক্তার সাহেব। একপর্যায়ে টেকনেশিয়ান আক্তার উল্লেখ করেন, ২৭ মার্চ ২০২৫ তারিখে মিটার টেম্পারিং করে অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়, যার আলমতসহ ধরা পড়ে। মিটারের সোর্স সাইড হতে সরাসরি হুকিং করে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা আইনগত দণ্ডনীয় অপরাধ। এ কারণে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা পরিশোধ করতে মো. অহিদ মিয়াকে চিঠি দেওয়া হয়। আফরোজা বেগম জানান, তাদের কি অপরাধ। তারা যদি অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহার করে থাকেন। তবে বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন কেন তা ধরে প্রমাণ করেননি। কেন কোনো স্বাক্ষী রাখেননি। এখন তাদেরকে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে চিঠি দিয়েছে। এই সবই করেছেন ওই আক্তারুল ইসলাম আক্তার। কেন এই টাকা জরিমানা দিবেন, এই টাকা আক্তাকে দিতে হবে বলেও দাবি করেন আফরোজা বেগম। তিনি জানান আক্তার সাহেবের প্রথমে ৭০ হাজার টাকা দাবি করায় তার মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা নেন আক্তার সাহেব। ওই টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেন আক্তার। পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের ডিজিএম সাদেক মিয়া জানান, বর্তমানে নতুন সংযোগের জন্য অনলাইনে আবেদন করতে হয়। যে কোনো কম্পিউটারের দোকান বা নিজের ফোন থেকেও আবেদন করাসহ টাকা অনলাইনে জমা দিতে পারেন। অফিসের লোকদের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। এমন অভিযোগের চিত্র কেবল পানির ট্যাংকি এলাকায় সীমাবদ্ধ নেই। উপজেলাব্যাপী। উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আব্দুল গফুর জানান, পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের আক্তার তার ঘনিষ্টজন। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য নয়।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম