ওয়ার্ড পরিক্রমা (উত্তর সিটি): ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড
ধীরগতির উন্নয়নে ভোগান্তি
নিম্ন আয়ের মানুষের বসবাস বেশি হওয়ায় সরকারি নজর কম * অবাধে মাদক বিক্রি
ভাটারা (ঢাকা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডটি খুবই অনুন্নত। রাজধানীর খেটে খাওয়া ও অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষের বড় একটা অংশ বসবাস করে এই ওয়ার্ডে। এখানকার বেশির ভাগ সড়কে এক বছর ধরে সংস্কারের কাজ চলছে। একদিকে ব্যস্ত সড়কগুলোতে দীর্ঘ সময় ধরে চলছে সংস্কার কাজ, অপরদিকে এ ওয়ার্ডের বেশির ভাগ রাস্তাই অপ্রশস্ত ও অপরিচ্ছন্ন। অপ্রশস্ত এই রাস্তায় অনেকে বসেছে অবৈধ দোকান নিয়ে যার দরুন প্রধান সড়কগুলোতে সৃষ্ট যানজটে, যাত্রী-পথচারীরা নাকাল হয়ে পড়েছেন। আর ফুটপাতগুলোতেও ব্যাহত হচ্ছে মানুষের স্বাভাবিক চলাচল। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হওয়ায় নির্বাচনি প্রার্থীদের প্রচারণায় গুরুত্ব পায় এ ওয়ার্ডটি। নির্বাচনের প্রচারণাকে সামনে রেখে ওয়ার্ডের সর্বত্রই বেড়েছে কিশোর গ্যাংসহ বিভিন্ন অপরাধীদের অবাধ বিচরণ। এতে বেড়েছে মাদকের বিস্তার ও ছিনতাই-রাহাজানি। ওয়ার্ডটিতে অসহনীয় মশার উপদ্রব বাড়লেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নেই নজরদারি। পাশাপাশি অধিকাংশ এলাকায় গ্যাস সংকট বর্তমানে প্রকট আকার ধারণ করেছে।
ওয়ার্ড পরিচিতি : ডিএনসিসির ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডটি রাজধানীর অভিজাত গুলশানের গাঁ ঘেঁষে থাকা ভাটারা থানার আওতাধীন। নূরেরচালা পশ্চিম, নূরেরচালা পূর্ব, খিলবাড়িরটেক পশ্চিম, খিলবাড়িরটেক পূর্ব, মাস্টার বাড়ি, বড়ইতলা বাজার, ছোলমাইদের (আংশিক) ও খালপাড় নিয়ে ওয়ার্ডটি গঠিত। ওয়ার্ডটি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অঞ্চল ৯ ও সংসদীয় এলাকা ঢাকা-১১ এর আওতাধীন। সরেজমিন দেখা গেছে, ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের ব্যস্ততম সড়কগুলোর বেশির ভাগ চলাচলের জন্য অনুপযোগী। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি শিশু বা বৃদ্ধদের জন্য রাস্তাগুলো অনেকটা মরণফাঁদের মতো। রাস্তা সংস্কার কাজ বন্ধ থাকায় কোথাও কোথাও মাটির উঁচু টিলা আবার কোথাও কোথাও ১০-১৫ ফিটের খাদ। এ রাস্তায় চলে নিজ গন্তব্যে পৌঁছানো অনেকটা যুদ্ধ জয়ের মতো। এছাড়া মূল সড়কের দুপাশ দখল করে গড়ে উঠেছে সারি সারি দোকান। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ সড়কেও অবৈধ অস্থায়ী দোকানপাটসহ ভ্যানে ভাসমান দোকান বসিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। মূল সড়কের দুপাশ হকারদের দখলে থাকায় তৈরি হওয়া দীর্ঘ যানজট পরবর্তীতে অভ্যন্তরীণ সড়ককে স্থবির করে তোলে।
স্থানীয় বাসিন্দা জাইদুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, আমাদের প্রতিদিন একটা যুদ্ধ করতে হয়। রাস্তা সংস্কার কাজ বন্ধ থাকায় কোথাও কোথাও মাটির উঁচু পাহাড় আবার কোথাও কোথাও গিরি খাদ। প্রতিদিন এ রাস্তায় ৮-১০ জন নারী, শিশু বা বৃদ্ধ রাস্তায় খোঁড়া গর্তে পরে আহত হচ্ছে, মনে হচ্ছে দেখার কেউ নেই। স্থানীয় ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন যুগান্তরকে বলেন, বর্তমানে ছিনতাই ও মাদকের ঘটনা এখানে নিয়মিত। সংসদ-সদস্য প্রার্থীরা তাদের বিভিন্ন প্রচারণার লোকজন দেখানোর জন্য স্থানীয় অনেক কিশোরদের ব্যবহার করে। যাদের বেশির ভাগ কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। এলাকাবাসীর অভিযোগ, গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী কাউন্সিলরদের অপসারণ করায় হঠাৎ ভেঙে পড়ে ওয়ার্ডের সেবা কার্যক্রম। পরে নির্বাহী অফিসারের অধীনে কাউন্সিলর সচিবদের দায়িত্ব দেওয়ার পর কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও পরিপূর্ণ সেবার আওতায় আসেনি নাগরিকদের সেবা। কাউন্সিলর না থাকায় নাগরিক সেবা কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। কাউন্সিলারদের বেশকিছু কাজ এখন সচিবরা করছেন। এদিকে ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডটিতে আইনশৃঙ্খলার অবনতির কারণে সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি, কিশোর গ্যাংসহ অপরাধী পথশিশুদের দৌরাত্ম্য ও মাদক বিক্রেতাদের নিয়ন্ত্রণহীন দৌরাত্ম্য বেড়েছে এলাকাটিতে। ওয়ার্ডটিতে গ্যাস ও ওয়াসার বিশুদ্ধ পানির চরম সংকটের পাশাপাশি মশার চরম উপদ্রব বেড়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-৯ এর নির্বাহী প্রকৌশলী যুগান্তরকে বলেন, রাস্তা সংস্কারের কাজ বন্ধ কেন, আমরা জানি না। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এই কাজের দায়িত্ব দিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ বিগ্রেডকে। এ বিষয়ে ২৪ বিগ্রেডের সংশ্লিষ্ট প্রজেক্টের দায়িত্বে থাকা মেজর সৌমিককের সাথে কয়েক দফা মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
