Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

৭৮ শতাংশ ইঞ্জিন মেয়াদোত্তীর্ণ

অগ্নিকাণ্ড-লাইনচ্যুতি বন্ধে রেল বরাবরই ফেল

৯৫ ভাগ ট্রেনে আগুন নেভানোর কোনো ব্যবস্থাই নেই

শিপন হাবীব

শিপন হাবীব

প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

অগ্নিকাণ্ড-লাইনচ্যুতি বন্ধে রেল বরাবরই ফেল

রেলে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে কমতি নেই। নতুন প্রযুক্তিও আসে। কিন্তু, ট্রেন লাইনচ্যুত ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বন্ধ হয় না। রেলের কোনো স্টেশন বা সেকশনে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নেই। কয়েকটি ট্রেনে ফায়ার এক্সটিংগুইশার থাকলেও প্রায় ৯৫ ভাগ ট্রেনে তাও নেই। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার সঙ্গে ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার যোগসূত্র রয়েছে। লাইনচ্যুতের ঘটনায় প্রায়ই ট্রেনের ইঞ্জিন, পাওয়ারকার ও কোচে আগুন ধরে যায়। বছরে গড়ে ১১৫টি লাইনচ্যুতের ঘটনা ঘটে। এছাড়া প্রতিদিন তিন থেকে চারটি ইঞ্জিন চলন্ত অবস্থায় বিকল হয়ে যায়। এ অবস্থায় ট্রেনযাত্রা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, চলমান ইঞ্জিনের মধ্যে প্রায় ৭৮ শতাংশ মেয়াদোত্তীর্ণ। আগস্টে গাজীপুর-শ্রীপুর সেকশনে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে চলন্ত অবস্থায় আগুন ধরে যায়। এতে পুড়ে যায় বেশ কয়েকটি বগি। ২০২৪ সালের ৫ জানুয়ারি কমলাপুর স্টেশনসংলগ্ন গোপীবাগ আউটারে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিস আসার আগেই চারটি কামরা পুড়ে যায়।

রেলওয়ে পরিকল্পনা, অপারেশন ও প্রকৌশল দপ্তর সূত্রে জানা যায়, রেলে আওয়ামী শাসনের প্রায় ১৫ বছরে এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। কিন্তু জরাজীর্ণ রেলপথ ও রেলওয়ে ব্রিজ মেরামত করা হয়নি। এখনো কোনো কোনো সেকশনে সর্বোচ্চ পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ গতিতে ট্রেন চলছে।

রেলে বছরে শুধু লাইচ্যুতির দুর্ঘটনা ৮৩ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট ১২৩টি ট্রেন দুর্ঘটনার মধ্যে ১০৩টিই লাইচ্যুতি। ২০২১-২২ অর্থবছরে ১১৩টি দুর্ঘটনার মধ্যে ৯২টি লাইচ্যুতি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৮৮টি দুর্ঘটনার মধ্যে ৭৫টি লাইনচ্যুতি। রেলপথে মাইলের পর মাইল যথাযথ পাথর নেই। লাইন থেকে মাটি সরে গেছে। কোথাও আবার হুক, নাট-বল্টু নেই।

রেলওয়ে পরিকল্পনা দপ্তর সূত্র বলছে, রেলপথের মান নষ্ট হওয়া, লাইনে পর্যাপ্ত পাথর না থাকা, মাটি সরে যাওয়ার মতো ঘটনায় রেলপথ জরাজীর্ণ অবস্থায় আছে। নিয়ম অনুযায়ী প্রতি বছর পুরো রেলপথে মোট পাথরের ৫ থেকে ৭ শতাংশ দিতে হবে, যা বছরের পর বছরও বাস্তবায়ন হয়নি। রেলপথের আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে যাওয়ায় ২০২৪ সালে ২৫৬ বার চলন্ত অবস্থায় ইঞ্জিন বিকল হয়। এছাড়া ২০২৩ সালে ২৭৩ বার, ২০২২ সালে ২৩৩ বার ইঞ্জিন বিকল হয়।

রেলওয়ে যান্ত্রিক দপ্তর সূত্রে জানা যায়, রেলে ১৯৫৩ সালে কেনা বেশ কিছু ইঞ্জিন এখনো চলাচল করছে। অথচ ২০২১-২২ সালে কেনা ৩০ ইঞ্জিনের মধ্যে বেশির ভাগ বিকল হয়ে গেছে। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে এক হাজার ১৪৮ কোটি টাকায় এসব ইঞ্জিন কেনা হয়েছিল। এতে ভয়াবহ দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

ইঞ্জিন কেনায় সম্পৃক্ত সাবেক রেলওয়ে মহাপরিচালক সামছুজ্জামানসহ তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকে মামলা হয়েছে। বর্তমানে পালাতক রয়েছেন ওই তিন কর্মকর্তা। রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) নাজমুল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, লাইনচ্যুত বা অন্য দুর্ঘটনার কারণে ট্রেনের যাত্রা বাতিল করতে হয়। এতে আর্থিক লোকসানের সঙ্গে শিডিউল বিপর্যয় হচ্ছে। লাইন সুরক্ষা থাকলে এমন দুর্ঘটনা অনেকাংশেই কমে আসবে। তাছাড়া রেলে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা জোরদার করা খুবই জরুরি। আমাদের নিজস্ব কোনো ফায়ার স্টেশন নেই। বরাদ্দের অভাবে স্টেশন ও ট্রেনে যথাযথ অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নিশ্চত করা যাচ্ছে না। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ফরিদ উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, লাইন রক্ষণাবেক্ষণে আমরা সবসময় কাজ করছি। তবে যথাযথ বরাদ্দ পেলে নিশ্চয় রক্ষণাবেক্ষণের কাজগুলো আরও জোরালো হবে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও গণপরিবহণ বিশেষজ্ঞ ড. এম সামছুল হক যুগান্তরকে বলেন, রেলে যাত্রীরা কেন ঝুঁকি নিয়ে চলবে। সবার আগে রেলপথের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটি ট্রেনেই অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি। এমনটা না করে সংশ্লিষ্টরা নতুন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের দিকে দৌড়াচ্ছে। ভুল পরিকল্পনা ও দুর্নীতির কারণে রেল বিনিয়োগের সুফল পাচ্ছে না। রেলওয়ে মহাপরিচালক প্রকৌশলী মো. আফজাল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, রেলপথ যথাযথ মেরামতে বরাদ্দের প্রয়োজন। অনেক সেকশনেই গতি কমিয়ে ট্রেন চালাতে হচ্ছে। রেলে নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হলেও বরাদ্দ প্রয়োজন। যাত্রীসেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চত করতে আমরা কাজ করছি।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম