পাবনায় স্কুল মাঠে আ.লীগ কর্মীর তিনতলা বাড়ি!
পাবনা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
সরকারি জায়গা, হাটবাজার দখল, বাস-টেম্পু স্ট্যান্ড দখলের কথা শোনা গেলেও স্কুল আঙিনা (স্কুলের দুটি ঘরের মাঝামাঝি জায়গা) দখল করে বাড়ি নির্মাণের কথা শোনা যায়নি। কিন্তু এমনটাই ঘটেছে পাবনা সদর উপজেলার চরতারাপুর ইউনিয়নে। সেখানকার নতুন বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের আঙিনায় ৩ তলা বাড়ি করে দখল প্রতিযোগিতার সব রেকর্ড ভেঙেছেন আব্দুল বাতেন নামের স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ কর্মী। তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর চাচাতো ভাই। এ কারণে কর্মী হয়েও প্রভাব খাটান একজন নেতার মতো।
নতুন বাজার উচ্চ বিদ্যালয়টি ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে সুনামের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করে আসছেন শিক্ষকরা। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। ২০১০ সালে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ-যুবলীগের অফিস করার কথা বলে স্কুল আঙিনার মাঠে টিনের ঘর তোলেন আব্দুল বাতেন। এরপর ইট বালু খোয়া এনে বিল্ডিংয়ের কাজ শুরু করেন। এলাকার লোকজনসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এর বিরোধিতা করেন। স্কুল কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ দেয়। কিন্তু দলীয় প্রভাবের কারণে তা হালে পানি পায়নি। বিরোধিতা করায় এলাকার লোকজনকে ভয়ভীতি দেখান বাতেন। শিক্ষকদের চাকরিচ্যুতসহ হত্যার হুমকি দেন। এভাবেই তিনতলা বাড়ি নির্মাণ করেন বাতেন। স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, শহীদ মিনার ঘেঁষে স্কুল মাঠে তিনতলা একটি বাড়ি। এর পূর্বদিকে স্কুলের একটি টিনের ঘর, পশ্চিমে স্কুলের আরেকটি টিনের ঘর। বাতেনের বাড়িতে প্রবেশের পথও স্কুলের জায়গা দিয়ে। এজন্য স্কুলের গেটও করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। ?
এলাকাবাসীর অভিযোগ, বাড়ি নির্মাণের সময় তারা বাধা দিয়েছিল। এ কারণে তাদের হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। দলীয় প্রভাব খাটিয়ে বাতেন এসব করেছে। এছাড়া তিনি এলাকায় নানা অপকর্ম করেছেন। ৫ আগস্টের পর পালিয়ে গেছেন তিনি।
তারা জানান, এই বাড়িটির জন্য স্কুলের স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অনেক ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বাড়িটি দ্রুত অপসারণ করে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার পরিবেশ ফিরিয়ে দেওয়া দরকার।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আব্দুল বাতেন ফোনে যুগান্তরকে বলেন, ‘স্কুলের জমিদাতার কাছ থেকে আমি ২০২২ সালের দিকে ৪ শতাংশের একটু কম জমি কিনেছিলাম। সেখানে বাড়ি করেছি।’
তবে স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, ‘২০০২ সালে স্কুল প্রতিষ্ঠার আগে ৯ জন মিলে এই স্কুলের জমি দান করেন। ২০১৩ সালের দিকে বাতেন বাড়িটি নির্মাণ করেন। এরপর ২০২২ সালে ভুয়া দলিল করে স্কুল কর্তৃপক্ষকে হয়রানি করছেন।’
এ ব্যাপারে পাবনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরে কোনো ব্যক্তিগত বাড়ি হতে পারে না। যেখানে ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করে, সেখানে কারও থাকার জায়গা হবে কেন? বিষয়টি তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
