Logo
Logo
×

বাংলার মুখ

শেখ হাসিনার নামে মামলা করা শহীদ আমিরের স্ত্রীর আক্ষেপ

‘ছেলেরা আলেম না হলে স্বামীর আত্মা কষ্ট পাবে’

অনাহারে-অর্ধাহারে কাটছে দিন

Icon

আব্দুল মোতালিব, তালতলী (বরগুনা)

প্রকাশ: ২৩ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

‘ছেলেরা আলেম না হলে স্বামীর আত্মা কষ্ট পাবে’

তালতলীর আমির দম্পতির দুটি পুত্র সন্তান হওয়ায় তাদেরকে মাদ্রাসায় লেখাপড়া করিয়ে আলেম বানানোর পরিকল্পনা করেছিলেন তারা। দরিদ্র পরিবারের এ স্বপ্ন পূরণ খুবই দুরূহ ব্যাপার। তাই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে অর্থাৎ আলেমের বাবা হওয়ার আশায় ২০২৩ সালের প্রথম দিকে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে আমির পাড়ি জমান ঢাকায়। সেখানে গিয়ে রামপুরার উলান এলাকার একটি ভাড়া বাসায় থেকে অটোরিকশা চালাতেন আমির (২৯)। সেখানে যাওয়ার পর আরও একটি কন্যা সন্তান জন্ম নেয় তাদের সংসারে। হাজারও কষ্টের মধ্যে বড় ছেলে আরমানকে (৭) ভর্তি করান মাদ্রাসায়। অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যেও আরমান, আরিয়ান (৫) ও আমেনা (২) নামের তিনটি সন্তান নিয়ে দরিদ্র পরিবারটির দিনকাল মোটামুটি ভালোই চলছিল।

আমিরের স্ত্রী আন্নি আক্তার বলেন, ‘ইতোমধ্যে শুরু হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ভিড়ে অটোরিকশাও চালাতে যেতে পারেননি স্বামী। সেদিন ছিল ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই শুক্রবার। দুপুরে রামপুরার একরামুন নেছা ডিগ্রি কলেজ এলাকার উলান সড়কের একটি মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করতে যান তিনি। দুপুরে আর খেতে আসেননি। পথের দিকে চেয়ে আছি, খবর নিচ্ছি। বিকালে খবর পাই তিনি জুমার নামাজ পড়ে বাসায় ফেরার পথে পুলিশের ছোড়া গুলিতে গুরুতর আহত হয়েছেন। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে পার্শ্ববর্তী একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে যান। তাৎক্ষণিক সেখানে যাই। ওই ক্লিনিকে বিকালেই তার মৃত্যু হয়।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে আন্নি আক্তার আরও বলেন, ‘আমি এখনো ঢাকায়ই আছি। কারণ ছেলেদের আলেম বানাতে হবে। তাদের আলেম বানাতে না পারলে স্বামীর আত্মা কষ্ট পাবে। কিন্তু কেমন করে আলেম বানাব। সন্তানদের লেখাপড়া তো দূরের কথা তিন সন্তান নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে। যারা আমার সন্তানদের কাছ থেকে তার বাবাকে কেড়ে নিয়েছে আমি তাদের বিচার চাই।’

তালতলী উপজেলার ছোটবগী ইউনিয়নের মৌপাড়া এলাকার আলতাফ হোসেনের ছেলে আমির হোসেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত বছরের ১৯ জুলাই নিহত হওয়ার পর ওইদিন রাতেই এলাকার পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়। এ ঘটনায় নিহত আমিরের স্ত্রী আন্নি আক্তার একই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ ২৭ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। আদালত মামলাটি পিবিআইকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। পরবর্তীতে আদালত লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১০৭ দিন পর বরগুনা জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তারিকুল ইসলাম লাশ উত্তোলন করে নিয়ে যান। ময়নাতদন্ত শেষে ফের লাশ তার কবরে শায়িত করা হয়।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম