স্বাদ-ঘ্রাণ-রং-আকারে বিদেশি ফলের মতোই
দিনাজপুরে আনার চাষে সফল দুই উদ্যোক্তা
একরাম তালুকদার, দিনাজপুর
প্রকাশ: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
দিনাজপুরের মাটিতে বিদেশি ফল আনার চাষ করে সফল হয়েছেন দুই উদ্যোক্তা। দেশের সর্ববৃহৎ এ আনারের (বেদানা) বাগান থেকে ফল সংগ্রহ করে বাজারজাত শুরু করেছেন তারা। দাম ভালো পাওয়ায় উদ্যোক্তারা আশা করছেন, এ বছর প্রথমবারে অন্তত ৩০ লাখ টাকার আনার বিক্রি হবে। গাছের বয়স বাড়ায় আগামী বছর অন্তত ৬০ লাখ টাকার আনার বিক্রি করবেন বলে আশা করছেন তারা।
প্রতি বছর শত শত টন আনার নেপাল, ভারত, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বেশকিছু দেশ থেকে দেশে আমদানি করা হয়। তবে এখন বাংলাদেশেই চাষ হচ্ছে আমদানিনির্ভর এ ফল।
দিনাজপুর সদর উপজেলার রাণীগঞ্জ বেলবাড়ী এলাকায় পৌঁছালে মূল সড়কের পাশেই দেখা মিলবে ‘গ্রিন লিফ এগ্রো ফার্ম’ নামের বিশাল একটি আনার বাগানের। আনার চাষের ওপর ভারতের মুম্বাইয়ের একটি কৃষি খামারের অধীনে প্রশিক্ষণ নিয়ে দিনাজপুরে চার বছর আগে আনার বাগান করেন কৃষি উদ্যোক্তা মোহাম্মদ নাদিম ও তার বন্ধু মনিরুজ্জামান। মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে না হলেও দুই বন্ধু ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় গড়ে তুলেছেন বিশাল এই বাগানটি। সাড়ে তিন একর জমির বাগানে আনারের গাছ রয়েছে ১১০০টি। এই আনার স্বাদ, ঘ্রাণ, রং ও আকার সবদিক থেকেই বিদেশি আনারের চেয়ে কোনো অংশে কম নয় বলে দাবি বাগান মালিকের। চারা রোপণের চার বছর পর এবার ফল এসেছে গাছে। প্রথম বছর প্রচুর পরিমাণে আনার ধরেছে। একেকটি গাছে ২০ থেকে ৬০টি ফল ধরেছে।
এদিকে ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে আনার সংগ্রহ শুরু করেছেন উদ্যোক্তারা। পাশাপাশি বাজারজাতও শুরু করেছেন। আকার, রং, ঘ্রাণ ও স্বাদ ভালো হওয়ায় বাগান থেকেই আনার সংগ্রহ করেছেন ব্যবসায়ীরা।
উদ্যোক্তা মোহাম্মদ নাদিম জানান, বাগান থেকে পাইকারি দরে বড় আকারের আনার বিক্রি করছেন প্রতিকেজি ৩০০ টাকা। তুলনামূলক ছোট আকারের আনার বিক্রি করছেন ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি। গড়ে প্রতিটি আনারের দাম পড়ছে সর্বনিম্ন ৬০ টাকা। এবার তাদের বাগানে ফল এসেছে ৫০ হাজার। এতে এ বছর কমপক্ষে ৩০ লাখ টাকার আনার বিক্রি করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। মোহাম্মদ নাদিম বলেন, গাছের বয়স হচ্ছে এবং পরিধিও বাড়ছে। তাছাড়া কিছু কিছু ত্রুটিও তারা চিহ্নিত করেছেন। এসব ত্রুটি দূর করে এবং অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আগামী বছর দ্বিগুণ ফল পাবেন তারা। আগামী বছর ৬০ লক্ষাধিক টাকার আনার বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করেন তিনি। কোনো রোগবালাই দেখা না দিলে একেকটি গাছ কমপক্ষে ৩০ বছর পর্যন্ত ফল দেয়। যত দিন যাবে, এসব গাছ থেকে ততই বেশি ফল পাওয়া যাবে। বাগান মালিক ও কৃষি কর্মকর্তারা জানান, দেশে এত বড় আনারের বাগান আর নেই।
দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আফজাল হোসেন বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে দিনাজপুরের মাটিতে আনারের বাগান গড়ে উঠেছে। এই বিদেশি ফল চাষে কৃষি বিভাগ থেকে সবরকম পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, দিনাজপুরের মাটিতে আনার চাষের বেশ সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
