নগরের স্বাস্থ্যসেবা
লাল কার্ডধারী না হলে মিলে না সব সুবিধা
নাসিরাবাদ নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র-৩
ডেমরা (ঢাকা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
নাসিরাবাদ নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র-৩ ক্রমেই অবহেলিত জনগোষ্ঠীর আস্থার চিকিৎসাস্থল হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৭৫ নম্বর ওয়ার্ডের সুবিধাবঞ্চিত নারীদের ঘরে বসেই মিলছে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা। বর্তমানে ভাড়ায় চালিত ভবনে পরিচালিত হচ্ছে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসাসেবা। তাই স্থায়ীভাবে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি নির্মাণ ও অ্যাম্বুলেন্স সেবা চালুর দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। একটা সময় ছিল এখানকার নারীরা নিজেদের রোগের কথা কাউকে লজ্জায় বলতে পারতেন না।
নাসিরাবাদবাসীর বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে। উল্লেখযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের জন্য কম খরচে চিকিৎসাসেবা মিলছে এখানে। তবে লাল কার্ডধারী না হলে এখানে প্রদেয় সব প্রকার চিকিৎসা সুবিধা শতভাগ মেলে না বলে অভিযোগ রয়েছে। এখানে ৩ হাজার লাল কার্ডধারী রয়েছে, যা পর্যায়ক্রমে ৫ হাজার করা হবে। এখানে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা সুবিধার পাশাপাশি একই সঙ্গে চলছে শিশুদের টিকাদান কর্মসূচিও। স্থানীয় সরকার বিভাগের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারি প্রকল্পের আওতায় পরিচালিত হচ্ছে এই নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি। এটি মূলত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) বাস্তবায়নে এনজিও সংস্থা ‘অ্যাডামস’র পরিচালিত একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র। খিলগাঁও থানাধীন ডিএসসিসির ৭৫ নম্বর ওয়ার্ডটি অনুন্নত এলাকা। এখানে এখনো বড় বড় বাঁশের সাঁকো ও নৌকায় চলাচল করতে হয় বাসিন্দাদের। ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত অন্ধকার এ ওয়ার্ডটিতে যেন আলো হয়ে এসেছে নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র-৩।
নাসিরাবাদের লায়নহাটি গ্রামে একটি ভাড়া বাসায় পরিচ্ছন্ন পরিবেশে চলছে নাসিরাবাদ নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র-৩। আর ৩টি ফ্ল্যাটের মধ্যে ১০ রুমের এক কক্ষে চিকিৎসক, এক কক্ষে প্যারামেডিকস ও অন্য সহকর্মীরা বসছেন। পরীক্ষাঘার ও টিকার জন্য আলাদা একটি করে রুমের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মাঝে একটা ওয়েটিং রুম রয়েছে, যেখানে ৪-৫ জন নারী বাচ্চাসহ অপেক্ষা করছেন।
এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য প্রতি মাসে ৩২ হাজার টাকা ভাড়া পরিশোধ করতে হয় বলে জানিয়েছেন অফিস সহকারী সেজান মাহমুদ। স্বাস্থ্যকেন্দ্রেটির মাঠ পরিদর্শক কাজী মেহেদী হাসান বলেন, এখানে একজন মেডিকেল অফিসার, ৩ জন প্যারামেডিকস, ৩ জন পরিবার কল্যাণ কর্মী, ২ জন সার্ভিস প্রমোটর, ১ জন করে কাউন্সিলর, ল্যাব টেকনিশিয়ান, ফিল্ড সুপারভাইজার, ভর্তি সহায়তাকারী, রিসিপশনিস্ট, পিয়ন ও আয়াসহ ১৬ জনের একটি সার্ভিস টিম রয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত আছেন এনজিও সংস্থার সিমান্তিক-২ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ১ জন ও ডিএসসিসির ৪ জন স্বাস্থ্যকর্মী।
নাসিরাবাদ নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র-৩ এর ডেলিভারি কার্যক্রম পরিচালিত হয় সবুজবাগ থানাধীন দক্ষিণগঁাঁও ১নং রোডে অবস্থিত নগর মাতৃসদন হাসপাতালে। এখানে মান্ডা নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র-১ ও নন্দীপাড়া মসজিদ গলিতে অবস্থিত নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র-২ এর ডেলিভারি কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এদিকে নাসিরাবাদের এ স্বাস্থ্যকেন্দ্র-৩ হওয়ার পর পর্যায়ক্রমে বর্তমানে নরমাল ডেলিভারি ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ বেড়েছে। আর নরমাল ডেলিভারির দিকেই জোর দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। এখানে প্রতিদিন গড়ে ১০০/১২০ জন স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করছে। গর্ভবতী সেন্টারে প্রতিদিন সেবা গ্রহণ করছে ১০০ থেকে ১৫০ জন নারী। তাছাড়া এ সেন্টারের আওতায় প্রতি মাসে গড়ে নরমাল ডেলিভারি ৫০-৬০ জন ও সিজারিয়ান অপারেশন হচ্ছে ৪০-৪৫ জনের। সিজারের মানসম্মত ওষুধ ও থাকার ব্যবস্থাসহ সর্বোচ্চ ১২ হাজার টাকায় অপারেশন করানো হয়। নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র-৩ এ স্বাস্থ্য সেবা নিতে আসা আফরিন সুলতানা যুগান্তরকে বলেন, তার স্বামী একজন অটোরিকশাচালক। তাদের সংসারে কেউ অসুস্থ হলে এখানেই চিকিৎসা নিতে আসেন। মাঠ পরিদর্শক কাজী মেহেদী হাসান যুগান্তরকে বলেন, এখানে যারা চিকিৎসা নেয় প্রায় সবারই লাল কার্ড আছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির চিকিৎসক ডা. ফারহানা আফরিন যুগান্তরকে বলেন, এ অঞ্চলটি দ্বীপের মতো। এখানকার অবহেলিত মানুষ ভালো চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন। এখানে পুরুষ বন্ধ্যাকরণ সেবাও দেওয়া হচ্ছে, যা আগে ছিল না। ডিএসসিসির অঞ্চল-৬ এর সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শিহাব উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন-সিটি করপোরেশনের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসাসেবা আরও টেকসই, স্বচ্ছ ও নাগরিকদের কাছে অধিকতর সহজলভ্য করা হচ্ছে।
