যশোরে ১৪৭ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলছে ভারপ্রাপ্ত দিয়ে
অ্যাডহক কমিটির ক্ষমতা না থাকায় নিয়োগ বন্ধ * ২০ স্কুলে মামলা সভাপতি-প্রধান শিক্ষকের দ্বন্দ্বে
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
যশোরের কেশবপুর উপজেলার বুড়িহাটি বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহজাহান আলী চার বছর ধরে সাময়িক বরখাস্ত রয়েছেন। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতির সঙ্গে নিয়োগ-বাণিজ্য নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। উচ্চ আদালতে মামলা করে তার স্বপদে ফেরার পথ রুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরির্তনের পর সভাপতিও পরিবর্তন হয়েছে। উচ্চ আদালতে চলমান মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় শাহজাহান আলী ফিরতে পারছেন না স্বপদে। স্বপদে ফিরতে না পেরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি।
শুধু শাহজাহান আলী নন, তার মতো অনেকেই সভাপতির সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে সাময়িক বরখাস্ত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। যশোর জেলার অন্তত ২০টি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় সভাপতি ও প্রতিষ্ঠানপ্রধানের দ্বন্দ্বে মামলা চলমান রয়েছে। এতে বিঘ্নিত হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশ। একই সঙ্গে ১৪৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানের পদ খালি রয়েছে। এক বছর ধরে অ্যাডহক কমিটি বিদ্যালয় পরিচালনা করায় নতুন প্রতিষ্ঠানপ্রধান নিয়োগ কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে। ফলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়েই চলছে এ প্রতিষ্ঠানগুলো।
জেলা শিক্ষা অফিসের তথ্যমতে, যশোর জেলার ২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা চলমান রয়েছে। এর মধ্যে অভয়নগর উপজেলার ১৩, ঝিকরগাছা এক, কেশবপুরে চার, সদরে এক ও শার্শায় একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
বুড়িহাটি বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (সাময়িক বরখাস্ত) শাহজাহান আলী বলেন, ২০১২ সালের ১ আগস্ট প্রধান শিক্ষক পদে যোগদান করি। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির তৎকালীন সভাপতি মোসলেম উদ্দিন ১৩ জন জনবল নিয়োগ দিয়ে ৬৯ লাখ টাকার ঘুস-বাণিজ্য করেন। এরপর ২০১৩ সালে মোসলেম উদ্দিন তার শ্যালক রফিকুল ইসলামকে সভাপতি করে অ্যাডহক কমিটি অনুমোদন করান। অ্যাডহক কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করে বেতন-ভাতা (এমপিও) বন্ধ করে দেন। আমি উচ্চ আদালতে মামলার রায় নিয়ে স্বপদে যোগ দিই। তৎকালীন এমপি শাহীন চাকলাদারের প্রভাবে ২০২১ সালের ১৩ অক্টোবর ফের আমাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে দায়িত্ব দিয়ে ফের পাঁচটি পদে নিয়োগ দিয়ে প্রায় কোটি টাকার ঘুস-বাণিজ্য করেন তৎকালীন সভাপতি মোসলেম উদ্দিন। তখন আমাকে স্থায়ী বরখাস্তের জন্য আপিল অ্যান্ড আর্বিটেশন বোর্ডে আবেদন করেন। শুনানি শেষে আপিল অ্যান্ড আর্বিটেশন বোর্ড আমার চাকরি ফিরিয়ে দেয়। সেখানে হেরে যাওয়ায় আমার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে মামলা করেন। সেই মামলা শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
বুড়িহাটি বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি মোসলেম উদ্দিন বলেন, শাহজাহান আলীর সব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
জেলা শিক্ষা অফিসের তথ্যমতে, যশোর জেলায় ১৪৭টি প্রতিষ্ঠানপ্রধানের পদ খালি রয়েছে। এর মধ্যে অভয়নগর উপজেলায় ২০টি, বাঘারপাড়ায় ১১টি, চৌগাছায় ১৫টি, ঝিকরগাছায় ১৭টি, কেশবপুরে ৩৬টি, মনিরামপুরে ২৬টি, সদরে ১৬টি ও শার্শায় ছয়টি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বছরের ৫ আগস্ট বিপ্লবের পর নিয়মিত কমিটি ভেঙে দিয়ে অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়। অ্যাডহক কমিটির নিয়োগের ক্ষমতা নেই। ফলে প্রতিষ্ঠানপ্রধান না থাকায় সহকারী প্রধান শিক্ষক কিংবা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে চলছে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম।
অভয়নগর উপজেলার আন্ধা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক কার্তিক চন্দ্র দাস বলেন, এক বছর ধরে প্রধান শিক্ষকের পদ খালি আছে। অ্যাডহক কমিটি নিয়োগ দিতে পারছে না। নিয়মিত কমিটি হলে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে। প্রধান শিক্ষকের শূন্যতায় প্রশাসনিক কাজ ও পাঠদানে প্রভাব পড়ছে।
অভয়নগরের ভৈরব আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এসএম হাবিবুর রহমান বলেন, ছয় বছর ধরে একাধিকবার বিজ্ঞপ্তি দিলেও যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থী না পাওয়ায় অধ্যক্ষ নিয়োগ হয়নি। জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা পালাক্রমে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন।
যশোর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মাহফুজুল ইসলাম বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মামলাসংক্রান্ত বিষয়ে আদালতের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তিনি আরও বলেন, জেলায় প্রায় দেড়শ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানের পদ খালি রয়েছে। এ পদে নিয়োগের ক্ষমতা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির হাতে। অ্যাডহক কমিটির নিয়োগের ক্ষমতা নেই। ডিসেম্বর নাগাদ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত কমিটি হবে। আশা করছি নিয়মিত কমিটি হলে প্রতিষ্ঠানপ্রধানের শূন্যপদ পূরণ করা সম্ভব হবে।

